ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

আরও একটি দুর্বল বছর হতে যাচ্ছে ২০২০: অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস

সিনজাত রহমান সানি 

প্রকাশিত : ১৬:০১, ১৫ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ২০:৪৩, ১৫ মার্চ ২০২০

বিশ্বের অন্তত ১৩২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। যার প্রভাব ইতিমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। অর্থনীতিতে এ ভাইরাসের প্রভাব ঠিক কতটা বিস্তার করবে তা নির্ভর করছে ভাইরাসটি চীনসহ পুরো পৃথিবীতে কতটা সংক্রমণ ছড়ায় এবং তা কতটা দীর্ঘ হয় তার ওপর।

করোনার প্রভাব ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল ছাড়াও প্লাস্টিক খাত, ওষুধ শিল্প ও খুচরা যন্ত্রপাতির বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। 

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃহৎ আকারে। শুধু চীন থেকেই বছরে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। কিন্তু করোনায় রুখে গেছে সে বাণিজ্য-সম্পর্ক। যা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। 

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘চীনাদের কারিগরি সহযোগিতায় আমাদের বড় প্রকল্পগুলো হচ্ছে। তাদের অবাধ চলাফেরা না করতে পারা ও ছুটিতে থাকার কারণে প্রকল্পের কাজ বাঁধাগ্রস্ত হবে এটাই স্বাভাবিক।’

পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের কোনও সম্ভবনা আছে কী-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা একটা বদ্ধমূল ধারণা। কোনও দেশের রফতানি সাময়িক দুই-তিন মাসের ওপর নির্ভর করে না। সাময়িক সময়ের জন্য কাজ পেলেও দীর্ঘ সময়ে কাজ পাবে বিষয়টা অবান্তর।‘

তিনি বলেন, ‘একটা দেশের শিল্প কারখানা অন্য দেশের কাঁচামালের ওপর নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ যারা চাইনিজ মেশিন, কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল ছিল তাদেরকে নতুন করে বাজার খুঁজতে হবে, যদি এটা (করোনা ভাইরাস) দীর্ঘ মেয়াদী হয়। এই সময়ের মধ্যে অনেক দেশের শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। যার ফলে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এয়ারলাইন্সের ব্যবসাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।’

অধ্যাপক হামিদ বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে প্লাস্টিক খাত, ওষুধ শিল্পে এর প্রভাব পড়েছে। শিল্প কারখানাগুলোর যদি পর্যাপ্ত মজুদ না থাকে তাহলে পণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, নতুন করে বাজার খোঁজা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, এতে করে কাঁচামালে ও পরিবহন খরচ বেশি লাগবে। এছাড়াও বাজারে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট ঘটাতে পারে, সরকারকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ, তাই এটা একবার প্রবেশ করলে আটকানো কঠিন হয়ে যাবে। এটা খুব সহজেই ছড়াচ্ছে, আমাদের সচেতনতাও কম। তাই মানুষের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পোর্ট ও বিমানবন্দরে আরও নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।’

এছাড়াও জনগণকে করোনা ভাইরাস সর্ম্পকে অবিহিত করতে হবে। পারিবারিকভাবে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে জানাতে হবে। মাস্ক ব্যবহার, ঘন ঘন পানি খাওয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। 

এদিকে দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ‘এমনিতেই আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা নেই। তার ওপর চীনা সহায়তার বড় প্রকল্পে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা আটকে পড়লে সেটা দুশ্চিন্তারই কারণ। আর সময় মতো কাজ না এগোলে প্রকল্প ব্যয় বাড়বে বা বাড়ানোর অজুহাত তোলা হতে পারে।

অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস বলছে, অর্থনৈতিকভাবে আরও একটি দুর্বল বছর হতে যাচ্ছে ২০২০ সাল।’

এআই/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি