‘পজেটিভ’ হয়েও থেমে যাননি এই করোনা সৈনিক
প্রকাশিত : ১৬:১২, ১৮ জুন ২০২০ | আপডেট: ২২:০১, ১৮ জুন ২০২০
এম আহসান হাবীব
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত পুরো বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ দুনিয়া ছেড়েছেন এ ভাইরাসের আক্রমণে। করোনা থেকে বাঁচতে সবাই যখন ঘরবন্দি তখন জনসাধারণকে সচেতন ও তাদের রক্ষা করতে কিছু মানুষ ছুটে চলেছেন অবিরাম। চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন এ তালিকার সামনের সারিতে।
তেমনি একজন এম আহসান হাবীব। কুমিল্লার চান্দিনার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাবীব করোনাকালে মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে সপরিবারে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে করোনা তাকে থামাতে পারেনি। এখনও কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তবে সরাসরি মাঠে থেকে নয়, ঘরে থেকেই।
জানা যায়, গত ৩ জুন কোভিড-১৯ পজেটিভ হওয়ার প্রতিবেদন হাতে পান এম আহসান হাবীব। একই সঙ্গে তার স্ত্রী ব্র্যাকের ক্ষুদ্র ঋণের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (পাবনা-৩) নাজনীন আক্তারও পজেটিভ হন। এরপর থেকে ঘরবন্দি হয়েছেন তারা। আইসোলেশন বা বিচ্ছিন্নকরণ জীবন শুরু হলেও দমে যাননি তারা। ঠিক আগের মতোই প্রাণচাঞ্চল্যে কাজ করে চলেছেন। মানুষকে সচেতন করতে এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ যেন ভয়ে কুকড়ে না যান এমনটি বুঝাতে নেমে পড়েন হাবীব। বেছে নেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। একই সঙ্গে গণমাধ্যমেও লিখে যাচ্ছেন তিনি। নিজের লেখা ও লাইভ ভিডিও থেকে করোনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। করোনা ও মানবিক বোধ, করোনা: প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ শ্রেয়, করোনা: নৈতিকতা ও ধর্ম, করোনায় মনোবল ও ইমিউনিটি বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, করোনার ভয় করতে হবে জয়, করোনায় পরিবার, প্রতিবেশী ও স্বজন, করোনায় ভাবনা: প্রকৃতি, পরিবেশ ও কৃষি, করোনাকালের ভাবনা: বিদ্বেষ নয়, ভালোবাসা, করোনায় খাদ্যাভ্যাস ও চিকিৎসা শিরোনামে তিনি করে যাচ্ছেন সচেতনতামূলক কাজ।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হাবীব ৩৭তম বিসিএস’র মাধ্যমে গত জানুয়ারিতে চান্দিনা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি’র (কুবিসাস) এ প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পদে যোগদানের পূর্বে পূবালী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।
করোনা পজেটিভ হওয়ার পনের দিন পর বর্তমানে এ দম্পতি কিছুটা সুস্থ রয়েছেন বলে জানান আহসান হাবীব। করোনাক্রান্ত হওয়ার কারণে মাঠে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে পারছেন না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের একজন ক্ষুদ্র কর্মচারী হিসেবে যোগদানের পর থেকে প্রতিক্ষণ মানুষকে সেবা দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।’
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে তিনি চন্দিনার বিভিন্ন ইউনিয়নে ত্রাণ কার্যক্রম, সরকারি সহায়তা, লকডাউন, বাজার পরিদর্শন ও তালিকা যাচাই-বাছাইসহ যাবতীয় কাজে নিয়োজিত ছিলেন। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের পরের দিনই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এর কিছু দিন পর করোনাক্রান্ত হওয়ার খবর পান। তবে মনোবল হারিয়ে চুপসে যাননি তিনি। অসুস্থতার মধ্যেও মানুষের মনোবল অটুট রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন হাবীব। তিনি বলেন, ‘আবার মানুষের কল্যাণে কাজে ফিরতে চাই। অধিকতর আন্তরিকতা নিয়ে যাবতীয় কাজে মনোনিবেশ করতে চাই। করুণাময় আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাকে সে সুযোগটুকু দেবেন।’
এমএস/এনএস