ভারত থেকে টিকা রপ্তানিতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই: সেরাম
প্রকাশিত : ১৮:১১, ৪ জানুয়ারি ২০২১
ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইন্সটিটিউট বিবিসিকে জানিয়েছে, তাদের টিকা রপ্তানির ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।
সেরাম ইন্সটিটিউটের জনসংযোগ কর্মকর্তা মায়াঙ্ক সেন দিল্লিতে বিবিসির ইয়োগিতা লিমায়িকে জানিয়েছেন, টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ তাদের টিকা রপ্তানির ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।
তবে কোম্পানিটি এখন অন্য দেশে টিকা রপ্তানির অনুমতি পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, যা পেতে কয়েকমাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে রপ্তানি শুরুর আগেই ভারত সরকারকে ১০ কোটি টিকা দেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে তারা রপ্তানি করতে পারবে না, যেহেতু তাদের রপ্তানির অনুমতি নেই।
বাংলাদেশ আগামী মাসের শুরুতে যে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে সেটি এই সেরাম ইন্সটিটিউটের কাছ থেকেই পাওয়ার কথা। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ হিসেবে পুরো তিন কোটি টিকার জন্য অগ্রিম হিসেবে ৬শ কোটি টাকা সেরামের অ্যাকাউন্টে রবিবার জমাও দেয়ার কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশের সরকার।
সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা রপ্তানি করতে পারবে না এমন খবরে বাংলাদেশে উদ্বেগ তৈরি হবার পর দেশটি ঢাকায় দিল্লির হাইকমিশন এবং দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সাথে সকাল থেকেই যোগাযোগ করছিল।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বিকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, ''ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, যেহেতু বাংলাদেশের টিকা পাওয়ার চুক্তি দুই দেশের সর্বোচ্চ মহলের আলাপ করে হয়েছে, সুতরাং বাংলাদেশ প্রথমে টিকা পাবে। এ নিয়ে কোনরকম নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। তাই চিন্তার কিছু নেই। সেরাম প্রধানের যে বক্তব্যের কথা বলা হয়েছে, সেটা তার ব্যক্তিগত, তা ভারত সরকারের কোন নীতি নয়।''
দুপুরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব আবদুল মান্নান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, টিকার ব্যাপারে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যেহেতু জিটুজি (সরকারের সাথে সরকারের) চুক্তি হয়েছে সেহেতু বাংলাদেশের যথাসময়ে টিকা পেতে কোন সমস্যা হবে না।
মান্নান বলেন, ''আমার এইমাত্র ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, আমরা যে চুক্তি করেছি, সেখানে আর্থিক লেনদেন হয়েছে দুই সরকারের মধ্যে। ভারত যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটা তাদের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে, আমাদের ব্যাপারে না। হাইকমিশন থেকে এটা পরিষ্কার করে দিয়েছে।''
জরুরি সংবাদ সম্মেলনটিতে যোগ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও।
তিনি বলেন ''ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে চুক্তি হয়েছে, তা ব্যাহত হবে না। সকল দেশের জন্য তারা এই বার্তা দিয়েছে যে, আগে ভারতের জন্য হবে, তারপরে অন্য দেশে যাবে। তবে আমরা আশ্বস্ত যে, এটা কোন সমস্যা হবে না, সমাধান হয়ে যাবে।''
''তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়ার পর জানাবে, যে আমরা কবে পাবো। তবে আমরা এখনো আশ্বস্ত থাকতে পারি যে, আমাদের চুক্তি অনুযায়ী আমরা ভ্যাকসিন পাবো।'' তিনি বলেন।
ভারতের দিক থেকে কোন সুনিশ্চিত কোন আশ্বাস পাওয়া গেছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ''এটা যেহেতু আন্তর্জাতিক চুক্তি, সেটাকে সম্মান দেখানো হবে বলে আমরা আশা করি। সেই সঙ্গে সকাল থেকে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আলোচনা হয়েছে। সব বিষয়ে আমরা আশাবাদী। তারা কেউ নেগেটিভ কিছু বলেন নি।''
চুক্তি অনুযায়ী অর্ধেক টাকা, ১২০ মিলিয়ন ডলার পাঠাতে হবে। সেটা বাংলাদেশ এর মধ্যেই পাঠিয়ে দিয়েছে বলে তিনি জানান।
গত দোসরা জানুয়ারি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দেয় ভারতের সরকার। ভ্যাকসিন রপ্তানি নিয়ে এরমধ্যে সেরাম ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ, সৌদি আরব ও মরক্কোর সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে।
চুক্তি অনুযায়ী, ৩রা জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কেনার জন্য ছয়'শ কোটি টাকার বেশি জমা দেয়ার কথা এরমধ্যে জানিয়েছে দেশটি। বিনিময়ে সেরাম ইন্সটিটিউট একটা ব্যাংক গ্যারান্টি দেবে।
এর আগে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছিল যে, চুক্তির ধারা অনুযায়ী তারা যদি আগামী জুনের মধ্যে টিকা দিতে না পারে তাহলে বাংলাদেশে অগ্রিম এই টাকা ফেরত নেবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ টিকা আনার কথা ছিল। চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইন্সটিটিউট ছয়মাসের মধ্যে তিন কোটি টিকা দেবে বাংলাদেশকে। প্রতিমাসে ৫০ লাখ টিকা আসবে।
এসি