সালতামামি: মহামারির লড়াইয়ে ওমিক্রনের চোখ রাঙানি (ভিডিও)
প্রকাশিত : ২৩:৫৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১১:১০, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১
করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম বছরে ব্যাপক প্রাণক্ষয়ের পর কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আশায় বুক বেঁধেছিল বিশ্ববাসী। সেই আশার পালে হাওয়া আসে টিকা আবিষ্কার আর এর জরুরি অনুমোদন। কিন্তু একুশ সালে নতুন এই ভাইরাসে বিশ্ব দেখেছে মৃত্যুর নতুন উচ্চতা।
বিশ্ববাসীকে টিকার আওতায় আনা ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ নিয়ে টালমাটাল, ঠিক সে সময়ই অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, যা ছিল পুরো বিশ্বে আলোচনার বিষয়। ট্রাম্প সরকারের অবসান ঘটিয়ে এ বছরের ২০ জানুয়ারি দেশটির ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন জো বাইডেন। করোনাভাইরাসের অতিরিক্ত সংক্রমণের কারণে অনেকটা সাদামাটাভাবেই অনুষ্ঠিত হয় বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান।
অন্যদিকে ভাইরাসের নতুন ধরন ডেল্টার কারণে মহামারীতে মৃত্যু আর আক্রান্তের গ্রাফ তখনও উর্ধ্বমুখী। সবচেয়ে খারাপ সময় দেখেছে ব্রাজিল। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত তো ছিলই। শুধু প্রাপ্তবয়স্করাই নয় শিশুরাও সমান হারে আক্রান্ত হচ্ছিল এই ভাইরাসে।
আবার এপ্রিলের শুরুতেই ব্রিটিশ রাজ পরিবারে শোকের ছায়া। অসুস্থ অবস্থায় প্রথমে হাসপাতালে ভর্তি, তারপরে মারা যান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপ।
৯৯ বছরের জীবনের ৭৪ বছরই যিনি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনসঙ্গী হিসাবে কাটিয়েছেন। ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে তিনিই কোনও রাজা বা রানির সবচেয়ে দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গী ছিলেন।
এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তখন নির্বাচনী আমেজ। যদিও দেশটিতে তখনও হু হু করে বাড়ছিল কোভিড রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর ঘটনা। এর মাঝেই ৫ মে তৃতীয়বারের মতো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা পরিস্থিতিতে এই শপথ অনুষ্ঠানও হয় স্বল্প পরিসরে।
২০২১ সালের মে মাসে করোনাভাইরাসের আতঙ্কের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আতঙ্ক। ভারতে ছড়িয়ে পড়ে এটি। যদিও চিকিৎসক ও গবেষকদের কল্যাণে দ্রুতই রোগটি সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা ভাঙে দক্ষিণ এশিয়াবাসীর।
বছরের মাঝামাঝিতে ৮ জুন দ্বিতীয় মেয়াদে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন অ্যান্তনিও গুতেরেস। মহাসচিব পদে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই নির্বাচিত হন তিনি।
পর্তুগালের সাবেক প্রেসিডেন্ট ৭২ বছর বয়সী অ্যান্তনিও গুতেরেস ২০১৭ সালে প্রথম জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচিত হন। আর এরপর থেকেই বিভিন্ন সময়ে জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে সোচ্চার ছিলেন তিনি, বিশ্বনেতাদের জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে।
এমন পরিস্থিতিতে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উত্তপ্ত মাস দেখে বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বৈজ্ঞানিক ও নীতিনির্ধারণী সংস্থার এক প্রতিবেদনে জানানো হয় চলতি বছরের জুলাই মাস ছিল পৃথিবীতে এযাবৎকালের রেকর্ড হওয়া সর্বোচ্চ উত্তপ্ত মাস। যা জলবায়ু পরিবর্তনেরই ফল বলে জানান পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। এজন্য বিশ্ব উত্তপ্তকারী বিপজ্জনক গ্যাস নির্গমণ নিয়ে নড়েচড়ে বসেন বিশ্বনেতাদের কেউ কেউ। এজন্য নভেম্বরে জলবায়ু সম্মেলন ঘিরে চলতে থাকে ব্যাপক প্রস্তুতি।
২০২১ সালের শেষের দিকের আরেকটি বড় ঘটনা হল দীর্ঘ ২০ বছর পর আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটে।
আগস্টের শুরু থেকেই দেশটি থেকে সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। সবশেষ আগস্টের ১৬ তারিখ কাবুল দখল করে তালেবান। এই ক্ষমতার পালাবদলে পালিয়ে বাঁচেন দেশটির সাবেক সরকার প্রধান আশরাফ ঘানি।
একদিকে করোনা, অপরদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন পর তালেবানের শাসন, যে কারণে এখন পর্যন্ত অস্থিতিশীল পরিস্থিতে আফগানিস্তানের জনজীবন।
বছর শেষে বড় পরিবর্তন হয়েছে জার্মানির রাজনীতিতেও। ২৭ সেপ্টেম্বর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের দলকে ছোট ব্যবধানে হারিয়ে নির্বাচনে জেতে মধ্য বামপন্থী দল সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ‘এসপিডি’। এর মধ্যদিয়ে অবসান ঘটে ১৬ বছরের মেরকেল যুগের। নতুন চ্যান্সেলর হন এসপিডির ওলাফ শলৎজ।
বর্তমান যুগে মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে আঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকা ফেইসবুক এর নামটিও পরিবর্তন হয়েছে এ বছরই। জাকারবার্গের ফেসবুক এখন ‘মেটা’। মেটার অধীনেই চলছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ।
নভেম্বরের শুরুতে গ্লাসগোয় বসেছিল দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত জলবায়ু সম্মেলন, যেখানে প্রায় দুইশ দেশের প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীকে আসন্ন বিপর্যয় থেকে বাঁচানো। অর্থাৎ যেকোনও মূল্যে কাবর্ন নিঃসরণ কমিয়ে বিশ্বের তাপমাত্রার রাশ টানা।
যদিও বিশ্বনেতাদের দুই সপ্তাহের চেষ্টায় কার্যকর কোনও ফল পাওয়া যায়নি এবারেও। উল্টো এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৩০০ জন।
এদিকে জলবায়ু সম্মেলন শেষ হতে না হতেই বিজ্ঞানীদের সতর্ক বার্তা। অ্যান্টার্কটিকার সবচেয়ে বড় হিমবাহগুলোর একটি নাকি আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে যেকোনও সময় গলে যেতে পারে। আর তাতে নিঃসন্দেহে আরেকটি বড় বিপর্যয়ে পড়বে বিশ্ব।
এছাড়া বছরজুড়ে বন্যা, ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাতসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো হয়েই চলেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
২০২১ এর শেষ ভাগেও নেই ভালো খবর। নভেম্বরের শেষে বিশ্ববাসীকে প্রথম করোনার রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনের তথ্য দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। আবারও লকডাউনসহ করোনা বিধিনিষেধ বাড়তে থাকে দেশে দেশে। এখন ওমিক্রনের সঙ্গে লড়াই করেই আসছে বছর দেখতে চলেছে বিশ্ববাসী।
এসবি/ এএইচএস