ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ব্রিটেনে ছড়িয়ে পড়া নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৫৫, ২০ ডিসেম্বর ২০২০

অত্যাবশকীয় সামগ্রীর দোকান ছাড়া আর সব দোকানপাট বন্ধ।

অত্যাবশকীয় সামগ্রীর দোকান ছাড়া আর সব দোকানপাট বন্ধ।

Ekushey Television Ltd.

ব্রিটেনে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের এক করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক দেশ এখন ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বা নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বিবেচনা করছে। নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়াম এরই মধ্যে ব্রিটেনের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। লন্ডন হতে বেলজিয়াম পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিসও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার সরকার ফ্লাইট নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে। ফ্রান্স এবং জার্মানিও একই ব্যবস্থা নেয়ার কথা বিবেচনা করছে।

এই নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এ নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগের পটভূমিতে গতকাল হঠাৎ করেই লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বিরাট অংশ জুড়ে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়।

নতুন ধরনের এই করোভাইরাস সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?
ব্রিটিশ গবেষকরা লন্ডন এবং আশে-পাশের অঞ্চলে যে ভাইরাসের বিস্তার দেখছেন, সেটিকে তারা নিউ ভ্যারিয়েন্ট, অর্থাৎ নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাস বলে বর্ণনা করছেন। এটি যে আগেরটির চেয়ে অনেক বেশি প্রাণঘাতী বা মারাত্মক, সেরকম প্রমাণ তারা এখনো পাননি। আর এটিকে মোকাবেলার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের নতুন টিকা যে ভিন্ন ফল দিচ্ছে, সেটাও তারা বলছেন না।

করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, অন্য যে কোন ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাসের এই নতুন ভাইরাসটিও মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে। তার বৈশিষ্ট্য এবং আচরণে পরিবর্তন ঘটতে পারে। লন্ডন এবং আশে-পাশের অঞ্চলের ভাইরাসটি নতুন করোনাভাইরাসের এরকম এক পরিবর্তিত রূপ বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

যেটি গবেষকদের অবাক করেছে, তা হলো, এই ভাইরাসটি অনেক বেশি সহজে এবং দ্রুত ছড়াচ্ছে। আগেরটির তুলনায় এই নতুন করোনাভাইরাস ৭০ শতাংশ বেশি হারে ছড়াচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারকে যে শুক্রবার আচমকা আবারও কঠোর লকডাউন জারি করতে হলো, তার পেছনে এটাই কারণ। এটি সরকারের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ তৈরি করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা বলছে, এই নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস এখন নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়াতেও নাকি পাওয়া গেছে। এটা নিয়ে তারা তাই ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক স্বীকার করেছেন করোনাভা্ইরাস সংক্রমণ পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল বলে এই কঠোর বিধিনিষেধ জারী করতে হয়েছে। তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এবারের কঠোর লকডাউন দু‌ইমাস ধরে চলতে পারে।

ক্রিসমাসের আগের সপ্তাহে সরকারের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, সরকার পরিস্থিতিকে খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মাত্র কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, ক্রিসমাসের সময় যদি বিধিনিষেধ শিথিল করা না হয়, সেটা হবে অমানবিক এবং তখন তিনি বিধিনিষেধ শিথিল করার কথাই বলেছিলেন। কিন্তু তিনদিনের মাথায়, তাকে সেই পরিকল্পনা শুধু বাদই দিতে হলো না, উল্টো আর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হলো। এর কারণ একটাই, এখানে সংক্রমণ আবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

সংক্রমণের হার বা আর নম্বর, এটি আবারও একের উপরে চলে গেছে। অর্থাৎ যত মানুষ প্রতিদিন সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন, তারা আরও বেশি মানুষের কাছে সেটি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ব্রিটেনে গত এক সপ্তাহে করোনাভাইরাসে মারা গেছে তিন হাজারের বেশি, এক সপ্তাহে নতুন সংক্রমণের শিকার হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার।

সংক্রমণ ছড়াচ্ছে খুবই দ্রুত, বিশেষ করে লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে। আর একারণেই এই অঞ্চলটিতে টিয়ার-ফোর, অর্থাৎ, সর্বোচ্চ মাত্রার লকডাউন জারি করা হয়েছে। এই লকডাউনের মানে হচ্ছে, লোকজনকে তাদের ঘরে থাকতে হবে, কেবল যাদের কাজ বা শিক্ষার কারণে বাইরে যেতে হবে তারা ছাড়া। ঘরে বাইরের কারও আসা নিষেধ।

কেবল অত্যাবশকীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া আর সব বন্ধ রাখতে হবে। ঘরের বাইরে খোলা জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেবল একজন লোকের সঙ্গেই দেখা করা যাবে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা এলাকা ছেড়ে কেউ বাইরে যেতে পারবে না, বাইরে থেকে কেউ আসতেও পারবে না। ফলে এর কারণে ট্রেন, বিমান চলাচল সহ সব ধরণের যাতায়তেই বিঘ্ন ঘটবে।

এ বছরের শুরুতে যে ধরণের কঠোর লকডাউন ইউরোপে দেখা গেছে, লন্ডন এবং আশেপাশের এলাকা এখন আবার কার্যত সেরকম লকডাউনের আওতায় আসলো।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি