কোয়ারেন্টাইন শেষে দেশে ফিরলেন ২৩ বাংলাদেশি
প্রকাশিত : ১৭:৪২, ১৪ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ২৩:২৯, ১৫ মার্চ ২০২০
কোয়ারেন্টাইন শেষে দেশে ফিরলেন ২৩ বাংলাদেশি
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর স্বাস্থ্য ছাড়পত্র নিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে ফিরলেন ২৩ বাংলাদেশি। আজ শনিবার বিকেল ৩টার দিকে ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তারা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
ভারত থেকে আগতদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। তবে একজন শিশুসহ একটি পরিবারও রয়েছে। তবে এদের মধ্যে কেউই করোনায় আক্রান্ত হননি।
দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) ২৩ বাংলাদেশিকে প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল চেকআপ করা হয় এবং তাদের কারও শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। তাই তাদেরকে দেশে প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয় অনুমতি দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, চীনের হুবেই প্রদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানে আটকা পড়া এই বাংলাদেশিদের ভারত সরকারের বিশেষ প্লেনে অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে দিল্লিতে আনা হয় এবং নয়াদিল্লির উপকণ্ঠে চাহালায় কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্পে রাখা হয়।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে বেশ কয়েকজন ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহান থেকে তাদেরকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।
এদিকে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং স্থানীয় আরও ৩টি বিমান সংস্থা নয়াদিল্লির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ভারতে তাদের সব ফ্লাইট স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে বাংলাদেশি নাগরিকদের শনিবার সুষ্ঠুভাবে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশে ফেরত আসার জন্য অপেক্ষায় থাকা এক শিক্ষার্থী।
বিশ্বের ১৩১টি দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এতে নেই কোনও চীনা নাগরিক। শুধু যে প্রাণহানি থেকে মুক্তি মিলেছে তা নয়, উহানসহ দেশটির অন্যান্য অঞ্চলে এই সময়ে নতুন করে কোনও ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। উল্টো সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন নতুন আরও প্রায় ৩ হাজার নাগরিক। যার সংখ্যা বেড়ে ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে।
ফলে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে মৃত্যুর মিছিল ভারি হলেও উন্নতির দিকে এশিয়ার সবচেয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেশটি।
এদিকে, বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসে ইতালি, ইরানসহ অন্যান্য দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এতে সকল প্রতিষেধক যেন অকেজো হয়ে গেছে। কানাডা ও ইসরাইল ভ্যাকসিন আবিষ্কারের বার্তা দিলেও তা হাতে পাওয়া যাবে বছরের শেষ দিকে। ততোদিনে চলমান অবস্থা অব্যহত থাকলে গোটা বিশ্বই মৃত্যুকূপে পরিণত হবে।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বৈশ্বিক জরুরি অবস্থার পর মহামারি ঘোষণার করেছে। তারপরও নিয়ন্ত্রণের বাহিরে করোনা সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বের নতুন করে ৮ হাজারেরও বেশি মানুষের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যার সবেচেয় বড় ভুক্তভোগী ইরোপীয় রাষ্ট্র ইতালি।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে আজ শনিবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, ‘বিশ্বের অন্তত ১১৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি এ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে নতুন করে ৪২৫ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৩৭৩ জনের। বর্তমানে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ লাখ প্রায় ৪১ হাজার মানুষ।
ভাইরাসটিতে মূলভূখন্ড চীনে অপরিবর্তীত রয়েছে মৃতের সংখ্যা। সেখানে শুক্রবার পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ হাজার ১৭৬ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৮১৩।
অপরদিকে, চীনের বাহিরে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ইতালিতে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে আরও ২৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দিন ১৮৯ জনের মৃত্যু হয়। এরও আগের দিন ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২৬৬ জনের প্রাণহানি ঘটল। যা উৎপত্তিস্থল চীনের বাহিরে সর্বোচ্চ।
এদিকে, মৃতের চেয়ে কয়েকগুণ লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সবধরনের সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত দেশটিতে দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্তের মিছিল। যেখান থেকে অনেকেই লাশ হয়ে ফিরছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার নাগরিক। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আর অবরুদ্ধটি দেশটিতে ছয় কোটি মানুষকে নেয়া হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে।
ভয়বাহ এমন পরিস্থিতি ইউরোপের অন্যান্য দেশেও। যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে ফ্রান্স, স্পেনসহ অন্যান্য দেশগুলোয় দ্রুত সংক্রমণ বিস্তার করায় ইউরোপকে ‘মহামারির কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যেখানে লন্ডনে ২ বাংলাদেশির মৃত্যুর পাশাপাশি স্পেনে ৮ বাংলাদেশি মরণ এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
থেমে নেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানও। ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫১৪ জন মানুষ মারা গেছেন। যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারান ৮৫ জন। আক্রান্ত সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। এরপরই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। তবে সেখানে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে করোনা। এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের দেশে প্রায় ৮ হাজার মানুষ করোনায় ভুগছেন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৬৭ জন।
এদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ভারতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৩ মার্চ) দিল্লির এক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই নারীর বয়স ৬৬ বছর।
এনএস/