আমরা কি করোনামুক্ত? যা বললেন ডা. এবিএম আবদুল্লাহ (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১৩:০২, ১২ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ১৩:০৬, ১২ আগস্ট ২০২০
আগস্ট মাসটি বাঙালি জাতির জন্য শোকের মাস। আমাদের শোকের মাস, তবুও এই শোকের মাসেই আমাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে নতুন করে। একাধারে বাঙালি জাতি এই মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতি এবং তার সাথে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এখনকার চলাচল, মুভমেন্ট, সামাজিকতা দেখে মনে হচ্ছে মহামারী করোনা চলে গেছে। সত্যি কি তাহলে করোনা চলে গিয়েছে? আমরা কি করোনামুক্ত?
সম্প্রতি একুশে টেলিভিশনের নিয়মিত আয়োজন ‘জানতে চাই, জানাতে চাই’ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত ইউজিসি অধ্যাপক, প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ।
এই মুহূর্তে করোনাকালীন অবস্থা দেখে মনে হয় আমরা করোনামুক্ত হয়ে গিয়েছি, আপনি কি মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, এটা তো শোকার্ত আগস্ট, ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর, বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য যারা শহীদ হচ্ছেন আমি শুরুতে তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। ইতিমধ্যে করোনায় অনেক ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিও আমাদের মাঝ থেকে চলে গিয়েছেন। আমি তাদেরও আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। করোনা যে চলে গিয়েছে বিষয়টি কিন্তু তা নয়। অনেকেই কিন্তু হাসপাতালে করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করছেন, আইসিইউতে আছেন, দুর্ভোগ সাফার করছেন। আমি তাদেরও দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। তবে হ্যাঁ একথা সত্য যে, ঈদের আগ থেকে শুরু করে গরুরহাট, কেনাবেচা, জবাই করা, গোশত বন্টন- এগুলো দেখে মনে হয় মানুষের মধ্যে করোনার কোনও ভীতিই নাই। আতঙ্কগ্রস্ত কেউ না, ভয়-ভীতি তো একদম নাই এবং করোনা বলতে কিছু একটা আছে এমন কিছু মনেই হয় না।
তিনি বলেন, বিশেষ করে ঢাকা শহরে ঘুরলে দেখবেন জীবনযাত্রা ঠিক আগের মতো। ওই ট্রাফিক যানজট, লম্বা লাইন রাস্তাঘাটে, ভীড়- এগুলো দেখেই মনে হয় মানুষের মধ্যে কোন ভীতি কিংবা করোনা বলতে কিছু নাই। আরেকটা খবর হচ্ছে গ্রামগঞ্জে মানুষের মধ্যে করোনা বলতে একটি রোগ আছে, তা কেউ মনেই করে না। জানেও না অনেকেই, বোঝার চেষ্টাও করে না। এমনকি ঢাকায় কিছু লোক তো মাস্ক পরে কিন্তু গ্রামগঞ্জে এসবের কোন খবরই নাই। মানুষ মনেই করে না করোনা বলতে একটি রোগ আছে। এ দেখে মনে হয় করোনার ভয় নাই। প্রথম অবস্থায় যে আতঙ্ক-ভয় ছিল, সেটা এখন কেটে গেছে। যদিও এরকম ভাবে নেওয়া উচিত নয়। ভয় নেই, কিছু মনেই করবো না, একদম উদাসীন, যা হয় হবে- এরকম ভাবা ঠিক নয়। বিষয়টি আমলে রাখতে হবে এ কারণে, কয়েকদিনের সংক্রমণ এবং মৃত্যু হার কিন্তু একই রকম। মৃত্যুর মিছিল কমছে না, সংক্রমণের হারও কমছে না সুতরাং আমাদের এতটা উদাসীন ভাব দেখানো ঠিক নয়। আসলে বিষয়টি আমলে নেওয়া উচিত। যদি উদাসীন হই তাহলে তো আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানছি না, সচেতন থাকছি না। এগুলোর ফলে তো সংক্রমণ বাড়তেই থাকবে। আরও বিপদের মধ্যে পড়ে যাব আমরা।
উদাসীনতার ব্যাপারটি কি ব্যক্তির ক্ষেত্রে হচ্ছে না প্রশাসনিক পর্যায় থেকে হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, উদাসীনতা বা ড্যামকেয়ার বিষয়টি শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের উন্নত দেশেও এই ভাবটি এসে গেছে। আমেরিকার মতো দেশে একই অবস্থা। রাস্তাঘাটও ওইসব দেশে ওপেন। গত সপ্তাহে বার্লিনে কয়েক হাজার লোকের মিছিল হয়েছে। ওরা লকডাউন মানবে না, মাস্ক পড়বে নাম যা খুশি তাই করবে- পৃথিবীর অনেক দেশেই এরকম কিন্তু হচ্ছে। মানুষ কিছুই মানতে চাচ্ছে না। সুতরাং আমাদের দেশের মানুষকে দোষ দিচ্ছি না, সারা পৃথিবীর মানুষই উদাসীন পর্যায়ে চলে গেছে। ইভেন কি লকডাউন পর্যন্ত মানছে না। আমাদের দেশে কেউ লকডাউনের কথা বলছে না, কেউ
দাবিও জানাচ্ছে না। জোন ভিত্তিক চিহ্নিত করা হয়েছিল কিন্তু তাতেও সাকসেসফুল হচ্ছে না। কারণটা হলো কতদিন মানুষকে লকডাউন দিয়ে রাখা যাবে, আপনি যদি গ্যারান্টি দিতে পারতেন যে ১৫ দিন, ১ মাস বা ৬ মাস পর ভাল হয়ে যাবে। তা কিন্তু দেওয়া যাচ্ছে না। তাই মানুষ নিজেকে বন্দি করে আর কতদিন রাখবে? তার তো জীবন-জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ঘরে থেকে আর কতদিন? বসে থেকে খেয়ে যা কিছু ছিল তা প্রায় শেষ। তাই লকডাউনের কার্যকারিতা অনেকটা কমে গেছে, মানুষ মানতে চাচ্ছে না।
তিনি বলেন, লকডাউন করে কতদিন রাখা যায়? জীবন-জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। অর্থনীতির চাকা একদম স্থবির হয়ে যাচ্ছিল। জীবন-জীবিকার স্বার্থে এবং অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে লকডাউন আর হয়তো হবে না এবং জোনভিত্তিক বিষয়টিও মানুষ মানছে না, মানতে পারছে না, মানাতে পারা যাচ্ছে না। প্রশাসন তো চেষ্টা করেছে। তারাও অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। জনগণ মানতে চাচ্ছে না তাই মনে হচ্ছে লকডাউন আর থাকছে না। জনগণ যদি না মানে তাহলে কার জন্য এই দাবি করবেন আপনি।
এ বিষয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে উল্লেখ করে ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, কারও ব্যক্তিগত ব্যাপার না, পদক্ষেপ নিতে হবে প্রশাসন ও জনগণ সবার সমন্বয়ের মাধ্যমে। যদি এই সমন্বয় না থাকে তাহলে তা সাকসেসফুল হবে না। তারপরও আমি জনগণকে বলবো- আমার নিরাপত্তা, আপনার নিরাপত্তা, জনগণের নিরাপত্তা নিজের কাছে। আমার নিরাপত্তার ব্যাপারে আমি যদি সতর্ক না হই, তাহলে তো প্রশাসন পারবে না।
এএইচ/এমবি//