শিবচরের ইতালিফেরত প্রবাসী যেভাবে ছয়জনকে সংক্রমিত করেন
প্রকাশিত : ১৮:২০, ২৩ মার্চ ২০২০
লকআউটের পর শিবচর। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে ৩৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত চিহ্নিত হয়েছেন, তার সাতজনই একটি পরিবার থেকে এসেছেন। এরা মাদারীপুরের শিবচরের একজন ইতালিফেরত প্রবাসীর পরিবারের সদস্য এবং শ্বশুরপক্ষের আত্মীয়স্বজন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশফেরতদের জন্য জারি করা স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ লঙ্ঘণ করে অসতর্ক চলাফেরার মাধ্যমে ওই ব্যক্তি এতগুলো মানুষকে সংক্রমিত করেছেন বলে জানিয়েছেন একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
শিবচরে এই সংক্রমণের শুরু হয় দুজন ইতালিফেরত প্রবাসীর মাধ্যমে। এই দুজন মূলত বন্ধু। প্রথমেই এদের দুজনকে কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
পরে এদের আত্মীয়স্বজনকে পরীক্ষা করে দেখা যায়, একজনের বাবা, স্ত্রী, দুই সন্তান, শ্বাশুড়ি এবং শ্যালকের স্ত্রীও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। এদের মধ্যে শ্বাশুড়ি, শ্যালকের স্ত্রী এবং ইতালিফেরত একজন এখন মাদারিপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আর বাকী পাঁচজন, অর্থাৎ ইতালিফেরত অন্য প্রবাসী, তার বাবা, স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে আসা হয়েছে ঢাকায়।
জানা যায়, শিবচরেই চলতি মাসে প্রায় সাতশ’ প্রবাসী ফিরেছেন। শিবচরের সংক্রমণের তথ্য দিয়েছেন, সেই কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষজনকে ঘরে আটকে রাখাটাই তাদের জন্য সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আজকেরই একটি উদাহরণ দিয়ে বলছেন, ‘এক বাড়িতে গিয়েছি, সে বাড়ির সবাই হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। কিন্তু ঢুকে দেখি সেখান থেকে একজন ফেরিঅলা বের হচ্ছেন। বাড়ির সবাই ওই ফেরিঅলার কাছ থেকে কেনাকাটা করছেন।’
যে ব্যক্তিটি ছয়জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছেন তার সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, তিনি গত ৭ মার্চ বাংলাদেশে ফেরেন। এর একদিন পরেই বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্তের খবর প্রকাশ হয়।
এই খবর প্রকাশ হবার পরও ইতালিফেরত ওই ব্যক্তি তার বাড়ির এবং শ্বশুরপক্ষের আত্মীয়দের সঙ্গে মেলামেশা অব্যাহত রাখেন। ১১ মার্চ ওই ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর তিনি মাদারিপুর চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকায় আসেন। পরীক্ষায় তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হন।
সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকা থেকে প্রতিনিধিদল শিবচরে যায় এবং তার পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়। কিন্তু এর আগেই এই ভাইরাস তাদের শরীরে ছড়িয়ে যায়। ধীরে ধীরে পরিবারের বাকী সদস্যদের মধ্যেও উপসর্গ দেখা দেয় এবং তারা একে একে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করা হয়।
এই পরিবারটি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত চিহ্নিত হবার পরেই সরকারিভাবে শিবচরকে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত এই লকডাউন চলবে। এ সময়ের মধ্যে শিবচর উপজেলায় থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না এবং সেখান থেকে বেরও হতে পারবেন না।
ইতালি থেকে আসা এই দুইজন ছাড়া সরকারি হিসেব অনুযায়ী শুধু শিবচরে ৬৮৪ জন লোক বিদেশ থেকে এসেছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই ১৪ দিন পার করেছেন হোম কোয়ারান্টাইনে।
এএইচ/