ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ভিটামিন ও খনিজ রুখে দিবে করোনা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:২৩, ৪ জুন ২০২০

করোনায় নাস্তানাবুদ সারা বিশ্ব। ছয় মাস অতিক্রম হওয়া এই অদৃশ্য রোগে মৃত্যুর সারিতে প্রায় চার লাখ মানুষ। আক্রান্ত প্রায় ৬৬ লাখ। অথচ এখনও এই মারাত্মক রোগের নির্দিষ্ট কার্যকরী ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ তৈরি হয়নি। ফলে এ মুহূর্তে সংক্রমণ কমাতে দ্রুত, কার্যকর, সহজসাধ্য ও নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা উদ্ভাবন অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। চিকিৎসক, বিজ্ঞানী এবং পুষ্টিবিদরাও বিকল্প খুঁজছেন। তারা অনুসন্ধান করছেন, কী কী উপায়ে এই সংক্রমণ থেকে মানবদেহকে রক্ষা করা যায়।

আমরা জানি, সাধারণত দেহের চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করে গড়ে তোলে। যা সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। যেখানে চিকিৎসা নেই, সেখানে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাটির প্রধান কাজ হলো দেহকে বিপজ্জনক অণুজীব সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। 

কোভিড-১৯ রোগীর সাম্প্রতিক কেসগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সমস্যা (এআরডিএস) মৃত্যুর মূল কারণ। অন্যদিকে অন্তঃকোষীয় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস (প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন) হলো এআরডিএসের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এটা কোষকে ধ্বংস করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যঘাত ঘটায়। ফলে রোগি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। 

যেহেতু কার্যকরী ভ্যাকসিন এবং অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ প্রস্তুতের জন্য দীর্ঘ সময় প্রয়োজন তাই এ সময়ে ভিটামিন সি এবং ডি এর ব্যবহার অন্যতম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কোভিড-১৯ এর ফলে যে এআরডিএস হয় তা হ্রাস করা এবং রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে এই ভিটামিন সি ও ডি।

করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ সংক্রমণ মহামারি শুরু হওয়ার গোড়া থেকেই নানা ভিটামিন ও খনিজ গ্রহণের বিষয়টির দিকে বিশ্বজুড়েই আলোচনা হচ্ছে। ছোট-বড় প্রায় সবাই ভিটামিন মিনারেল সাপ্লিমেন্ট খেতে শুরু করেছেন এ সময়। এটা আসলে কতখানি উপকারী, আর এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্য–উপাত্তই বা কী তা জেনে রাখা ভালো।

শুরু থেকেই বলা হচ্ছে যে- রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি যাঁদের ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁরা এ রোগের বিশেষ ঝুঁকিতে থাকবেন। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার একটা অন্যতম কারণ হলো অপুষ্টি আর ভিটামিন, খনিজের অভাব। এর আগে নানা গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের ঘাটতি নানা ধরনের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যেমন, যেসব শিশুর ভিটামিন–এ ঘাটতি আছে, তাদের হাম, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেশি হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা ও হেপাটাইটিসের সঙ্গে ভিটামিন ডির সম্পর্ক এরই মধ্যে প্রমাণিত।

কোভিড-১৯–এর সঙ্গে ভিটামিন ডি-র সম্পর্ক নিয়ে দুনিয়াজুড়ে গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, শীতপ্রধান দেশে, বিশেষ করে যে মাসগুলোতে দিনের পরিধি আর সূর্যের আলো সবচেয়ে কম ছিল, তখনই এই ভাইরাস সবচেয়ে বেশি মানুষকে আক্রমণ করেছে। 

ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞরা দেখিয়েছেন যে যাঁদের ভিটামিন ডি স্বল্পতা আছে, তাঁদের মধ্যে একটি বড় অংশ (১৭ শতাংশ) কোভিড-১৯–জনিত জটিলতা বা মৃত্যুর শিকার হয়েছে। সম্প্রতি চীনের একটি গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানী লি ঝ্যাং ও ইউনহুই লুই পরামর্শ দেন যে শুধু ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি নয়, এর সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগী বা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংক, সেলেনিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি ইত্যাদিরও দরকার হবে।

লকডাউনের সময়ে ঘরে আবদ্ধ থাকার কারণে অনেকেই সূর্যালোক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ফলে এই মুহূর্তে অনেকেই ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারও যদি ভিটামিন ডি এর মাত্রা পরীক্ষা না করাও থাকে, তবু দৈনিক চাহিদা পূরণে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। তবে একই সঙ্গে খাদ্য গ্রহণ ও সূর্যের আলো গ্রহণের দিকেও মনোযোগী হতে হবে।

