ঢাকা, সোমবার   ০৭ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

করোনায় সুস্থ থাকতে পরিহার করবেন যেসব খাবার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৪৯, ১৬ জুন ২০২০

Ekushey Television Ltd.

করোনায় সুস্থ ও সবল থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। এই সময় শরীরকে রোগ প্রতিরোধী করে গড়ে তোলার জন্যই স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। পরিহার করতে হবে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার। কারণ এটা হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। 

কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং রোগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। একইসাথে করোনা ভাইরাসে সেলফ-কোয়েরেন্টাইন এবং আইসোলেশনে থাকার সময় শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটমুক্ত খাবার খেতেও পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞদের মতে হৃদরোগীরা করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবারের কারণে স্ট্রোক এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। উচ্চমাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের কারণে সার্বিকভাবে মৃত্যুঝুঁকি ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। 

এছাড়াও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২১ শতাংশ এবং হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, লকডাউনের কারণে ঘরেবন্দী থাকায় মানুষের শারীরিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই কমেছে। তাই রোগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের উপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ট্রান্সফ্যাট এক প্রকার হাইড্রোজেনেটেড অয়েল। এই আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেলই শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস, যা ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামেও পরিচিত। ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাদ্যদ্রব্য যেমন- প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড, স্ন্যাক্স ফুড, ভাজাপোড়া খাবার, বিস্কুট, কুকিজ, মার্জারিন এগুলোতে ট্রান্সফ্যাট থাকে। খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো খাবার সংরক্ষণের সুবিধার্থে এবং বিভিন্ন ভাজা পোড়া ও বেকারি খাদ্য পণ্যের স্বাদ, ঘ্রাণ এবং স্থায়ীত্ব বাড়ানোর জন্য আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেল ব্যবহার করে থাকে। 

এছাড়া ভাজা পোড়া খাদ্যে একই ভোজ্য তেল উচ্চ তাপমাত্রায় বারবার ব্যবহারের কারণেও খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট সৃষ্টি হয়। সাধারণত খরচ কমানোর জন্য হোটেল-রেঁস্তোরায় সিঙ্গারা, সমুচা, পুরি, জিলাপি, চিকেন ফ্রাইসহ বিভিন্ন ধরনের ভাজা পোড়া খাবার তৈরির সময় একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়। এ কারণে এসব খাবারে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) দেশে প্রচলিত ফাস্টফুড, বেকারিপণ্য, স্ট্রিট ফুড কিংবা রেস্তোরাঁয় তৈরিকৃত ভাজা-পোড়া খাদ্যপণ্য তৈরিতে হাইড্রোজেনেটেড তেলের ব্যবহার কমাতে এবং ভোজ্যতেল বারবার ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

বিএসটিআই এর সহকারী পরিচালক জনাব এনামুল হক বলেন, কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে মানুষ এখন ঘরে অবস্থান করছে এবং অধিকাংশের শারীরিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই কমে গেছে, তাই সুস্থ থাকতে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণে ইতোমধ্যে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

এই বিষয়ে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর বাংলাদেশ এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, হৃদরোগসহ সকল অসংক্রামকরোগব্যাধি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। উচ্চমাত্রায় ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণে সার্বিকভাবে মৃত্যুঝুঁকি ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির দৈনিক ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ হওয়া উচিত মোট খাদ্যশক্তির ১ শতাংশের কম, অর্থাৎ দৈনিক ২০০০ ক্যালোরির ডায়েটে তা হতে হবে ২ দশমিক ২ গ্রামের চেয়েও কম। ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করার একমাত্র পথ হলো সচেতনতা। তাই সচেতনতাই পারে আপনাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে।

শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড নির্মূল ক্রমেই বিশ্বজুড়ে একটি অগ্রাধিকার হয়ে উঠছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটমুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। 

ভারত, থাইল্যান্ড, ইরান, অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলসহ মোট ৩০টি দেশে খাদ্য দ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ কার্যকর করেছে। এছাড়া আরো ২৪টি দেশ ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে একটি নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছে। ভোজ্যতেল এবং অন্যান্য খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা কমিয়ে আনতে একটি ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং উক্ত কমিটি এরই মধ্যে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, বিশেষজ্ঞ এবং ভোক্তাদের সাথে দুটি আলোচনা সভা সম্পন্ন করেছে। সংস্থাটি বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত স্ট্যান্ডার্ড মেনে শিগগিরই এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

এমবি//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি