ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

করোনাক্রান্ত সর্বোচ্চ মাত্র ১০ দেশে, দ. এশিয়ায় সর্বনিন্ম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:১৫, ২ এপ্রিল ২০২০

করোনা ভাইরাস

করোনা ভাইরাস

করোনা ভাইরাসের সূত্রপাত এশিয়ার দেশ থেকে হয়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও এখন তা চেপে বসেছে ইউরোপ-আমেরিকার ওপর। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে করোনার প্রকোপ চলছে কয়েকটি দেশে, যদিও তা এখনো উদ্বেগজনক নয়। অন্যদিকে আফ্রিকায় যেমন ভাইরাসটি তেমন সুবিধা করতে পারছে না তেমনি দক্ষিণ এশিয়াতেও এর অবস্থান বেশ দুর্বল।

গত ১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, বিশ্বজুড়ে ৮ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩২ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গত কয়েক মাসে করোনা-আক্রান্তের এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে- বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি আকার ধারণ করলেও এর শিকার ৮১ শতাংশ রোগীই মাত্র ১০টি দেশের। আর বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় আছে মাত্র ০.৪৩ শতাংশ। এ অঞ্চলের ৮টি দেশে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৪ হাজার জনের।

জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির হিসাবে, এ পর্যন্ত ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত রোগীর ৮১ শতাংশই মাত্র ১০টি দেশে। এর মধ্যে ৬টি দেশ ইউরোপের এবং ৩টি এশিয়ার। তবে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এককভাবে দেশটিতে শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬২৪ জন। আর ইতালি, স্পেন, চীন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইরান, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্ক মিলে মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৯৯ জনে। 

ইউরোপেই ৫৩ শতাংশ
ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে নানা চেষ্টা করেও করোনার ‘চর্বি’ যেন গলাতে পারছে না বিশ্বের শীতপ্রধান অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ইউরোপের দেশগুলো। জ্যামিতিক হারে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে এ অঞ্চলে। এ পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া রোগীর ৫৩ শতাংশই ইউরোপের। চিহ্নিত রোগী এখন পৌনে ৫ লাখ। প্রতি মুহূর্তে এ সংখ্যা বাড়ছে। ইউরোপে এ পর্যন্ত মারাই গেছে ৩০ হাজারের বেশি।

ভোগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
ইউরোপের পর সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী এখন উত্তর আমেরিকায়। এ অঞ্চলের ২৪টি দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা আড়াই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই আছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬২৪ জন। সব মিলিয়ে উত্তর আমেরিকায় থাকা ২৪ শতাংশ রোগীর ২২ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর আছে কানাডা। সেখানে রোগী ৮ হাজার ৫৬৯ জন। বাকি ২২টি দেশে রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৫৫৪ জন।

এমআইটির গবেষণা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরের দিকের রাজ্যগুলোর তাপমাত্রা কম এবং সেখানে সংক্রমণের হার অপেক্ষাকৃত উষ্ণ দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর তুলনায় বেশি।

পাত্তা পাচ্ছে না আফ্রিকায়
ইউরোপ-আমেরিকায় তাণ্ডব চালালেও করোনা পাত্তা পাচ্ছে না আফ্রিকায়। মহাদেশটির ৪৬টি দেশে ছড়িয়ে পড়লেও এ পর্যন্ত রোগী পাওয়া গেছে মাত্র পৌনে ৫ হাজার। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় এককভাবে আছে ১ হাজার ৩৫৩ জন। অপর ৩০টি দেশে রোগী পাওয়া গেছে ৫০-এর কম। আর ১০টি দেশে রোগী আছে ৭ বা তারও কম। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বজুড়ে চিহ্নিত রোগীর মাত্র ১ শতাংশ আছে এ অঞ্চলে।

দক্ষিণে মাত্র ২ শতাংশ
মোট করোনা আক্রান্তের ২ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকায়। এ অঞ্চলের ১৫টি দেশে রোগী আছে ১৪ হাজার ৫৭৪ জন। এর মধ্যে শুধু ব্রাজিলে পাওয়া গেছে পাঁচ হাজার ৮১২ জন। ২ হাজার ছাড়িয়েছে চিলি ও ইকুয়েডরে। ১ হাজার ছাড়িয়েছে আর্জেন্টিনায়। এরপর কলম্বিয়ায় ৯০০ ছাড়ালেও বাকি দেশগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম।

এশিয়ায় ২১ শতাংশ
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে এশিয়ার চীন থেকে শুরু হয় করোনার বিস্তার। এরপর এটি ইউরোপে থাবা বসালেও বিক্ষিপ্ত ছোটাছুটি করছে এশিয়ার ৪৩টি দেশে। মোট চিহ্নিত রোগীর ২১ শতাংশ এশিয়ার, যার মধ্যে শুধু চীনে রয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। দেশটিতে ৮২ হাজার ২৯৪ জন শনাক্ত হলেও এখন পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। দেশটিতে নতুন করে খুব একটা বাড়ছে না করোনা।

তবে এখনও ভুগছে ইরান। সেখানে রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৪৪ হাজার ছাড়িয়েছে। এরপর ৫ হাজারের বেশি রোগী আছে তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইসরাইলে। দক্ষিণ কোরিয়া ও ইসরাইলে নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে কম। এর বাইরে দুই হাজারের বেশি রোগী আছে মালয়েশিয়া, জাপান, ফিলিপাইন ও ভারতে। এক হাজারের বেশি মানুষের করোনা চিহ্নিত হয়েছে পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরবে। তবে ভারত ও পাকিস্তান নিয়ে শঙ্কা থাকলেও বাকি দেশগুলোতে নতুন রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। অন্য আটটি দেশে আক্রান্ত পাওয়া গেছে ২০ জনেরও কম।

৫০-এর কম আক্রান্ত ৬১ দেশে
১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫০ জনের কম রোগী পাওয়া গেছে ৬১টিতে। এখানেও সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আফ্রিকার ৩০টি দেশ। অন্যদের মধ্যে রয়েছে উত্তর আমেরিকার ১৫টি, এশিয়ার ৮টি, দক্ষিণ আমেরিকার ৫টি, অস্ট্রেলিয়ার ২টি ও ইউরোপের মাত্র ১টি দেশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধনী দেশগুলোকে মনে রাখতে হবে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুধু তাদের একার নয়। গরিব দেশের জন্য অনেক কঠিন সময় আসবে এবং সাহায্য প্রয়োজন হবে। এশিয়ার যেসব দেশে আগে করোনা সংক্রমিত হয়েছিল তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিতে হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ ড. ডেভিড নাবারো ‘নিউইয়র্ক টাইমস’কে বলেছেন মোক্ষম কথাটি, ‘দরিদ্র ও মধ্য আয়ের দেশগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেশ মানলেও উন্নত দেশগুলো মানে না। এটা পরিবর্তন করতে হবে।’

অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীন থেকে ইউরোপ ঘুরে ভাইরাসটি দক্ষিণ এশিয়ায় এসেছে। এর মধ্যে জিনগত পরিবর্তনের কারণে করোনা দুর্বল হয়েছে। এ অঞ্চলের আবহাওয়াও কাজ করেছে করোনার প্রতিকূলে।

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষক কাশিম বুখারিসহ বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীর করা গবেষণা বলছে, আক্রান্ত দেশগুলোর গড় তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৪ থেকে ৯ গ্রাম। আর এশিয়ার যে দেশগুলোয় বর্ষা মৌসুম আছে, সেখানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়তো কম হবে। কারণ এই অঞ্চলে প্রতি ঘনমিটারে আর্দ্রতার পরিমাণ ১০ গ্রাম পর্যন্ত।

আক্রান্ত শীর্ষ দেশগুলোয় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সব দেশেই এক থেকে দেড় মাস পরে বড় ধরনের উত্থান ঘটেছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার। ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র, ২৯ জানুয়ারি ইতালি, ৩০ জানুয়ারি স্পেন, ২৬ জানুয়ারি জার্মানি ও ২৩ জানুয়ারি ফ্রান্সে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তবে দেশগুলোয় করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মার্চে।

ওই একই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আঘাত হানে করোনা। ২৩ জানুয়ারি প্রথম করোনা-আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করে নেপাল। ১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৫ জন। ২৬ জানুয়ারি করোনা শনাক্ত হয় শ্রীলঙ্কায়। এখন সেখানে রোগীর সংখ্যা ১৪৩ জন। ২৯ জানুয়ারি ভারত, ২৩ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান, ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান, ৫ মার্চ ভুটান, ৬ মার্চ মালদ্বীপ ও সর্বশেষ ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।

করোনা শনাক্তের শুরুতেই লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করে নেপাল ও ভুটান। এর ফল পেয়েছে দেশ দুটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ও ভুটানে স্থানীয়ভাবে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। দুই দেশের আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিদেশফেরত। ভুটানে আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র চারজন। একটু দেরিতে হলেও লকডাউন ঘোষণা করে অনেকটা প্রতিরোধ করেছে মালদ্বীপ। দেশটিতে শনাক্ত হয়েছেন ১৮ জন। এ তিনটি দেশে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেউ মারা যাননি।

তবে ভাইরাস প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে আলোচিত লকডাউনের মতো সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় কিছুটা বিপাকে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলো। এ কারণেই পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপে স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছে রোগীরা। 

ভারতের পদ্মভূষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক জি পি নাগেশ্বর রেড্ডি ভারতীয় গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, চীন ও ভারতে ভাইরাসটির জিনগত বৈশিষ্ট্য উন্মোচন করা হয়েছে। ইতালিতে ছড়ানো ভাইরাসের সঙ্গে ভারতে ছড়ানো ভাইরাসের ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ভারতের ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে কিছু কিছু জিনগত পরিবর্তন হয়েছে। স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমেই ভাইরাসটি মানব শরীরের কোষে সংযুক্ত হয়। ভারতের ক্ষেত্রে কম যুক্ত হয়েছে, যার অর্থ, এটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। 

যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে আরো ৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩২ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জনের। আর বাংলাদেশে সরকারি মতে, এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৬-তে। আর মৃত্যু হয়েছে মাত্র ৫ জনের।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি