ঢাকা, শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪

করোনায় কী মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:০৩, ৩০ জুন ২০২০ | আপডেট: ০৯:০৩, ৩০ জুন ২০২০

করোনা ভাইরাস নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। এসব গবেষণায় ভাইরাসটির নতুন নতুন উপসর্গ যেমন বেড়িয়ে আসছে, তেমনি এর নানা ক্ষতিকর দিক প্রকাশ পাচ্ছে। কোভিড-১৯ কেবল শ্বাসকষ্টের সংক্রমণ নয়, এটি মস্তিষ্ক এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রসহ অনেকগুলো প্রধান অঙ্গ সিস্টেমকে ধ্বংস করতে পারে। এমনটাই প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

চীনের উহান শহরে কোভিড-১৯ এর জন্য হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে খিঁচুনি এবং চেতনালোপ এবং স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার একাধিক লক্ষণ দেখা দেয়। 

এই মাসের শুরু দিকে, ফরাসি গবেষকরা জানিয়েছেন যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আট শতাংশ রোগী আইসিইউতে ভর্তি হয়েছেন। তারা স্নায়বিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এবং যখন তাদের হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে তখন তেত্রিশ শতাংশ বিভ্রান্ত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছিল।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেলম্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের সাইকিয়াট্রিস্ট এবং এপিডেমিওলজিস্ট ডঃ ম্যাডি হর্নিগের মতে, কোভিড-১৯র স্নায়ুজনিত সমস্যাগুলো ব্যক্তিজীবনেও নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থাকবে এবং প্রতিবন্ধকতা বা অসুবিধা তৈরি করবে, এমন সম্ভাবনা বেশি দেখা যাচ্ছে।

সংক্রমণ দীর্ঘকাল ধরে স্নায়বিক রোগে জড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া এটি সিফিলিস, এইচআইভি ও ডিমেনশিয়াকে প্ররোচিত করতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না পেলে নার্ভ ব্যথা, মুখের পক্ষাঘাত এবং মেরুদণ্ডের প্রদাহ হতে পারে। এর আগে সার্স আক্রান্ত এক ব্যক্তির স্মৃতিলোপ পেয়েছিল এবং পরে তিনি কোমায় চলে যান। সেই ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তার মস্তিষ্কের টিস্যুতে ভাইরাস রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়।

স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা এমনটা বলছেন না যে, প্রত্যেক করোনা আক্রান্ত রোগী মস্তিষ্কের ক্ষতির শিকার হবেন। তবে ভাইরাসটি মস্তিস্ককে অনেকগুলো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে যা এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি।

কীভাবে করোনাভাইরাস মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে? এ ব্যাপারে গবেষণায় জানা যায় যে, কোভিড-১৯ সরাসরি নিউরাল কোষগুলোকে সংক্রামিত করে থাকে। টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবিয়াল প্যাথোজেনেসিস এবং ইমিউনোলজির অধ্যাপক ডক্টর জেফ্রি সিরিলো বলেন, ভাইরাসটি সম্ভবত কোষের ভিতরে প্রতিলিপি তৈরি করে এবং তাদের কাজকে প্রভাবিত করে। এই ভাইরাল আক্রমণের শিকার রোগীদের মস্তিষ্কের সমস্যা ক্রমাগত থাকতে পারে বা সম্ভবত তাদের নিয়মিত খিঁচুনিও হতে পারে। 

লস অ্যাঞ্জেলেসে গত এপ্রিলে মাথাব্যথা, খিঁচুনি এবং হ্যালুসিনেশনে আক্রান্ত চল্লিশ বছর বয়সী এক নারীর সেরিব্রোস্পাইনাল তরল থেকে করোনাভাইরাসের আরএনএ পাওয়া গিয়েছিল।

ডক্টর ফোটুহি বলেছেন, ইনফ্লামেশন মস্তিষ্কের জন্য খারাপ এবং আমরা জানি এটি একটি বড় বিষয়। আলঝাইমার গবেষণার অন্যতম প্রধান তত্ত্ব হলো, ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ এই রোগকে বাড়িয়ে দেয়। করোনভাইরাসও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ব্যাপক প্রদাহের মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। 

মস্তিষ্কের প্রদাহ হলে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। গবেষণায় দেখা যায় যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ত্রিশ শতাংশ রোগীদের এই সমস্যাটি ঘটে থাকে। জমাটবাধা রক্ত মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়। এর সঙ্গে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং এটি স্ট্রোকের দিকেও নিয়ে যেতে পারে। 

চীন এবং ইতালি থেকে প্রাপ্ত গবেষণায় দেখা গেছে যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে স্ট্রোকের শিকার প্রায় পাঁচ শতাংশ। তবে নিউইয়র্ক হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি কম ছিল, মাত্র এক শতাংশ।

এসব উদ্বেগের প্রেক্ষিতে নিউরোলজিস্টরা যুক্তি দেখান যে, কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে তাদের স্নায়ুতন্ত্র কীভাবে পুনরুদ্ধার হয় বা কী হয় না তা বোঝার জন্য আরও গবেষণা করা গুরুত্বপূর্ণ। ডা. সিরিলো, ডা. কোরালনিক এবং ডাঃ হর্নিগ এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন, তবে আরও গবেষণা করা জরুরি বলে তারা মনে করেন।
এএইচ/এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি