করোনায় ১৯৫ দেশে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ১৬ হাজার
প্রকাশিত : ১১:৪১, ২৪ মার্চ ২০২০
প্রাণঘাতি করোনায় কাঁপছে বিশ্বের ১৯৫টি দেশ। এর মধ্যে উৎপত্তিস্থল চীনের বাহিরে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা ইউরোপ ও আমেরিকায়।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটির প্রকোপে নতুন করে আরও ১ হাজার ৯৬৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যার বড় একটি অংশ ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে করোনার থাবায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ হাজার ৫৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে, আক্রান্তের তালিকায় নতুন করে আরও ৮টি দেশের নাম যুক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে সবশেষ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে প্রথমবারের মতো গতকাল সোমবার দুইজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।
ফলে, প্রতিনিয়ত আক্রান্তের তালিকা ভারি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৬৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ২ হাজার ৪২৯ জন।
আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এ খবর জানিয়েছে।
গত চারদিন স্থিতিশীল থাকার পর আবারও আক্রান্ত ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে উৎপত্তিস্থল চীনে। দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৮ জন। আর আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৭ জন। ফলে সবশেষ সংক্রমণটিতে ভুগছেন ৮১ হাজার ১৭১ জন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে পৌঁছেছে ২ হাজার ২৭৭ জনে।
চীনের বাহিরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহতা অবস্থায় ইতালি। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে প্রতিদিনই সেখানে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। যেখানে নতুন করে ৬০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৮ জনে।
নতুন করে ৪ হাজার ৭৮৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন। আর এ নিয়ে ইতালিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৯২৭ জনে। তবে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাত হাজার ৪৩২ জন। প্রাণ হারাদের মধ্যে ২০ জন চিকিৎসকও রয়েছেন।
ইতালির পরই আক্রান্তের দিক থেকে স্পেনকে ছাড়িয়ে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৪১১ ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৬ হাজার ১৪৫ জন, যেখানে নতুন করে প্রাণ গেছে ২৯ জনের। এতে করে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৮২ জনে দাঁড়িয়েছে।
এরপরই ইউরোপের দেশ স্পেন। দেশটিতে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার ১৩৬ জন। প্রাণহানি ঘটেছে আরও ৫৫৫ জনের। এ নিয়ে সেখানে মারা মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৩১১ জনের।
এদিকে জার্মানিতে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে গত ২৪ ঘণ্টায়। সেখানে নতুন করে ২৬ হাজার ব্যক্তির শরীরে সংক্রমণটি ধরা পড়েছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার পেরিয়েছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২৩ জনে।
এরপরই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। দেশটিতে প্রাণঘাতি ভাইরাসটিতে নতুন করে ১২৭ জনের প্রাণ গেছে। এ নিয়ে ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৮১২ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ হাজার ৪৯।
এরপরই ফ্রান্স। ইউরোপের এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রাণহানির ঘটেছে ৮৬০ জনের। আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮৫৬ জনে।
এছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত-৯ হাজার ৩৭ জনের বিপরীতে মৃত্যু হয়েছে ১২০ জনের, যুক্তরাজ্যে ৬ হাজার ৬৫০ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ৩৩৫ জন। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ৮ হাজার ৭৯৫ নাগরিক, সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ১২০ জন, নেদারল্যান্ডসে ৪ হাজার ৭৪৯ জনের বিপরীতে মারা গেছেন ২১৩ জন।
এদিকে, প্রাণঘাতি ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ভারতজুড়ে চলমান কারফিউয়ের মধ্যদিয়েই বেড়েই চলেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে রেকর্ড সংখ্যক শতকের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫শ জনে পৌঁছেছে। মারা গেছেন এখন পর্যন্ত ১০ জন। সবশেষ পশ্চিবঙ্গে মঙ্গলবার সকালে একজনের মৃ্ত্যু হয়।
কেউ মারা না গেলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে শ্রীলংকায়। সেখানে এখন পর্যন্ত ৯৭ জনের দেহে ভাইরাসটির সন্ধান মিলেছে। তাদেরকে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন দেশটির কিংবদন্তি ক্রিকেটার সাঙ্গাকারা।
ভয়াবহ অবস্থার দিকে হাটছে পাকিস্তান। দেশটিতে নতুন করে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। এ নিয়ে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮৭৫ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন।
প্রকোপ থেমে নেই দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ বাংলাদেশেও। সংখ্যায় কম হলেও প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন আরও একজন। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ জনে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ জন।
করোনার সন্দেহে আইসোলেশনে থাকা এখন পর্যন্ত মোট ৫ জন সুস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
গত এক মাসে বিদেশ থেকে দেড় লাখের বেশি মানুষ দেশে ফিরলেও কোয়ারেন্টাইনে আছেন মাত্র ১৫ হাজারের মতো। এর মধ্যে অনেকে আবার মানছেন না কোয়ারেন্টাইনের শর্ত। ফলে, যেকোনো সময় ভাইরাসটি ব্যাপক বিস্তার করতে পারে।
অন্যদিকে, চলমান পরিস্থিতিতে বন্ধ করা হয়েছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেকোনো সমাগম। কয়েকটি জেলায় বন্ধ করা হয়েছে দূরপাল্লার বাস যাতায়াত। বন্ধ রয়েছে সারাদেশের বার ও সারাদেশের সুপারমার্কেটগুলো। সমালোচনার মুখে স্থগিত করা হয়েছে চট্টগাম সিটিসহ ২টি আসনের উপ-নির্বাচন।
আর সবশেষ করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সতর্কতা তৈরিতে আজ মঙ্গলবার থেকে মাঠে নামছে সশস্ত্রবাহিনী। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে তারা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে এ ক্ষেত্রে সহায়তা করবেন তারা।
এআই/