সারাবিশ্বে ২১ হাজারের বেশি প্রাণ কাড়ল করোনা
প্রকাশিত : ১১:৩৬, ২৬ মার্চ ২০২০
বিশ্বের দুইশরও বেশি দেশে ছেয়ে গেছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস। সংক্রমণ রোধে সবধরণের চেষ্টা করেও ঠেকানো যাচ্ছে না প্রকোপ। উল্টো প্রতিদিন আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন কোনো দেশ। এতে করে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা, ভারি হচ্ছে লাশের সারি।
মহামারি আকার ধারণ করা ভাইরাসটিতে ভয়াবহ রুপ দেখছে ইউরোপসহ অন্যান্য মহাদেশের মানুষ। জনজীবন থেকে শুরু করে বিশ্বের অর্থনীতির চাকার মুখ থুবড়ে পড়েছে করোনায়। যার ফলে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মহামন্দার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটি নতুন করে প্রাণ কেড়েছে ২ হাজার ৩৮৯ জনের। যার অধিকাংশই ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে করোনার থাবায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১ হাজার ২৮৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে, কয়েকগুণ বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি নতুন করে ৪৮ হাজার ৪৬১ জনকে সংক্রমিত করেছে। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৭১ হাজার ৩৫ জনে পৌঁছেছে। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ২১৮ জন।
বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এ খবর জানিয়েছে।
আক্রান্তের দিক থেকে উৎপত্তিস্থল চীন শীর্ষে থাকলেও প্রাণহানিতে সবার ওপরে ইউরোপের দেশ ইতালি। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্ত ৫ হাজার ২১০ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত সংখ্যা বেড়ে ৭৪ হাজার ২৮৬ জনে পৌঁছেছে।
অপরদিকে, পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা। নতুন করে দেশটিরে ৬৮৩ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। ফলে, করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর দেশ ইতালিতে বর্তমানে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৭ হাজার ছাড়িয়েছে।
ইতালির পথেই হাটছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন। দেশটিতে ভাইরাসটি থাবায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এতে গোটা স্পেন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষ। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ হাজার ৫১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। যেখানে মারা গেছেন ৩ হাজার ৬৪৭ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৬৫৬ জনের।
সময় যত গড়াচ্ছে ইউরোপের দেশটিতে করোনার তাণ্ডব ততই বেড়ে চলছে। দেশজুড়ে লকডাউন জারি করায় ৪ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ এখন গৃহবন্দি রয়েছেন।
অপরদিকে, ট্রাম্পের দেশে হু হু করে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর খ্যাত দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। এতে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে ৬৮ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হয়েছে আরও ২৪৭টি প্রাণ। ফলে সেখানে এখন পর্যন্ত প্রাণহানি ১ হাজার ২৭ জন।
এমন অবস্থা চলতে থাকলে ইতালির ন্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বলা হয়, ‘করোনার আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে দেশটি।’
এদিকে জার্মানিতে প্রাণহানি তেমনটা না হলেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। দেশটিতে নতুন করে একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি মানুষ। এতে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৭ হাজার ৩২৩ জন। মারা গেছেন আরও ৪৭ জন। এ নিয়ে ইউরোপের দেশটিতে ২০৬ জনের মৃত্যু হল।
এরপরই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। দেশটিতে প্রাণঘাতি ভাইরাসটিতে নতুন করে ১৪৩ জনের প্রাণ গেছে। এ নিয়ে ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৭৭ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ হাজার ১৭।
ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল ততটা প্রকোপ না হলেও একেবারেই পিছিয়ে নেই ফ্রান্স। ইউরোপের এই দেশটিতে আরও ২৩১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ। ফলে, ভাইরাসটি এখন পর্যন্ত প্রাণ কেড়েছে ১ হাজার ৩৩১ জনের। আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ২৩৩ জনে।
এছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত-৯ হাজার ১৩৭ জনের বিপরীতে মৃত্যু হয়েছে ১২৬ জনের, যুক্তরাজ্যে সাড়ে ৯ হাজার আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ৪৬৫ জন। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ১০ হাজার ৮৯৭ নাগরিক, সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫৩ জন, নেদারল্যান্ডসে সাড়ে ৬ হাজার জনের বিপরীতে মারা গেছেন ৩৫৬ জন।
এদিকে, প্রাণঘাতি ভাইরাসটির বিস্তার রোধে নতুন আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ২১ দিনের জন্য পুরো ভারতজুড়ে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে দেশব্যাপী কারফিউয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নাগরিকদের মাঝে সচেতনতার অভাবে বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ফলে, কঠোরতার দিকে যেতে হয় তাকে।
তারপরও ভারতে থেমে নেই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। যেখানে নতুন করে ১২১ জনের শরীরে ভাইরাসটির সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫৭ জনে। মারা গেছেন এখন পর্যন্ত ১২ জন।
অন্যদিকে, ভয়াবহ অবস্থার পথে পাকিস্তান। দেশটিতে নতুন করে ৯১ ব্যক্তির দেহে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৩ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন।
প্রকোপ থেমে নেই দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ বাংলাদেশেও। সংখ্যায় কম হলেও প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কেউ আক্রান্ত না হলেও একজন মারা যাওয়ার খবর দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
সরকারের দেয়া তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ জন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ জন। তবে অনেকের ধারণা করোনার আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও পরীক্ষার অভাবে তাতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে, গত এক মাসে বিদেশ থেকে দেড় লাখের বেশি মানুষ দেশে ফিরলেও কোয়ারেন্টাইনে আছেন মাত্র ২০ হাজারের মতো। এর মধ্যে অনেকে আবার মানছেন না কোয়ারেন্টাইনের শর্ত। ফলে, যেকোনো সময় ভাইরাসটি ব্যাপক বিস্তার করতে পারে।
অন্যদিকে, চলমান পরিস্থিতিতে বন্ধ করা হয়েছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেকোনো সমাগম। কয়েকটি জেলায় বন্ধ করা হয়েছে দূরপাল্লার বাস যাতায়াত। বন্ধ রয়েছে সারাদেশের বার ও সারাদেশের সুপারমার্কেটগুলো। সমালোচনার মুখে স্থগিত করা হয়েছে চট্টগাম সিটিসহ ২টি আসনের উপ-নির্বাচন। করোনার বিস্তার রোধে সতর্কতা তৈরিতে মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে তারা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে এ ক্ষেত্রে সহায়তা করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এতে করোনার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও গতকাল লাখ লাখ মানুষ দেশের বাড়িতে ফিরে যান। সংকট মোকাবিলায় গণপরিবহন, বাস ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপরও অনেককে পিকআপ ভ্যান ও কিংবা মালবাহী ট্রাকে করে বাড়িতে ফিরতে দেখা যায়।
এআই/