ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

করোনায় এতো চিকিৎসক মারা যাচ্ছেন কেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৪৮, ১৫ জুন ২০২০

মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আক্রান্ত এমনকি প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। মৃত্যু ও আক্রান্তের শিকার হওয়া এসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থা। বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনসহ স্বাস্থ্যখাতের এ সংস্থাগুলো দ্রুতই এ ব্যাপারে কিছু তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরবে। 

এমনটাই আশাবাদ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, করোনা দুর্যোগে জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর প্রাণহানি অত্যন্ত দু:খজনক এবং দেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি।

সম্প্রতি কানাডীয় বাংলা পত্রিকা নতুনদেশ’র প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঙ্গে ‘বাংলাদেশে এতো চিকিৎসক কেন মারা যাচ্ছেন’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় তিনি এই মত প্রকাশ করেন। এতে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি, চিকিৎসা সুবিধা, নাগরিকদের হয়রানিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
 
বাংলাদেশের কেন এতো চিকিৎসক মারা যাচ্ছেন- এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, এটি অত্যন্ত দু:খজনক যে নানা বয়সের দক্ষ চিকিৎসকগণ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে, প্রাণ হারানো চিকিৎসকদের কারো কারো কোমরবিডিটি (অন্যান্য শারীরিক উপসর্গ) ছিলো। তাঁদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে এটি হয়তো ভূমিকা রেখে রাখতে পারে। তাছাড়া চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত জীবন যাপন পদ্ধতিও ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, চিকিৎসকরা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কাজ শেষে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। দিনের প্রায় পুরোটা সময়ই হাসপাতাল, ক্লিনিক -এগুলো করে পার করে দেন। ‘ফিজিক্যাল ফিটনেসে’র  দিকে তাঁরা  খুব একটা মনোযোগ দিতে পারেন না। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, কোমরবিডিটি এবং ফিজিক্যাল ফিটনেস-এ ঘাটতির প্রভাব এই মৃত্যুর নেপথ্যে থাকতে পারে।
 
অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারে ভ্রান্তিও স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার পেছনে কাজ করে থাকতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, চিকিৎসকরা হয়তো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী যথাযথভাবে পরিধান এবং ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সেগুলো খোলার সময় সামান্য বিচ্যুতি ঘটলেই স্বাস্থ্যসেবীদের আক্রান্ত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়।

সম্পূর্ণ নতুন এই রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে চিকিৎসকদের কতোটা প্রস্তুত করা হয়েছিলো - এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনলাইনে এবং তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীদের হাল নাগাদ তথ্য সরবরাহ করছে। তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়েছে। গত জানুয়ারি মাসেই সোসাইটি অব মেডিসিনসারা বাংলাদেশের বাংলাদেশে কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করেছে। 

তিনি বলেন, আমরা বারবার বলেছি ব্যক্তিগত সুরক্ষার ব্যাপারে আপোষ করা যাবে না। তারপরেও দুর্ঘটনা ঘটছে। সেগুলো দেখার জন্য বিভিন্ন বিভাগকে বার্তা দেয়া হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়মিত ভাইরাস পরীক্ষায় যেতে হয় উল্লেখ করে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশের চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কর্মীদের একটি নির্দিষ্ট সময় হাসপাতালে কাজ করার পর তাদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে। 

তিনি বলেন, একজন সুস্থ চিকিৎসক সপ্তাহে ৬ দিন হাসপাতালে সেবা দিতে পারতেন। কিন্তু আমরা ১০ দিন কাজ করানোর পর বাধ্যতামূকভাবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তখন অন্য একটি গ্রুপ এসে দায়িত্ব পালন করছে। ১৪ দিন পর পুনরায় ভাইরাসের টেস্ট করে নিশ্চিত হয়েই তাদের আবার চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত করা হয়। এতো সতর্কতার পরেও দু:খজনক ঘটনাগুলো ঘটছে।

এছাড়া, আলোচনায় নিম্নমানের মাস্ক, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর ঘাটতি নিয়ে সাধারণ চিকিৎসক এবং জনসাধারণের বিভিন্ন অভিযোগের কথাও উঠে আসে।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি