করোনায় বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ৬৯ হাজার ছাড়ালো
প্রকাশিত : ১০:০৪, ৬ এপ্রিল ২০২০
থামানো যাচ্ছে না করোনা দাপট। উৎপত্তির তিনমাসে যাতে আক্রান্ত হয়েছে পৃথিবীর সাড়ে ১২ লাখের বেশি মানুষ। প্রাণ গেছে ৬৯ হাজারেরও বেশি জনের।
আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় সকাল পর্যন্ত এ তথ্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারের দেয়া তথ্যমতে, গত শনিবার একদিনে লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা কমেছে। তারপরও এ সময়ে প্রাণ গেছে প্রায় ৭২ হাজার মানুষের। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৭১১ জনে। অপরদিকে, প্রাণ গেছে আরও অন্তত সাড়ে ৪ হাজার মানুষের। যেখানে মৃতের সংখ্যা ৬৯ হাজার ৪৫৬ জনে ঠেকেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮২ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। যদিও এখনো সংখ্যা কম হলেও প্রতিদিন বাড়ছে সংক্রমণ ও প্রাণহানির সংখ্যা। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে তা প্রকোট আকার ধারণ করেছে। উৎপত্তিস্থলের বাহিরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ১১ মার্চ বিশ্বব্যাপী মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
বর্তমানে ভাইরাসটিতে সংক্রমণের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় সবার ওপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ তালিকায় ইতালিকে টপকে দুইয়ে ওঠেছে প্রতিবেশী স্পেন। তবে প্রাণহানির সংখ্যায় এগিয়ে ইউরোপীয় ইতালি।
বার্তা সংস্থা সিএনএন জানিয়েছে, গত একদিনে যুক্তরাষ্ট্রে আরও ১ হাজার ৩৪৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এতে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৬৩৩ জন। এ অবস্থাকে ৯/১১ এর ক্রান্তিকালের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
অপরদিকে, আক্রান্ত হয়েছেন আরও প্রায় ২৬ হাজার মানুষ। এ নিয়ে সর্বোচ্চ আক্রান্তের দেশটিতে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৪। আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ১৭ হাজার ৯৭৭ জন।
যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী নিউইয়র্ক রাজ্য। দেশটির সবচেয়ে বড় শহরটিতে গত একদিনে সেখানে ৫শ’র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এতে করে শুধু এই রাজ্যেই মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার ১৫৯ জনে পৌঁছেছে। আক্রান্তদের মধ্যে গোটা দেশের প্রায় ৪৫ শতাংশ রোগীই এ অঙ্গরাজ্যের। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ১৮ জনে।
এরপর নিউ জার্সিতে আক্রান্ত সাড়ে ৩৭ হাজারের বেশি। মারা গেছেন ৯১৭ জন। দেশটিতে সংকটাবস্থা পার করছে প্রবাসীরাও। করোনায় দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৭৫ জনের মতো বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। যাদের অধিকাংশেই নিউ ইয়র্কে থাকতেন।
করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির দেশ ইতালিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৮৮৭ তে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ প্রায় ২৯ হাজার। যা এ মহামারিতে একদেশে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
করোনা সংক্রমণে আক্রান্তের দিক থেকে ইতালিকেও ছাড়িয়ে গেছে স্পেন। দেশটিতে গত একদিনে আরও প্রায় ৬ হাজার মানুষের শরীরে ভাইরাসটির সন্ধান মিলেছে। এতে করে আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৬। প্রাণহানি ১২ হাজার ৬৪১ দেশটিতে ধারণার চেয়ে প্রাণহানি বাড়ায় লাশের কফিন বানাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে, জার্মানিতে হঠাৎ করে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। ইউরোপের দেশটিতে এক লাফে সংক্রমিতের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। মারা গেছে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৮৪ জন। করোনার প্রকোপে বিপর্যস্ত ফ্রান্সে মারা গেছে ৮ হাজার ৭৮ জন। যেখানে আক্রান্ত প্রায় ৯৩ হাজার।
আক্রান্ত বেড়েছে দুই মুসলিম দেশ ইরান ও তুরস্কে। মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক ইরানে এখন পর্যন্ত সংক্রমিতের সংখ্যা ৫৮ হাজার ২২৬ জন। এর মধ্যে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৬০৩ জনের। তুরস্কে আক্রান্ত ২৭ হাজার ৬৯। এর মধ্যে মারা গেছেন ৭৪ জন।
এছাড়া, যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে ৪৭ হাজার ৯০৩ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৯৩৪ জন।
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় ভারত। মোদির দেশে ২১ দিনের লকডাউনের মধ্যেই এক লাফে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ২৮৮ জনে। মারা গেছেন ১১৭ জন।
পিছিয়ে নেই ইমরান খানের পাকিস্তানেও। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ১৫৭ জন, প্রাণহানি ঘটেছে ৪৭ জনের। যা অন্যান্য দিনের থেকে কম।
আর বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবার নতুন করে ১৮ জনের শরীরে ভাইরাসটির সন্ধান পাওয়া যায়। এতে করে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৮ জনে ঠেকেছে। মারা গেছেন ৯ জন।
এআই/