ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

দেশে ৬শ বার জিন পরিবর্তন করেছে করোনা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৪৬, ২০ জুলাই ২০২০

সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবের প্রধান সেলিম খান।

সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবের প্রধান সেলিম খান।

বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস বাংলাদেশে এরই মধ্যে তার জিনোমিক লেভেলে ৫৯০টি ও প্রোটিন লেভেলে ২৭৩টিরও বেশি পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে করোনার ‘ডি৬১৪-জি’ স্ট্রেইনটি সিকোয়েন্সিংয়ে শনাক্ত হয়েছে, যাকে বাংলাদেশে সংক্রমণের প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। একইসঙ্গে দেশে করোনার কোন রূপটি বেশি সংক্রমণ ঘটাচ্ছে, জিনবিন্যাস বিশ্লেষণ করে তা খুঁজে পেয়েছেন দেশের গবেষকরা।

রোববার (১৯ জুলাই) বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস (ডিআরআইসিএম) ল্যাবে জিনোমিক রিসার্চ ল্যাব আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (এনসিবিআই) ও গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটায় (জিএসএআইডি) ২২২টি জিনোম সিকোয়েন্সিং ডেটা জমা দেয়ার পর এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষকরাও করোনাভাইরাসের দেড়শটিরও বেশি নমুনার জিনবিন্যাস করেছেন বলে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবের প্রধান সেলিম খান বলেন, এ গবেষণার মধ্য দিয়ে প্রাণ সংহারী এই ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি বুঝে সংক্রমণের পরবর্তী ঢেউ রোধের প্রস্তুতি যেমন নেয়া যাবে, তেমনি তা এখানকার জন্য টিকা তৈরির কাজটিও সহজ করবে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে সাধারণত ১২৭৪টি প্রোটিন থাকে। তার মধ্যে ২১২ থেকে ৫২৩ পর্যন্ত হলো গুরুত্বপূর্ণ স্পাইক প্রোটিন। এর মধ্যে আমরা কোনো মিউটেশন পাইনি। করোনাভাইরাস যে স্ট্রেইনটি সিকোয়েন্সিংয়ে শনাক্ত হয়েছে, তা কিন্তু এর বাইরে পড়ছে।

সেলিম খান জানান, বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীরা করোনার পাশাপাশি কোভিড-১৯-এর রোগীর নমুনায় একই সঙ্গে অন্যান্য আরো রোগ সংক্রামক জীবাণু বা প্যাথোজেনের উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন। এই পর্যায়ে বিজ্ঞানী দল সেই জীবাণুগুলোর উপস্থিতিতে সংক্রমণের তীব্রতার সম্ভাব্য যোগসূত্র খুঁজে বের করতে গবেষণা চালাচ্ছেন। এছাড়া বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীরা কোভিড-১৯ রোগীর নমুনায় অন্যান্য মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জিনের উপস্থিতি শনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন।

জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবের প্রধান আরও বলেন, মানুষ হতে মানুষে ইনফেকশন বিস্তারের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের জিনোমগুলো ক্রমাগত পরিবর্তন হতে থাকে। এই পরিবর্তনগুলো রেকর্ড ও বিশ্লেষণ করে ভাইরাসটির বিস্তার রোধে জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করবে। ‘সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার প্রাক্কালে অঞ্চলভেদে ভাইরাসটি তার স্বতন্ত্র রূপ—মিউটেশন তৈরি করতে পারে, সেক্ষেত্রে সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে অঞ্চলভিত্তিক এই স্বতন্ত্র ভাইরাস স্ট্রেইন শনাক্তকরণের মাধ্যমে মহামারী পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে সেকেন্ড ওয়েভের সময়ে অতি দ্রুত ভাইরাসের সম্ভাব্য উৎসস্থল শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এছাড়া এই ভাইরাসের পরিবর্তনগুলো রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়াতে কতটা ভূমিকা রাখছে ও রোগের তীব্রতা বা লক্ষণগুলোর সঙ্গে করোনার মিউটেশন সরাসরি সম্পর্কিত কিনা, তা নির্ধারণেও সিকোয়েন্সিং ডাটা সহায়তা করতে পারে। এক্ষেত্রে বিসিএসআইআর বাংলাদেশের অন্যান্য গবেষণা সংস্থা এবং ঔষধ প্রশাসনকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

এসময় বাংলাদেশের ভাইরাসটির সঙ্গে ইতালির ভাইরাসটির অধিক মিল রয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে এর উৎস, গতি, প্রকৃতি ও বিস্তার সঠিকভাবে জানতে পারলে তা থেকে খুব সহজেই আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। বিশেষ করে এই তথ্য-উপাত্ত করোনাভাইরাসের চিকিৎসা এবং ওষুধ বা টিকা তৈরির ক্ষেত্রে বিস্তর সুবিধা দেবে। ফলে দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে। এ গবেষণার ব্লুপ্রিন্ট বিশ্বে চলমান ভ্যাকসিন গবেষণা গ্রুপের সঙ্গে প্রকাশ করে তাদের ভ্যাকসিন গবেষণায় অংশীদার হওয়ায় চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে করোনার ২২২টি জীবনরহস্য তথ্য পাঠানো হয়েছে।

গত মে মাসে দেশে করোনার সঠিক চিত্র জানার জন্য বাংলাদেশের আটটি বিভাগ থেকে ইনফেকশন রেট ও জনসংখ্যার পরিসংখ্যানিক ভিত্তিতে সর্বমোট ৩০০ সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করার জন্য জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরিকে একটি প্রকল্প শুরু করার নির্দেশ দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী। এর প্রেক্ষিতে বিসিএসআইআরের গবেষক দলটি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের সার্বিক সহযোগিতায় সারা দেশ থেকে নমুনা ও রোগীদের মেডিকেল ইতিহাস সংগ্রহ ও জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ অব্যাহত রেখেছে। জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবের বিজ্ঞানীরা ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন ও ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যামের বায়োইনফরমেটিকস দলের সঙ্গেও কোভিড-১৯-এর প্রভাববিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় যুক্ত হয়েছেন।

এ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আনোয়ার হোসেন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক একেএম শামসুজ্জামান।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি