ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

করোনা প্রতিরোধে বেরোবি ও ওয়েস্টার্ন সিডনির যৌথ সমীক্ষা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:২০, ১ এপ্রিল ২০২০

Ekushey Television Ltd.

জনসচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মিত হাত ধোয়া, হোম কোয়ারেন্টাইন ও চলমান লকডাউন (সরকারি নির্দেশনা) এর মাধ্যমে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব। 

ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং ওয়েস্টার্ন সিডনী ইউনিভার্সিটির এক যৌথ সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। 

বুধবার (১ এপ্রিল) সকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি), রংপুর-এর ঢাকাস্থ শ্যামলী লিঁয়াজো অফিসে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরেন সমীক্ষাটির চিফ ইনভেস্টিগেটর এবং বেরোবি ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও। মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহযোগী ইনভেস্টিগেটর ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগরিকালচার এন্ড টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর আবির, সহযোগী গবেষক কাজী ফাইজুজ সালাহীন, ত্বহা হুসাইন এবং মো. হাবিবুর রহমান।
  
সমগ্র বিশ্ব আজ নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিপর্যস্ত। সামগ্রিকভাবে এ গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে কোভিড -১৯ এর জ্ঞান এবং উপলব্ধি পর্যবেক্ষণ করা। কনভেনিয়েন্ট স্যাম্পলিং পদ্ধতির সহায়তায় এ গবেষণাটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম (সোসাল মিডিয়া) ব্যবহার করে একটি ক্রস সেকশনাল সমীক্ষা পরিচালনা করে যা ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এবং স্কুল অব সায়েন্স, ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া দ্বারা পরিচালিত হয়। এখানে বলা বাহুল্য যে, পরিসংখানের যথার্থতা বিষয়কে মাথায় রেখে আমরা প্রাথমিকভাবে এ সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ৩৮৫ জনে সীমাবদ্ধ রাখি যার মধ্যে অসম্পূর্ণ প্রতিক্রিয়াগুলি অপসারণের পরে ৩২২ টি উত্তরমালাকে আমরা গ্রহণ করেছি। ৩২২ জন উত্তরদাতাদের মধ্যে ৫০.৬% ছিলেন পুরুষ। ৫৯.৩% অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সের মধ্যে এবং ৪৭.২% অংশগ্রহণকারী ব্যাচেলর ডিগ্রি বা সমমানের শিক্ষা সমাপ্ত করেছেন। উত্তরদাতাদের ৮৮.২% মানুষ মুসলিম ধর্মে বিশ্বাসী। অংশগ্রহণকারীদের ৫৮.৪% এর ধর্ম সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এবং ৫১.২% অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন যে তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস র্দুযোগ সময়ে তাদের শক্তি এবং আত্নবশ্বিাস দেয়।

বেশির ভাগ উত্তরদাতারা (৯৯.৩%) বলেছেন যে তারা করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) রোগের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে সচেতন। গবেষণা অংশগ্রহণকারী (৪১.৯%) (কভডি-১৯) সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছেন ফেসবুক এবং টুইটারের মতো সামাজিক মিডিয়াতে পোস্ট এবং ভিডিও থেকে, ২৮.৬% সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠানগুলি থেকে। অন্যদিকে WHOএবং CDC (Centre for Disease Control) এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটগুলি থেকে ২১.৭% মানুষ (কোভিড-১৯) সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করছেনে। প্রায় ৯৪.৭% অংশগ্রহণকারী মনে করেন যে করোনাভাইরাস (কভিড -১৯) প্রাদুর্ভাব বিপজ্জনক। প্রায় অর্ধেক (৫৩.৯%) মনে করেন যে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলি করোনভাইরাস রোগ (কোভিড -১৯) প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে যথেষ্ট কাজ করে যাচ্ছে এবং ৪১% উত্তরদাতা বলেছেন যে তারা করোনাভাইরাস রোগের (কভিড -১৯) প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে স্পষ্ট উত্তর পেয়েছেন। ৮৫.১% উত্তরদাতা মনে করেন করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) নিয়ন্ত্রণে হাত ধোয়া জরুরি। 

করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) নিয়ন্ত্রণে মাস্ক ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে ৬৮% অংশগ্রহণকারী মাস্ক পরিধান করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে ৪৬.৬% মনে করে N95 মাস্কটি করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে খুব ভাল কাজ করে। অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকেরও বেশি (৫৪%) মনে করে যে অ্যান্টিবায়োটিকগুলি করোনভাইরাস রোগ (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব রোধে কার্যকর নয়। এছাড়াও, ৬০.৬% অংশগ্রহণকারী বলেছেন করোনাভাইরাস রোগের (কোভিড-১৯) চিকিৎসার জন্য কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ ও ভ্যাকসিন নেই। তবে বেশিরভাগ উত্তরদাতারা (৪৮.৮%) বিশ্বাস করেন যে তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও পরিবেশে কভিড -১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।

কোভিড -১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার প্রতিউত্তরে অংশগ্রহণকারীদের ৩৫.১% বলেন যে তাদের সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি কম, ৩৯.৮% বলেছেন তারা মাত্মকভাবে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম এবং উত্তরদাতাদের ৪৬% বলেছেন যে তাদের এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মারা যাওয়ার ঝুঁকি খুব কম। তবে তাদের বেশিরভাগ (৬৯.৯%) কোভিড-১৯-এর কারণে চিন্তিত বলে মন্তব্য করছেনে। কোভিড-১৯ এর কারণে আমাদের গবেষণার সময় উত্তরদাতাদের বেশির ভাগ (৫৭.৫%) স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন বলে জানিয়েছেন। আমরা উত্তরদাতাদের কয়েকজনকে হোম কোয়ারেন্টাইন অনুভূতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। যাদের ২৬.৪% দৃঢ়ভাবে সম্মত যে তারা কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় উদ্বিগ্ন, শঙ্কিত এবং ভীত। ৫৭.৮% দৃঢ়ভাবে সম্মত হন যে পৃথকীকরণ (কোয়ারেন্টাইন) ও লক ডাউন প্রয়োজনীয় এবং যুক্তিসঙ্গত ছিলো, ২৬.১% জানিয়েছে যে তারা পৃথকীকরণ সম্পর্কে নার্ভাস ছিল, ২৪.২% বলেন যে তারা হোম কোয়ারেন্টাইন এর কারণে বিরক্ত। ৩৬% উত্তরদাতারা সর্বশেষ সাত দিনে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত  বিষয়গুলিতে প্রতিদিন সংবাদ প্রচার, নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করা, কথোপকথন ও চিন্তাভাবনা ইত্যাদির মাধ্যমে ১-৩ ঘন্টা ব্যয় করেছেন বলে মনে করেন। কোভিড -১৯ বিষয়ে মিডিয়া কভারেজ সম্পর্কে উত্তরদাতাদের ৩৮.২% বলেছিলেন যে কোভিড -১৯ নিয়ে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মাত্রাতিরিক্ত মিডিয়া কভারেজ এর কারণে আতঙ্ক ছড়ায় কি না বা ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন রাখা হচ্ছে কি না এ  বিষয়সমূহে অধিকাংশ উত্তরদাতা নিরপেক্ষ ছিলেন। 

সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের নিকট আমাদের কিছু প্রশ্ন ছিলো-এটা জানতে যে তারা সরকারের পদক্ষেপ কতটুকু সচেতন ছিলেন। যদিও ৫৩.১ শতাংশ মানুষ ভাবছেন যে সরকার কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা বিলম্ব করা হয়েছে। তবে তাদেরকে যখন সরকার গৃহীত পদক্ষেপসমূহতে মতামত নেয়া হয়েছে তারা সেগুলোর কার্যকারীতাকে স্বীকার করেছেন। যেমন ৫৫.৯% অংশগ্রহণকারী মনে করেন, প্রাথমিকভাবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আংশিক বন্ধ ঘোষণা করার ফলে করোনাভাইরাস-এর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা কিছুটা সম্ভবপর হয়েছে। ৮৭.৬% উত্তরদাতা মনে করেন যে সরকার সঠিক সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়াও, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বন্ধ করার জন্য হোম কোয়ারেন্টাইন যে একটি ভাল সিদ্ধান্ত সেটি সম্পর্কে ৯৫.৩ শতাংশ মানুষ ইতিবাচক মত প্রকাশ করেন। ৭৯.৫% উত্তরদাতারা মনে করেন যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক কোয়ারেন্টাইন (পৃথকীকরণ) এবং আইসোলেশন (বিচ্ছিন্নতা) কার্যক্রম পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য যথেষ্ট কার্যকর হবে। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে, ৭১.৪% অংশগ্রহণকারী মনে করেন যদি কোভিড ১৯ প্রাদুর্ভাব ঘটে, এটি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। উত্তরদাতাদের ৯৩.৮% মনে করেন যে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বন্ধ করতে সরকারকে বিদ্যমান সারা দেশে লকডাউন (সকল কর্মকান্ড স্তিমিত) কর্মসূচি চালিয়ে উচিত।

এ গবেষণা থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান, উপলব্ধি ও জনসচেতনতা রয়েছে। তবে এ ভাইরাস সম্পর্কে জনগণের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে যেখান থেকে মানুষের মানসিক ট্রমা ও স্ট্রেস তৈরি হতে পারে যেটা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসহ স্বাভাবিক জীবনযাপন কে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এর ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এর পক্ষ্য থেকে সরকার কর্তৃক গৃহীত সকল সময়োপযোগী সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই এবং যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেটা এ রোগের প্রাদুর্ভাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যাবে এমনটি আশা করি। আমরা এটাও আশা করি যে জনগণ, সরকার ও গুরুত্বপূর্ণ মহলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশকে নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) এর প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে। 
এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ নিয়ে দিকনির্দেশনা ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম দেশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে। বর্তমান গবেষণাটি অনলাইনে হলেও ভবিষ্যতে আরো বিস্তর পরিসরে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এসি


 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি