করোনা আতঙ্কে আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা
প্রকাশিত : ১২:৪৪, ১৯ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৪:২১, ১৯ মার্চ ২০২০
ভারতের রাজধানী দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে এক ব্যক্তিকে ভর্তি করিয়েছিলেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সন্দেহ ছিল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ। তার দেহরসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তির কিছুক্ষণের মধ্যেই আটতলার জানলা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
দেশটিতে করোনা-সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫১। রাজ্যসভায় লিখিত জবাবে দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন বলেছেন, বিদেশে ২৭৬ জন ভারতীয় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২৫৫ জন আছেন ইরানে, ১২ জন সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে, ৫ জন ইতালিতে, হংকং, কুয়েত, রোয়ান্ডা এবং শ্রীলঙ্কায় ১ জন করে।
গতকাল বুধবার সেনাবাহিনীতে প্রথম করোনা-সংক্রমণ ধরা পড়ার পরে সব বাহিনীকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করতে বলেছে কেন্দ্র। ‘যুদ্ধের’ প্রস্তুতি অবশ্য চলেছে দেশ জুড়েই। দিল্লি সরকার এখনও পর্যন্ত গণপরিবহণের ৭ হাজার ৮৭৭টি গাড়ি জীবাণুমুক্ত করেছে। রোজ সকালে-বিকালে দুই শিফটে নিখরচায় দেওয়া হচ্ছে এই পরিষেবা। এর মধ্যে পড়ছে অটোরিকশাও। সংশ্লিষ্ট গাড়িকে ‘জীবাণুমুক্ত’ শংসাপত্রও দেওয়া হচ্ছে।
দিল্লির পরিবহন মন্ত্রী কৈলাস গহলৌত বলেন, গণপরিবহণের গাড়ির মালিক ও পরিচালকদের অনুরোধ, রোজ গাড়ি জীবাণুমুক্ত করিয়ে নিন, যাতে আমরা সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারি।
উপরাজ্যপাল অনিল বৈজলের সঙ্গে আজ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, দিল্লির কিছু কিছু অফিস আপাতত বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে আগামীকাল। তিহাড় জেলের বন্দিদের সঙ্গে পরিজনদের সাক্ষাৎ করাও আপাতত বন্ধ থাকছে।
মহারাষ্ট্র সরকার জানিয়েছে, রাজ্যের সমস্ত সরকারি অফিস ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ করবে। কর্মীরা রোটেশনে এক দিন অন্তর অফিসে আসবেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর, রাজ্যের সমস্ত বাসে ৫০ শতাংশ যাত্রী কমাতে বলা হয়েছে। বাসে দাঁড়িয়ে যাওয়া যাবে না। লোকাল ট্রেনের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে। রাজ্যবাসীকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোতে বারণ করে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বলেছেন, গণপরিবহণ বন্ধ হচ্ছে না। কিন্তু মানুষ যদি সংযত না থাকেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়াও বাইরে ঘোরাঘুরি করেন, সে ক্ষেত্রে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
পশ্চিমবঙ্গসহ ১৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ছড়িয়েছে করোনা। আজই কাশ্মীর উপত্যকায় প্রথম সংক্রমণের খবর এসেছে। সৌদি আরবে উমরাহ করে ফেরার পরে শ্রীনগরের খানিয়ার
এলাকার ৬৭ বছরের এক বৃদ্ধার শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। আগামীকাল থেকে কিছু বিধিনিষেধ চালু হচ্ছে শ্রীনগরে।
কেন্দ্রের হিসাবে, আক্রান্তদের মধ্যে ২৫ জন বিদেশি রয়েছেন। দেশ জুড়ে আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ৫ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ নজরদারিতে রয়েছেন। মথুরার হাসপাতালে করোনা-আক্রান্ত সন্দেহে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তি কাউকে কিছু না-জানিয়ে বাড়ি চলে যান। সম্প্রতি মুম্বাইয়ে তিনি এক বিদেশির সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে জানার পরেই তাকে কে ডি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করে দেহরসের নমুনা নেওয়া হয়েছিল। ম্যাজিস্ট্রেট মনোজ কুমার জানান, ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ফিরতে বলা হয়েছে। অন্যথায় এফআইআর হবে।
গোটা দক্ষিণ ভারতই কার্যত তালাবন্ধ অবস্থার দিকে এগোচ্ছে। কেরালা, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানায় সমস্ত স্কুল বন্ধ। বন্ধ শপিং মলও। কেরালায় সমস্ত সরকারি বাস জীবাণুমুক্ত না-করা পর্যন্ত সেগুলো চালানো হবে না। আমজনতাকে ধর্মস্থানে না-আসতেও অনুরোধ করেছে সরকার।
করোনা-প্রতিরোধ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির টুইট, আমাদের সরকার সুচিন্তিত পদক্ষেপটাই করতে পারেনি। দেশকে এর বিরাট মূল্য দিতে হবে।
একে//