বাংলাদেশে ৯৮ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত
প্রকাশিত : ১৯:০১, ৫ আগস্ট ২০২১
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রকাশিত জিনোম সিকোয়েন্সিং ফলাফলে দেখা গেছে, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ৯৮ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত।
বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) জিনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গবেষণার ফলাফলে এই তথ্য তুলে ধরেন। খবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির।
ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপাচার্য জানান, গবেষণায় মোট ৩০০ কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর ন্যাযোফ্যারিনজিয়াল সোয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং’র মাধ্যমে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ।
চলতি বছরের ২৯ জুন থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশব্যাপী রোগীদের উপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। এই গবেষণায় দেশের সকল বিভাগের রিপ্রেজেন্টেটিভ স্যাম্পলিং করা হয়।
তিনি জানান, এই গবেষণায় ৯ মাস থেকে শুরু করে ৯০ বছরের বয়স পর্যন্ত রোগী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩০-৩৯ বছর বয়সের রোগীদের সংখ্যা বেশি। যেহেতু কোনো বয়স সীমাকেই কোভিড-১৯ এর জন্য ইমিউন করছে না, সে হিসেবে শিশুদের মধ্যেও কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকি নেই বলা যাচ্ছে না। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের কো-মরবিডিটি রয়েছে যেমন- ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ডায়াবেটিস তাদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ষাটোর্ধ্ব বয়সের রোগীদের দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হলে সে ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি দেখা গেছে।
কোভিড-১৯ এর জিনোম সিকোয়েন্সিং বিশ্লেষণ গবেষণায় প্রকাশিত তথ্য থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে জানুয়ারি ২০২১ এ ইউকে বা আলফা ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমণের হার বেশি ছিল। পরবর্তীতে মার্চ ২০২১ এর রিপোর্ট অনুযায়ী সাউথ আফ্রিকান বা বেটা ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমণের হার বেশি ছিল। বিএসএমএমইউ’র গত একমাসের ৩০০ স্যাম্পলের জিনোম সিকোয়েন্সিং এ দেখা যায়, মোট সংক্রমণের প্রায় ৯৮ শতাংশ হচ্ছে ইন্ডিয়ান বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এক শতাংশ হচ্ছে সাউথ আফ্রিকান বা বেটা ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমণ, যদিও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় প্রথম ১৫ দিনে এই সংখ্যা ছিল ৩ শতাংশ। একজন রোগীর ক্ষেত্রে মরিসাস ভ্যারিয়েন্ট অথবা নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।
মোট ৩ হাজার রোগীর স্যাম্পল সিকোয়েন্সিং বিশ্লেষণ করে বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক তৈরি করা সম্ভব হবে। করোনা অনেক ক্ষেত্রে বহমান জীবন-যাপনের বাধা তৈরি করলেও জীবন থেমে নেই। অন্যান্য জেনেটিক্স রোগসমূহের উপর গবেষণা কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের নিজস্ব ডাটা তৈরির উদ্যেগ গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করেন উপাচার্য।
তিনি জানান, কোভিড-১৯ এর জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার উদ্দেশ্য কোভিড-১৯ এর জিনোমের চরিত্র উন্মোচন, মিউটেশনের ধরণ এবং বৈশ্বিক কোভিড-১৯ ভাইরাসের জিনোমের সাথে এর আন্তঃসর্ম্পক বের করা এবং বাংলাদেশি কোভিড-১৯ জিনোম ডাটাবেস তৈরি করা। আজকের এই রিপোর্ট বিএসএমএমইউ’র চলমান গবেষণার প্রথম মাসের ফলাফল, পরবর্তী মাসগুলোতে চলমান হালনাগাদকৃত ফলাফল জানানো সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং, টিকা গ্রহীতাদের এন্টিবডিসহ করোনাভাইরাস সংশ্লিষ্ট সকল ধরণের আন্তর্জাতিকমানের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
এসি