ভ্যাকসিন নিয়ে প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ আশাবাদী (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১০:১৭, ১৩ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ১০:১৮, ১৩ আগস্ট ২০২০
একুশে টেলিভিশনের ‘জানতে চাই, জানাতে চাই’ অনুষ্ঠানে প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
আগস্ট মাস, শোকের মাস। এই শোকের মাসেও নতুন করে আমাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি এবং তার সাথে করোনার মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছি। করোনার এই ক্রান্তিকালে আমরা তাকিয়ে আছি ভ্যাকসিনের আশায়। কবে তৈরি হবে সেই কার্যকরী ভ্যাকসিন। অনেক দেশই করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি করলেও এখনও কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। এ বিষয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত ইউজিসি অধ্যাপক, প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ।
একুশে টেলিভিশনের নিয়মিত আয়োজন ‘জানতে চাই, জানাতে চাই’ অনুষ্ঠানে প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ ভ্যাকসিন নিয়ে বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, যতদিন পর্যন্ত ভ্যাকসিন না আসে ততোদিন পর্যন্ত আমাদের প্রতিকার-প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কার্যত নির্দিষ্ট করে কোন ওষুধপত্র নেই। তাই মৃত্যুর ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই জনগণকে বলা উচিত, স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আমরা যেন উদাসীন না হই। মাস্ক পড়বো, বারবার হাত ধুবো, বাইরে প্রয়োজন ছাড়া যাব না, গেলেও তাড়াতাড়ি ঘরে চলে আসবো। অন্তত মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক। মাস্ক পড়া না হলে জরিমানা করা হবে এরকম একটি বিধি জারি করা উচিত। মাস্ক পড়লে করোনা সংক্রমণ থেকে ৬০ থেকে ৮০ ভাগ পর্যন্ত বেঁচে থাকা সম্ভব।
পৃথিবীর অনেক দেশ আইন করেছে, জরিমানার বিধান করেছে। আমাদের দেশেও এটি করা উচিত। অন্তত এটি করা হলে অনেকটা ঠেকানো সম্ভব হবে। সুতরাং যতদিন ভ্যাকসিন না পাবো ততোদিন পর্যন্ত নিয়ম মেনে চলতে হবে।’
তিনি বলেন, পৃথিবীর ১২০ থেকে ১২৫টি দেশ এর পেছনে মেধা খরচ করছে, অর্থ খরচ করছে, সাইন্টিসরা রিসার্চ করছে। যত দ্রুত সম্ভব আবিষ্কার এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে সাকসেসফুল হচ্ছেন। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ফাইনাল ট্রায়ালে আছে। আমেরিকার মর্ডানার এবং চীনাদের ভ্যাকসিনও এই দৌড়ে এগিয়ে আছে। রাশিয়াও দুই/তিনদিনের মধ্যে ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়বে। আসলে এগুলো আশাপ্রদ খবর, তা স্বীকার করতেই হবে। কার্যকরি একটি ভ্যাকসিনের জন্য আমরাও অপেক্ষা করছি। কার্যকরি একটি ভ্যাকসিন পেলেই আমরা করোনার হাত থেকে বাঁচতে পারবো। এই করোনা পৃথিবী থেকে সহজে যাবে না তাও বোঝা যাচ্ছে না। তাই ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত প্রতিরোধ-প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন খুবই আশাপ্রদ। এটার দুটি অ্যাফেক্টিভ ব্যাপার রয়েছে। এই ভ্যাকসিন একটা দিলে শরীরে ৯০% অ্যান্টিবডি ডেভেলবল্ড করে, আর ১০% এর জন্য দুটি ভ্যাকসিন দিতে হয়। আর এই অ্যান্টিবডির সাথে বডিতে একটি সেল দরকার, যাকে টি-সেল বলা হয়। তারা বলেছে, ১৪ দিনের মধ্যে এই টি-সেল তৈরি হয় যা বডির প্রটেকশনের জন্য দরকার। আর ২৮ দিনের মধ্যে পুরো অ্যান্টিবডি ডেভেলভ করে। সুতরাং এটা আশাপ্রদ খবর। তারা বলছে এটা অক্টোবরের মধ্যে চলে আসবে। আর যদি অক্টোবরে না আসে যদি বছরের শেষ দিকে আসে তবুও এটা আমাদের জন্য একটা ভাল খবর। মর্ডানারটি এ বছরে আসার কথা এবং চীনাদেরটিও ফাইনাল ট্রায়ালে রয়েছে। আগামী দুইএক মাসের মধ্যে বুঝতে পারবো আমরা কতটুকু কার্যকরি ভ্যাকসিন পেলাম।
ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ‘অনেকে বলেন, ভ্যাকসিন যদি বেড় হয়েই যায় তাহলে তো পৃথিবীর বড় বড় দেশ তা কিনে নিয়ে যাবে। আমাদের মতো দেশগুলো আসলে পাবে কি না? আমি মনে করি, এ ব্যাপারে ভয়ের কোন কারণ নেই। আশা করি আমরাও পাবো। তারা তো আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে যে, পৃথিবীর সব দেশ গরীব দেশ কিংবা ধনী দেশ সবাই যাতে পায় সে ব্যবস্থা তারা করবে। অনেকে দাম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন কর্তৃপক্ষ তো বলছে যে, যাদের পার ক্যাপিটা ইনকাম ৪ হাজার ডলারের বেশি তাদের অর্থ দিয়ে কিনতে হবে। আর যাদের আয় কম (যেমন আমাদের দেশের ২ হাজার ডলারের মতো) এরকম দেশ তারা বিনা পয়সায় পাবে। ইভেন টাকা দিয়ে যদি কিনতেও হয় তাদের ভাষায় খুব কম দাম হবে, অত্যন্ত সস্তা। এককাপ কফি খেতে যে টাকা লাগে হয়তো সেরকম টাকাই ভ্যাকসিনের দাম পড়বে। সুতরাং এই খবর খুবই আশাপ্রদ।’
ভ্যাকসিনের বিষয়ে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেখানে কী পলিসি নিবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা যাতে ভ্যাকসিন পাই তার কার্যকরি পদক্ষেপ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কর্মকর্তা, ইভেন প্রশাসনে যারা আছেন তাদের এখন থেকেই নেওয়া উচিত। পৃথিবীতে যেদিনই ভ্যাকসিন আসবে দ্রুততম সময়ে আমাদের দেশে এটা যাতে পেতে পারে, আমাদের জনগণ যাতে পেতে পারে সেই ব্যবস্থা কিন্তু নেওয়া উচিত। আমি আশা করি, সরকার হয়তো বিনাপয়সায় জনগণকে দিবে বা সেই ব্যবস্থাই নিবেন। ভ্যাকসিন সংস্থাগুলো বলছে যে, বেশি পয়সা লাগবে না সুতরাং গর্ভমেন্ট যদি এখন থেকেই কার্যকরি পদক্ষেপ নেয় তাহলে ভ্যাকসিন পাওয়াটা আমাদের জন্য অতোটা কঠিন হবে না। সহজলভ্য হবে বলে আমি মনে করি। এ ব্যাপারে আমি অত্যন্ত আশাবাদী। আর এটা হওয়া উচিত। তাহলে জনগণ আশ্বস্ত হবে, মন্ত্রণালয়ের প্রতি বা প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থাও বাড়বে। এই আস্থাটা কিন্তু আমাদের ধরে রাখতে হবে। সুতরাং আমি মনে করি, এখন থেকে যেন কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আমার বিশ্বাস, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। ওনার তো ইমেজ বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়েছে, তিনি এখন বিশ্ব নেত্রী। যখনই ভ্যাকসিন আসবে তখন উনি যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেন, তাহলে আমি মনে করি ভ্যাকসিন আমরা পেয়ে যাব। এ ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী ‘
এএইচ/এমবি