ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

করোনায় নির্ধারিত শয্যার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি খালি!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৪৯, ২৭ জুন ২০২০

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’র করোনা ওয়ার্ড- সংগৃহীত

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’র করোনা ওয়ার্ড- সংগৃহীত

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশের ৯৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ রোগী নিজ বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। খুব একটা খারাপ পরিস্থিতির শিকার না হলে তারা হাসপাতালে যান না। এতে করে সারাদেশে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত শয্যার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি (৬৭.৪৮ শতাংশ) খালি পড়ে আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা গতকাল শুক্রবার নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলিটিনে জানিয়েছেন, সারাদেশে করোনার জন্য নির্ধারিত সব হাসপাতালেই অনেক শয্যা খালি থাকায় রোগীরা অনায়াসে ভর্তি হতে পারবেন। 

তিনি বলেন, ‘করোনার জন্য নির্ধারিত সব হাসপাতালেই রোগী ভর্তি হতে পারবেন। কারণ অনেক শয্যা খালি আছে। সব হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে মোট ১০ হাজার ২৪০টি, হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা ৮০টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৫৫টি।’

করোনাক্রান্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই আক্রান্তদের একটি বড় অংশের লক্ষণ ও উপসর্গ মৃদু। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। মূলত যাদের অবস্থা গুরুতর, তাদেরই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের একটা অংশের মৃত্যু হচ্ছে বাসায়। গত ছয় দিনে মোট মৃত্যুর ২৩ শতাংশই হয়েছে বাসায়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অবস্থা গুরুতর হওয়ার পরও অনেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন না। যদিও মোট আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় দেশে হাসপাতালের শয্যার সংখ্যা অপ্রতুল। কিন্তু যে সংখ্যক শয্যা আছে, সেগুলোর বেশির ভাগই এখন খালি।

অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, সারাদেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে সাধারণ শয্যা রয়েছে ১৪ হাজার ৬১০টি এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ৩৭৯টি। এর মধ্যে সাধারণ শয্যায় করোনা রোগী ভর্তি আছেন ৪ হাজার ৬৯১ জন এবং ফাঁকা রয়েছে ৯ হাজার ৯১৯টি। এদিকে আইসিইউতে ভর্তি আছেন ১৮৩ জন এবং আইসিইউ বেড খালি রয়েছে ১৯৬টি।

অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ঢাকা মহানগরীতে করোনার জন্য হাসপাতাল রয়েছে ১৬টি এবং ঢাকা জেলায় একটি। ঢাকা মহানগরীতে করোনা রোগীদের জন্য সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৭৭৩টি এবং আইসিইউ শয্যা ১৮০টি। সাধারণ শয্যায় ভর্তি আছেন ২ হাজার ৩৭৫ জন এবং আইসিইউতে ভর্তি আছেন ৯৭ জন করোনা রোগী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সব মিলিয়ে সারাদেশে মোট ৪ হাজার ৮৭৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আর শুরু থেকে এ পর্যন্ত সুস্থ হওয়া ও মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বাদ দিলে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দেশে মোট চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দাড়ায় ৭৫ হাজার ৬৮০। অর্থাৎ করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এমন রোগীদের মাত্র ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ এ মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকি ৯৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসায়।

নাসিমা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৪৯৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৮৬৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট পরীক্ষা হয়েছে ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৯৪১টি নমুনা। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ১ হাজার ৬৩৮ জন। এ নিয়ে মোট এখন ৫৩ হাজার ১৩৩ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। 

উল্লেখ্য, দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এরপর থেকে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে এর সংখ্যা। দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জন। মারা গেছেন ১,৬৬১ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫৩ হাজার ১৩৩ জন।

এর আগে গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। এরপর তা পৃথিবীজুড়ে মহামারীতে রূপ নেয়। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৬ লাখ ১২ হাজার ১৫০ জন। মৃতের সংখ্যা চার লাখ ৮৯ হাজার ৩৭২ জন। সুস্থ হয়েছেন ৪৮ লাখ ৪০ হাজার ৬৬৫ জন।

এমএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি