ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

করোনার আরেক দোসর গুলেনবারি সিনড্রোম!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৪৮, ৯ আগস্ট ২০২০

বৈশ্বিক মহামারি করোনার পাশাপাশি হাজির হয়েছে আরেক রোগ। মহামারী করোনার সঙ্গেই গুলেনবারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে ভারত রাজ্যে এমন রোগীর সন্ধান মিলেছে। করোনার মতো এই রোগে আক্রান্তদেরও শ্বাসকষ্ট ছাড়াও হাত-পা ঝিনঝিন করছে, চলতে পারছেন না, এমন উপসর্গ দেখা দিতে দিচ্ছে এই রোগীদের।

করোনার দোসর হিসেবে এই রোগ চিহ্নিত হচ্ছে। করোনা ছাড়াও অন্য কোনও ভাইরাল সংক্রমণের পরবর্তী ধাপেও এই রোগ দেখা দিতে পারে। এই রোগের ক্ষেত্রে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হয়। যদিও সেই শ্বাসকষ্ট করোনার কারণে যে শ্বাসকষ্ট হয়, তার চেয়ে শারীরবৃত্তীয়ভাবে আলাদা। করোনার সঙ্গেই এই সিনড্রোম শুরু হওয়ায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে আতঙ্কের কোনও জায়গা নেই, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসায় সেরে যায় এই রোগ, আশ্বস্ত করছেন চিকিৎসকরা।

ভারতের স্নায়ু বিশেষজ্ঞ সীতাংশু শেখর জানালেন, হাত-পা ঝিনঝিন করছে, চলতে পারছেন না, এমন উপসর্গ নিয়ে রোগী আসেন। হাত দিয়ে কোনও কিছু ধরতে পারছেন না কিছু। কারও ক্ষেত্রে আবার চোখের পাতা বন্ধ হচ্ছে না, এমনও হতে পারে। তিন থেকে চার দিনের মধ্যে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন রোগীরা, কারও সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না গুলেনবারি সিনড্রোমে আক্রান্তরা।

তিনি আরও জানান, প্রথমে পা ব্যথা দিয়ে শুরু হয়, আস্তে আস্তে যন্ত্রণা যায় হাত পর্যন্ত। শুরু হয় পক্ষাঘাত। ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা মুখের অংশে পক্ষাঘাতও হতে পারে। একে বলা হয় অ্যাসেন্ডিং প্যারালিসিস। যদিও এখন মুখ থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত অচল হয়ে যাওয়া, কিংবা হাত ও পায়ে পক্ষাঘাত এই উপসর্গও দেখা যায়। ১৪-১৭ দিনের মধ্যে এই উপসর্গ প্রকট হয়ে ওঠে। ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্বাসনালীর পেশী, সেই কারণে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে এটি হল অ্যাকিউট ইনফ্ল্যামেটরি পলির‌্যাডিকিউলো নিউরোপ্যাথি। একগুচ্ছ নার্ভ একসঙ্গে থাকে, এগুলোতে এই রোগ আঘাত হানে, তাই এই নাম। নিউরনের মায়েলিন শিথটা নষ্ট হয়ে যায় এর ফলে। তাই শরীরে স্নায়ুপ্রবাহ চলাচল করতে পারে না। সে কারণেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন রোগী। এই রোগটিকে ইমিউন মেডিয়েটেড ডিজিজ বলে উল্লেখ করেন স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ডা. সীতাংশু শেখর। তার কথায়, “কোভিডের সঙ্গে গুলেনবারি সিনড্রোমের বিষয়টি নতুন। রুটিন কোভিড চেক-আপ করতে গিয়ে অনেকেরই পজিটিভ আসছে। এটাই ভাইরাল সংক্রমণ বা পোস্ট ভাইরাল নিউরোপ্যাথি। করোনা ওয়ার্ডে কাজ করেছেন এমন কর্মীর ক্ষেত্রেও গুলেনবারি সিনড্রোম ধরা পড়েছে সারা বিশ্ব জুড়ে।”

কীভাবে বোঝা যায়

এই রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে শিরদাঁড়ার রস বা সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। তাতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকলে রোগ নির্ণয় করা যায় দ্রুত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগে সুস্থ হওয়ার হার অনেক বেশি। তবে করোনা প্রথমে ফুসফুসকে আঘাত করছিল, এখন শরীরের অন্য সিস্টেমেও প্রভাব ফেলছে এই ভাইরাল সংক্রমণও তেমনই। যদিও এই রোগের সঙ্গে করোনার জিনগত সম্পর্ক খুবই কম এমনটাও উল্লেখ করেন ভারতের স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ডা. সীতাংশু শেখর।

করোনার সঙ্গে গুলেনবারির সম্পর্ক

যে কোনও ভাইরাল জ্বর থেকেই গুলেনবারি সিনড্রোম হতে পারে। তবে এই রোগ আগেও ছিল। কিন্তু সম্প্রতি অনেকেরই একই সঙ্গে করোনা পজিটিভও এসেছে। তবে করোনার সঙ্গে গুলেনবারির কতটা সম্পর্ক রয়েছে, এর জন্য আরও বেশি তথ্য ও গবেষণা প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের মেডিসিনের প্রবীণ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “করোনার সঙ্গে গুলেনবারি সিনড্রোম খুব নামমাত্র রোগীর ক্ষেত্রেই হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এই দুই রোগের সংযোগকে বিরল বলা যেতে পারে। মেরুদণ্ডে প্রদাহ তৈরি হয় এই রোগে। করোনা হলে প্রথম ক্ষেত্রে ফুসফুসে এসিই রিসেপ্টর যেখানে আছে, সেখানে সমস্যার সূত্রপাত হয়। এ ছাড়াও জিবি সিনড্রোমে রক্তবাহের কাজে গোলমাল হতে পারে। এন্ডোথেলিয়াল ডিজফাংশন ও ক্লট (রক্তের ডেলা) তৈরি হয়। রক্তবাহের প্রবাহেও বাধা তৈরি হয়। সব মিলিয়ে প্রদাহ হয় এবং রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে।”

রোগের চিকিৎসা কী

ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয় এই রোগের। কারও কারও ক্ষেত্রে আইভি ইমিউনোগ্লোবিউলিন প্রয়োগ করা হয়। এ ছাড়া প্লাজমা এক্সচেঞ্জ নামক পদ্ধতি ব্যবহার করে চিকিৎসা দেয়া হয় রোগীদের। এটি অনেকটাই ডায়ালিসিসের মতো।

চিকিৎসকদের মত, এই আবহে আতঙ্ক নয় বরং বিধি মেনে সুস্থ থাকুন। কোনও রকম শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকদের পরামর্শ নিন। অযথা আতঙ্কের কোনও প্রয়োজন নেই। সূত্র: আনন্দবাজার

এএইচ/এমবি


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি