করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ল্যাম্বডা নিয়ে চিন্তিত বিজ্ঞানীরা
প্রকাশিত : ০৮:৪৫, ১০ জুলাই ২০২১
করোনাভাইরাসের সর্বশেষ যে ধরনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নজরে এসেছে সেটি হচ্ছে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট। গত বছর দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পেরুতে এই ভ্যারিয়েন্ট সর্বপ্রথম শনাক্ত হয়। ডব্লিউএইচও বলছে, এখনো পর্যন্ত বিশ্বের ২৭টি দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে।
এই ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টকে করোনাভাইরাসের অস্বাভাবিক পরিবর্তন হিসেবে বর্ণনা করছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখে পেরুতে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এরপর গত ১৪ জুন এটিকে ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচও’র গাইডলাইন অনুযায়ী, যখন নতুন কোন ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান পাওয়া যাবে তখন বিষয়টি সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অফিস অথবা আঞ্চলিক অফিসকে জানাতে হবে।
সেক্ষেত্রে যে ব্যক্তির দেহে নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয় তার নাম, ঠিকানা, সময় এবং চিকিৎসার যাবতীয় নথিপত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে দিতে হয়। এছাড়া সেই ভ্যারিয়েন্টের পূর্ণাঙ্গ জেনোম সিকোয়েন্সও করতে হবে।
বর্তমানে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টের প্রতি নজর রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্বের অন্যান্য দেশও নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের প্রতি দৃষ্টি রাখছে। সবাই দেখার চেষ্টা করছে নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট কতটা ছড়াচ্ছে।
ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট কতটা উদ্বেগের!
পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ব্রিটেনে এখনও পর্যন্ত ছয়জনের মধ্যে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এই ছয়জন অন্য দেশ ভ্রমণ করেছেন।
পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড বলছে, ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট গুরুতর কিনা সে সম্পর্কে এখনও কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া এই ভ্যারিয়েন্ট ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ফাঁকি দিতে পারবে কিনা সেটির পক্ষেও কোন প্রমাণ মেলেনি।
ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে নানা আলোচনা রয়েছে।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের মাইক্রোবায়োলজিস্ট নাথানিয়েল ল্যান্ডাউ নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, করোনাভাইরাসের ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হবার কারণ নেই।
তিনি বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট বেশি সংক্রামক কিনা সে সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কোন প্রমাণ মেলেনি।
ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব সম্পর্কে গবেষণা করেছেন পেরুর কেয়িতানো হেরিডিয়া ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজিস্ট পাবলো তুসকায়ামা।
পনেরই জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিল মাসে পেরুতে করোনা ভাইরাসের যতগুলো সিকোয়েন্স করা হয়েছিল তার মধ্যে ৮১ শতাংশের মধ্যে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এছাড়া দক্ষিণ আমেরিকার আরেকটি দেশ চিলিতে ৩১ শতাংশের মধ্যে এই ধরনটি পাওয়া গেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের জেনোম সিকোয়েন্স করা এবং পরবর্তীতে সেটির উপর আরও গবেষণা করার সক্ষমতা কম ল্যাটিন আমেরিকায়। সেজন্য ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে তথ্য না থাকায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মি. তুসকায়মা।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের বর্তমানে যেসব ভ্যারিয়েন্ট আছে সেগুলোর চেয়ে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট খারাপ হবে না বলে আমি মনে করি। কিন্তু এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে তথ্য না থাকার কারণে নানা অনুমান করা হচ্ছে।’
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এএইচ/