করোনায় ধূমপায়ীদের দ্বিগুণ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে গবেষণা যা বলছে
প্রকাশিত : ১০:৫২, ৩১ মে ২০২০ | আপডেট: ১১:০২, ৩১ মে ২০২০
আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। প্রতি বছর ৩১ মে সারা বিশ্বে এ দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘তামাক কোম্পানির কূটচাল রুখে দাও, তামাক ও নিকোটিন থেকে তরুণদের বাঁচাও’।
আজকের এই তামাকমুক্ত দিবসে ধূমপানমুক্ত হোক পরিবেশ। কারণ যারা ধূমপান করে তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া যারা ই-সিগারেট ব্যবহার করেন তারাও এই ঝুঁকির আওতাধীন। ধূমপায়ীদের কাছাকাছি যারা থাকেন তাদেরও এ রকম বিপদ রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বার বার অনুরোধ করছেন, এই পরিস্থিতিতে ধূমপান ছেড়ে দিতে। একই আবেদন জানিয়েছেন ‘ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল’।
চিনে কোভিড আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে ১০৯৯ জনের উপর সমীক্ষা করেছে ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’। সে সমীক্ষায় দেখা যায়, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীরা প্রায় তিনগুণ বেশি জটিল অবস্থা নিয়ে নিবির পরিচর্যা কেন্দ্র বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে হয়েছে। তারপরও তাদের বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয়েছে। ৭৮ জন জটিল কোভিড রোগীদের নিয়ে সমীক্ষা করে দেখা গেছে এদের অধিকাংশই ধূমপায়ী।
ইতালির স্বাস্থ্য গবেষণা এজেন্সি জানিয়েছে, কোভিড ১৯-এ মৃতদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই পুরুষ। এবং তাঁদের অধিকাংশই ধূমপায়ী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলে অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীর অবস্থা জটিল হতে পারে প্রায় ১৪ গুণ।
বিপদ ঠেকাতে ‘টোকিও মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘জাপান সোসাইটি ফর টোব্যাকো কন্ট্রোল’ এগিয়ে এসেছেন বেশ কয়েক কদম। টোব্যাকো কন্ট্রোলের পক্ষ থেকে সমস্ত অফিস ও বহুতল আবাসনের কর্তৃপক্ষের কাছে ধূমপানের জন্য সংরক্ষিত কক্ষ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। কারণ এ সব জায়গা থেকেই এক যোগে বেশ কিছু মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, যাকে বলে ‘ক্লাস্টার ইনফেকশন’।
এছাড়া সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান ফ্রান্সিসকোর সেন্টার ফর টোবাকো কন্ট্রোল রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশনের গবেষকরা নতুন গবেষণাটি করেছেন। সেখানকার মেডিসিনের অধ্যাপক স্ট্যান্টন গ্লান্টজ ও তার সহকর্মীদের করা গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল নিকোটিন অ্যান্ড টোবাকো রিসার্চে।
মেটা-অ্যানালাইসিস পদ্ধতিতে নতুন গবেষণাটি করা হয়েছে। অর্থাৎ আগের একাধিকা বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে নতুন করে পর্যালোচনা করা হয়েছে। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ১৯টি পিয়ার রিভ্যুড পেপারসকে নতুন গবেষণায় পর্যালোচনা করা হয়েছে।
তাতে দেখা গেছে, ৩০ শতাংশ ধূমপায়ী ব্যক্তি গুরুতরভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বিপরীতে অধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে এ হার ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ধূমপানের ফলে ফুসফুস সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি এমনিতেই বেড়ে যায়। ধূমপানের ফলে শ্বাসতন্ত্রের ওপরের অংশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে অধূমপায়ীদের চেয়ে ধূমপায়ীদের ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যদিও এই বিষয়গুলোর সঙ্গে নতুন করোনাভাইরাসের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কেমন হয় তা আরও বিস্তারিত গবেষণার দাবি রাখে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক গ্লান্টজ বলেন, উচ্চ মাত্রায় নতুন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সঙ্গে ধূমপানের এক ধরনের সম্পর্ক রয়েছে।
এ জন্য গবেষকরা প্রস্তাব করেছেন, করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে মুক্তি পেতে হলে তামাকজাত সিগারেট এবং ই-সিগারেটেও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। সেই সঙ্গে আরও তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে যে, ধূমপায়ীরা নতুন এই ভাইরাসটির কারণে ঠিক কতখানি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এমবি//