করোনায় দেশে আরও ৪২ জনের মৃত্যু
প্রকাশিত : ১৪:৩৯, ৮ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৭:২৩, ৮ জুন ২০২০
বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ৯৩০ জনের মৃত্যু হলো। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৭৩৫ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৮ হাজার ৫০৪ জনে।
সোমবার (৭ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন।
গতকাল রোববারও একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল। ওইদিনও ৪২ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। শনাক্ত বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
গতকালের চেয়ে আজ ৮ জন কম আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিল ২ হাজার ৭৪৩ জন। নমুনা পরীক্ষায় আজ আক্রান্তের হার ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ আক্রান্তের হার দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৪ হাজার ৫৬০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছে ৬৫৭ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ২১ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ১১ শতাংশ বেশি।
নাসিমা সুলতানা বলেন, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৬১টি। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ১২ হাজার ৮৪২টি। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ১১৯টি নমুনা বেশি সংগ্রহ হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৯৪৪টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৩ হাজার ১৩৬ টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১৯২টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৪ লাখ ১০ হাজার ৯৩১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জন, সিলেট বিভাগে ১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন, খুলনায় ২ জন, রংপুরে ১ জন, ময়মনসিংহে ২ জন এবং বরিশাল বিভাগে ২ জন রয়েছে। এদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ জন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছে।
নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৪২ জন মারা গেছে, এরমধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং ৯ জন নারী। এরমধ্যে পুরুষের হার ৭১ শতাংশ ও নারী ২৯ শতাংশ। আর এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ৭৭ শতাংশ এবং নারী ২৩ শতাংশ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ২৯৭ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছে ৭ হাজার ৫৫২ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ১৪৪ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছে ৪ হাজার ৩১৯ জন। দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৭ হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১১২ টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারিন্টিন মিলে কোয়ারিন্টিনে রাখা হয়েছে ২ হাজার ২২৮ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৫ জনকে কোয়ারিন্টিনে রাখা হয়েছে।
কোয়ারিন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়পত্র পেয়েছে ১ হাজার ৮৫২ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫৩ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারিন্টিনে আছেন ৫৬ হাজার ৭২ জন। দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত সংগ্রহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ২৫ লাখ ৯ হাজার ১৪২টি। ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১২ হাজারটি এবং এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২২ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫টি। বর্তমানে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬৭টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৭১ হাজার ১৭টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ১ লাখ ৮ হাজার ১১৭টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ২৯১ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। ২৪ ঘন্টায় আরও ৫ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৯৪৫ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ১০ হাজার ৫৩৮ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৯৬৫ জন। মোট আক্রন্ত হয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৫৪২ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছে ৩৫৬ জন এবং মোট মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৭২ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, বাংলাদেশের করোনা মোকাবিলায় সহযোগিতা করতে চীনের ১০ সদস্যের করোনা বিশেষজ্ঞের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল আজ ঢাকায় এসেছে। তারা বাংলাদেশে ১৪ দিন থাকবেন। এ সময়ে তারা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক করোনা হাসপাতালের কোয়ারিন্টিন সেন্টার ও ল্যাবরেটরি পরিদর্শন করবেন।
বরাবরের মতোই করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান ডা. নাসিমা।
এদিকে আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় সকাল পর্যন্ত বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত করোনার ভুক্তভোগী বিশ্বের ৭০ লাখ ৯১ হাজার ৬৬৭ জন মানুষ। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার শিকার হয়েছেন ১ লাখ ৬ হাজার ৭৩৭ জন। নতুন করে প্রাণ গেছে ৪ হাজার ৫৭২ জনের। এ নিয়ে বিশ্বের ৪ লাখ ৬ হাজার ১৯৫ জন মানুষের প্রাণ কাড়ল ভাইরাসটি। আর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৩৪ লাখ ৬১ হাজার ৬১৯ জন। অর্থাৎ, সংক্রমণের প্রায় অর্ধেক মানুষই সুস্থতা লাভ করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হন ৮ মার্চ এবং এ রোগে আক্রান্ত প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
এমবি//