সঠিক পুষ্টি, আমিষ, ভিটামিন ও খনিজের সুষম সমন্বয় আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই এ সময় পুষ্টিকর সুষম খাদ্যাভ্যাসের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। 

ভিটামিন সি
একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দৈনিক ৯০ মিলিগ্রাম, আর একজন নারীর দৈনিক ৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার হয়। কিন্তু ধূমপায়ীদের লাগবে আরও বাড়তি ৩৫ মিলিগ্রাম। অন্তঃসত্ত্বা নারীর দৈনিক ৮৫ মিলিগ্রাম আর স্তন্যদানকারী মায়ের দৈনিক ১২০ মিলিগ্রাম।

ফলমূল ও শাকসবজি থেকে যথেষ্ট ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এ সময় টক ফল যেমন লেবু, কমলালেবু, মালটা, জাম্বুরা, টমেটো, আমড়া ইত্যাদি ফলের পাশে সবুজ শাকসবজি যেমন শাক, ব্রকলি, ক্যাপসিকাম, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি খেতে হবে। একটা কমলা বা লেবুজাতীয় ফলে ৭০ থেকে ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাবেন। আমাদের নৈমিত্তিক খাবারে প্রচুর ভিটামিন সি আছে, তাই সবার এই সাপ্লিমেন্ট দরকার হবে না। কিন্তু ধূমপায়ী, বয়স্ক ব্যক্তি, যেসব শিশু ব্রেস্ট ফিডিং না করে তোলা দুধ গ্রহণ করে, যাদের হজম বা বিপাক সমস্যা আছে, তাদের সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে।

ভিটামিন সি কেনাে গ্রহণ করবেন?
ভিটামিন সি পানিতে দ্রবণীয়। এটা শরীরের সহজাত এবং অভিযোজক (adaptive) বিভিন্ন কোষীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে মজবুত করে। ভিটামিন সি ক্ষতিকর জীবাণুগুলির বিরুদ্ধে এপিথিলিয়াল প্রতিরোধব্যবস্থাকে দৃঢ় করে। এ ছাড়া ত্বকে যে অক্সিড্যান্ট স্ক্যাভেনজিং প্রক্রিয়া আছে, তাকেও সাহায্য করে ভিটামিন সি। এর ফলে সম্ভাব্য জারণ প্রক্রিয়ার চাপ থেকে কোষ কিংবা টিস্যু রক্ষা পায়। ভিটামিন সি ফাগোসাইটিক কোষগুলিতে জমে থাকা নিউট্রোফিলস এবং কেমোট্যাক্সিস, ফাগোসাইটোসিস, প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন প্রজাতির উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। এমনকি অণুজীবের ধ্বংস হারও বাড়িয়ে দেয়। ম্যাক্রোফেজ দ্বারা সংক্রমণের স্থানগুলি থেকে অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত কোষ এবং ব্যবহৃত নিউট্রোফিলগুলিকে সরিয়ে ফেলে। ফলে নেক্রোসিস/NETosis এবং সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুর পরিমাণ কমে যায়।

সম্প্রতি আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নাল -এ একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এআরডিএস-এ আক্রান্ত ১৬৭ জন রোগীর ওপর করা এক গবেষণার বিশ্লেষণ করা হয়েছে সেই প্রবন্ধে। ওই গবেষণায় রেগিদের দিনপ্রতি ১৫ গ্রাম ইন্ট্রাভেনাস (আইভ) ভিটামিন সি দেওয়া হয়েছে পর পর চারদিন। ফলে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত চীনের ৫০ জন রোগীর ওপর করা আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই গবেষণায় দেখা গেছে, একটি উচ্চমাত্রা (ডোজ) আইভি ভিটামিন সি সফলভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে অক্সিজেনেশনের হার। সকল রোগী শেষ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে।

কোরিয়ান আর্মি ট্রেনিং সেন্টারে ১৪৪৪ জন ব্যক্তিকে নিয়ে করা হয়েছে আরেকটি গবেষণা। তাতে দেখা গেছে, ওরাল ভিটামিন সি (৬ গ্রাম/প্রতিদিন) ভাইরাল সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে সক্ষম। এই গবেষণার রিপোর্ট গত মার্চে বিএমজে মিলিটারি হেলথ জার্নাল-এ প্রকাশিত হয়। প্রকৃতপক্ষে, উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি বেশ কয়েক দশক ধরে চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাম্প্রতিক এনআইএইচ বিশেষজ্ঞ প্যানেলের রিপোর্ট পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে যে, উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি (দেহের প্রতিকেজি ওজনের জন্য ১.৫ গ্রাম) মানব দেহের জন্য নিরাপদ।

এখন দেখা যাক, কীভাবে ভিটামিন সি কোভিড-১৯ কারণে তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার সমাধানে আণবিক লেভেলে কাজ করে। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, কোলাজেন সিন্থেসিস এবং জিন নিয়ন্ত্রক মনো অক্সিজেনেস ও ডাই-অক্সিজেনেস এনজাইমগুলির কোফ্যাক্টর অর্থাৎ সহযোগী হিসেবে কাজ করে। এটা ফুসফুসের এয়ার স্যাকের এপিথিলিয়াল প্রতিরক্ষাব্যবস্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণেও সহায়তা করে। এছাড়া সিএফটিআর, একোয়াপুরিন-৫, ENaC, এবং Na+/K+ ATPase মতো প্রোটিন চ্যানেলগুলিকে বৃদ্ধি করে। ফলে অ্যালভিওলার তরল নিঃসরণ কমে যায়। এছাড়াও ফাগোসাইটিক কোষগুলিতে জমে থাকা ভিটামিন সি, কেমোট্যাক্সিস, ফাগোসাইটোসিস এবং শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষতিকারক অণুজীব ধ্বংসের প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করে।

ভিটামিন ডি
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক জোআন ম্যানসন পরামর্শ দিয়েছেন যে- স্বাভাবিক সময়ে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৬০০ থেকে ৮০০ ইউনিট ভিটামিন ডি দরকার হয়। কিন্তু কোভিড মহামারির এই সময়ে এর বাইরে দৈনিক ১০০০ থেকে ২০০০ ইউনিট সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত। সূর্যের আলোতে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, তাই বেলা ১১টা থেকে ৩টার মধ্যে অন্তত ৩০-৪০ মিনিট শরীরে রোদ লাগানো উচিত। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম, বাদাম, ফর্টিফাইড দুধ বা দইয়ে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।

ভিটামিন ডি কেনাে গ্রহণ করবেন?
ভিটামিন ডি এর দুটো ফর্ম আছে- ডি২ এবং ডি৩। ভিটামিন ডি৩ সবচেয়ে কার্যকরী। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কোষগুলিতে ভিটামিন ডি’র রিসেপ্টর আছে। সেই রিসেপ্টরের সঙ্গে বন্ধনের তৈরি করে নিউক্লিয়ার মেটারিয়ালের সাথে যুক্ত হতে পারে ভিটামিন ডি ৩। এটি যেমন আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে, তেমনি দাঁত ও হাড়ের গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি বেশ কিছু রোগের প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ভিটামিন ডি। তবে এখানেই শেষ নয়, ভিটামিন ডি’র আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে।

বহু গবেষণায় দেখা গেছে, নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা (সার্স এবং মার্সজনিত) প্রতিরোধে ভিটামিন ডি’র মেগাডোজ কার্যকরী। এমডিপিআই প্রকাশিত নিউট্রিয়েন্টস জার্নালের ২ এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত একটি রিভিউ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তাতে গবেষকরা জানান, ভিটামিন ডি বিভিন্নভাবে সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। বিশেষ প্রক্রিয়ায় ক্যাথেলিসিডিন এবং ডিফেনসিন নামে দুটি প্রোটিন তৈরি হয়। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি যেমন কমায়, তেমনি অতিরিক্ত সাইটোকাইনসের মাত্রা কমিয়ে ফুসফুসের ক্ষত সারাতে পারে। ফলে নিউমোনিয়া সেরে যায়।

সবাই জানে, মানব দেহে ভিটামিন ডি-এর পরিমাণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে, অন্যদিকে বাড়তে থাকে ওষুধ ব্যবহারের মাত্রা। জার্মানির একাডেমি অফ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট অ্যান্ড মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা আরেকটি গবেষণা চালিয়েছেন। ওষুধের কিছু গ্রুপ আছে, যেমন, অ্যান্টিপাইলেপটিক্স, অ্যান্টিনোপ্লাস্টিকস, অ্যান্টিবায়োটিকস, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরিএজেন্টস, অ্যান্টিহাইপারটেন্সিভস, অ্যান্টিরোট্রোভাইরালস এবং এন্ডোক্রাইন ইত্যাদি। এগুলো মানবদেহের প্রেগনানে-এক্স নামে নিউক্লিয়ার রিসেপ্টরকে সক্রিয় করে বলে জানিয়েছেন ওই গবেষকরা। ফলে ফলে বয়স্ক ব্যক্তির রক্তের সিরাম ২৫-হাইড্রোক্সি ভিটামিন ডি’র ঘনত্ব হ্রাস পায়।

সাম্প্রতিক COVID-19 কেস স্টাডিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিটামিন ডি’র ঘাটতি তীব্র শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দেয়। তাই যাদের শরীরে ভিটামিন ডি’র ঘনত্ব কম, অর্থাৎ যাদের বয়স বেশি, করোনায় মৃত্যুর ঝুকি তাঁদেরই সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ২৫- হাইড্রোক্সি ভিটামিন ডি’র ঘনত্ব কম হলে।

এখন দেখা যাক, সরাসরি কিভাবে ভিটামিন ডি কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে। এর জন্য বিশেষ এক পদ্ধতি আছে। এতে ইনফেক্টেড ম্যাক্রোফাজ ১, ২৫ ডাই হাইড্রোক্সি ভিটামিন ডি তৈরি হয়। এছাড়া ক্যাথেলিসিডিন এবং ডিফেনসিনকে নামের দুটো প্রোটিন তৈরি হয়। এই প্রোটিন দুটি ভাইরাসের এনভেলাপকে দ্রবীভূত করতে পারে। ফলে ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি প্রক্রিয়ার হার কমে যায়। এছাড়া ফুসফুসের আস্তরণের জন্য ক্ষতিকর সাইটোকাইনের ঘনত্বও কমাতে পারে।

২০১৭ সালে দ্য লন্ডন স্কুল অফ মেডিসিন অ্যান্ড ডেন্টিস্টির একদল বিজ্ঞানীরা একটা গবেষণা চালান। তাঁরা দেখিয়েছেন, ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাসের কারণে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগা ১৯ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি প্রতিরক্ষারমূলক ভূমিকা পালন করে। তাঁদের ওই প্রতিবেদনটি বিএমজে জার্নালে প্রকাশিত হয়।

এছাড়াও একদল কোরিয়ান বিজ্ঞানী দেখিয়েছেন, ভিটামিন ডি পরিপূরক অ্যান্টি অক্সিডেশন সম্পর্কিত অনেক জিন যেমন গ্লুটাথায়ন রিডাক্টেজ এবং গ্লুটামেট-সিস্টাইন লাইগেজ মডিফায়ার সাব-ইউনিটের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। গ্লুটাথায়নের উৎপাদন বাড়লে কোষের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। অ্যাসকরবিক অ্যাসিড অর্থাৎ ভিটামিন সি এর ব্যবহার বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর প্রাক্তন পরিচালক চিকিৎসক টম ফ্রিডেন গত ২৩ শে মার্চ কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় ভিটামিন ডি ব্যবহার করার প্রস্তাব করেন। কিছুদিন আগে সান ফ্রান্সিসকো সানলাইট, পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক  উইলিয়াম গ্রান্টের কথাতেও একই সুর ছিল। তিনি ইনফ্লুয়েঞ্জা অথবা কেভিড-১৯-এর ঝুঁকিতে ব্যক্তিদের দ্রুত ২৫-হাইড্রোক্সিভিটামিন ডি-এর ঘনত্ব বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। ঠিক করে দিয়েছেন এর মাত্রাও। কয়েক সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন ১০,০০০ আইইউ ভিটামিন-ডি৩ গ্রহণ করতে হবে।

জিংক
জিংক সংক্রমণ প্রতিরোধে আর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। চিকিৎসকেরা অনেক আগে থেকেই ডায়রিয়া বা নিউমোনিয়ার সময় শিশুদের জিংক সাপ্লিমেন্ট দিয়ে আসছেন। কোভিড-১৯ মহামারির সময় জিংকের প্রতি আগ্রহ আরও বেড়েছে। মাংস, বীজজাতীয় খাবার, বাদাম, গোটা শস্যে আছে জিংক। মহামারির সময় সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যাবে, কিন্তু তা যেন দৈনিক ৪০ মিলিগ্রামের (শিশুদের জন্য ৪ মিলিগ্রাম) বেশি না হয়।

যেহেতু কার্যকরী ভ্যাকসিন এবং অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ প্রস্তুতের জন্য দীর্ঘ সময় প্রয়োজন, ওপরে প্রস্তাবিত ডোজে ভিটামিন সি এবং ডি এর ব্যবহার কোভিড-১৯ এর ফলে যে এআরডিএস হয় তা হ্রাস করা এবং রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে।

বর্তমন সময়ে দেশে ফলের মৌসুম অর্থাৎ মধু মাস চলছে। বিভিন্ন ধরণের দেশি ফল ভিটামিন সি এবং ডি এর অভাব পূরণ করতে সক্ষম। তাই বেশি বেশি এসব ফল খেতে পারেন।

তবে এটিও মনে রাখবেন, কেবল ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট আপনাকে করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেবে না। নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই একে প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায়।
এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি