করোনায় মস্তিষ্কেও গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে
প্রকাশিত : ২১:৪০, ৮ জুলাই ২০২০
করোনাভাইরাসের কারণে মস্তিষ্কের বড় ধরনের অসুখ হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ডাক্তাররা হয়তো এই রোগ শনাক্তই করতে পারছেন না।
যুক্তরাজ্যে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন বা ইউসিএলের গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। খবর বিবিসির
কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ৪৩ জন রোগীর ওপর গবেষণা চালিয়ে গবেষকরা দেখেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে স্নায়ুজনিত গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে ব্যথা, মানসিক বৈকল্য এবং মানসিক বিকারজনিত প্রলাপ।
গবেষণায় দেখা গেছে, এসব রোগীর মস্তিষ্ক হয় ঠিক মতো কাজ করেনি, স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন অথবা মস্তিষ্কে অন্যান্য ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
“১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ইনফ্লয়েঞ্জা মহামারির পর ১৯২০ ও ১৯৩০ এর দশকে এনসেফালাইটিস লেথারজিকার মতো যেসব মানসিক সমস্যা হয়েছিল সেরকম কিছু করোনাভাইরাস মহামারির পরেও হবে কীনা সেটা দেখার বিষয়,” বলেন ইউসিএল-এর ইন্সটিটিউট অফ নিউরোলজির ড. মাইকেল জান্ডি।
দি ল্যান্সেট সাইকিয়াট্রির এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া ১২৫ জন কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে মস্তিষ্কের জটিলতা দেখা গেছে।
এই ১২৫ জনের প্রায় অর্ধেকের রক্ত জমাট বাঁধার কারণে স্ট্রোক হয়েছে, অন্যদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের প্রদাহ হয়েছে, কারো স্মৃতিভ্রংশের লক্ষণ দেখা দিয়েছে – কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে মানসিক ব্যাধি।
রিপোর্টের প্রণেতাদের একজন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টম সলোমন বলছেন, “আগে আমরা ভাবতাম করোনাভাইরাস ফুসফুসে আক্রমণ করে কিন্তু এখন এটা স্পষ্ট যে এটা মস্তিষ্কেও সমস্যা সৃষ্টি করে।“
“এর একটা কারণ মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যাওয়া, তা ছাড়া আছে রক্ত জমাট বাঁধা, এবং রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠার ফলে সৃষ্ট প্রদাহ। তা ছাড়া আমাদের এ প্রশ্নটাও করতে হবে যে ভাইরাসটি নিজেই মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে কিনা।“
কানাডিয়ান নিউরোসায়েন্টিস্ট অধ্যাপক এ্যাড্রিয়ান ওয়েন একটি অনলাইন জরিপ শুরু করেছেন যা বিশ্বব্যাপি গবেষণা চালাবে যে করোনাভাইরাস কিভাবে বোধশক্তির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
এন এইচ এন এন-এর নিউরোলজিস্ট মাইকেল জান্ডি বলছেন, “এর আগে সার্স ও মার্স ভাইরাসের সাথেও স্নায়ুতন্ত্রের রোগের সম্পর্ক দেখা গিয়েছিল - কিন্তু এই নতুন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে যা দেখছি তা আগে কখনো দেখিনি।“
“এর সাথে একমাত্র ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লুর তুলনা চলে। ওই মহামারির পরের ১৫-২০ বছরে মানুষের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মস্তিষ্কের রোগসহ নানা সমস্যা দেখা গিয়েছিল।“
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯১৮ সালে পৃথিবী জুড়ে এনসেফালাইটিস লেথার্জিকা নামে এক রহস্যময় রোগ ছড়িয়েছিল – যাতে প্রায় ১০ লক্ষ লোক আক্রান্ত হয়েছিল। এর কারণ সম্পর্কে খুব বেশি তথ্যপ্রমাণ নেই। এতে আক্রান্তদের মধ্যে সংজ্ঞাহীনতা এবং পার্কিনসন্স রোগের মত সমস্যা দেখা দেয় - যাতে তাদের সারাজীবন ভুগতে হয়।
কোভিড-১৯ এবং ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লুর তুলনা করার ব্যাপারে সাবধান হওয়া দরকার। কিন্তু কোভিড রোগীদের মধ্যে স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার লক্ষণ এত বেশি দেখা যাচ্ছে যে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া কী হবে তার অনুসন্ধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এসি