ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমে বেড়েছে সুস্থতার হার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:১৭, ৪ জুলাই ২০২০

দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে, সুস্থতার হার বেড়েছে। ১১৯ তম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ২৯ জন। গতকালের চেয়ে আজ ১৩ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৪২ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এ পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৯৯৭ জন।

শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ দশমিক ০১ শতাংশ কম।

শনিবার (৪ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৬৭৩ জন। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ৬৭ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৬০৬ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭০ হাজার ৭২১ জন।

তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৪৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১৪ হাজার ৭২৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ২৮৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ১৭৪ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৪ হাজার ৬৫০টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ১১৪ জন।

তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ৩২ হাজার ৭৪টি নমুনা পরীক্ষায় ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৭৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের ১ দশমিক ০৭ শতাংশ বেশি।

ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৮৭১টি। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ৭৮১টি। গতকালের চেয়ে আজ ৯১০টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৭১টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হলেও ৬৪টি পরীক্ষাগারের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জানানো হয়। এসব পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৭২৭টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৪ হাজার ৬৫০টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৭৭টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারী ২৯ জনের মধ্যে ২১ জন পুরুষ ও নারী ৮ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৫৮৭ জন এবং নারী ৪১০ জন। শতকরা হারে ৭৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ পুরুষ ও ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশ নারী মৃত্যুবরণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিভাগে ৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭ জন, খুলনা ও সিলেট বিভাগে ৩ জন করে ৬ জন, বরিশাল বিভাগে ২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২৫ জন, বাসায় মারা গেছেন ১ জন। হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এসেছেন ৩ জন।এ পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৪১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫২১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১০১ জন, খুলনা বিভাগে ৮২ জন, বরিশাল বিভাগে ৬৭ জন, সিলেট বিভাগে ৮৪ জন, রংপুর বিভাগে ৫৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

গত ২৪ ঘন্টায় মৃতদের মধ্যে ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন ও ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে দশমিক ৬০ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ২০ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৯ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব বয়সের ৪৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৭৫টি, আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৪৯টি। সারাদেশে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৭৫টি, আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৪০১টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১১ হাজার ১৪১টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ২০৭টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৯৮টি।

০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৭৪৪ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৬ হাজার ৪৪৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২৪২ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ১৩ হাজার ৬৭৪ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৩০ হাজার ১২৩ জনকে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ২৪২ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৫ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ৬৪৮ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ৯ হাজার ৯৯৫ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৪ হাজার ১৫০ জন।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ২৪ ঘন্টায় সংগ্রহ বা বিতরণ হয়নি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ২৮ হাজার ২৪৫টি। এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২৪ লাখ ৭ হাজার ৩৬৪টি। বর্তমানে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৮১টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪৩১টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮৮টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪১৪ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৪০৩ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৪১ হাজার ৫০৫ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ হাজার ৫০ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৬০ হাজার ৭৮৫ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৭১ জন এবং এ পর্যন্ত ২৩ হাজার ২৪০ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭২৩ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৫ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ৩২ জন এবং এ পর্যন্ত ৫ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৭ জন বলে তিনি জানান।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি