জার্মানিসহ আট দেশে লকডাউন শিথিল
প্রকাশিত : ১২:২৩, ২১ এপ্রিল ২০২০
ছবি-বিবিসি
মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসের হানায় বিপর্যস্ত পৃথিবী। কোথাও এতটুকু শান্তি নেই। চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল। সেই শোকাহত বিশ্বের কাছে একটু আশার দিক হচ্ছে গত দুই সপ্তাহে সর্বনিম্ন মৃত্যু। এছাড়াও আরেকটি আশার দিক হচ্ছে প্রতিনিয়ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে ভারত, জার্মানি, নরওয়ে, ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া ও পোল্যান্ড লকডাউন শিথিল করেছে। এসব দেশের জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে দোকানপাট-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেছে। কাজে ফিরতে শুরু করেছে নাগরিকরা। জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করায় শপিং মল, পার্ক, গলফ কোর্স ও রেস্টুরেন্টগুলোতে আবার জড়ো হতে শুরু করেছে মানুষ। এদিকে অর্থনীতি বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রেও লকডাউন শিথিলের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এছাড়া লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে স্পেন, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়েতে। তবে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলে এরপর বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা হবে।
সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত মেক্সিকোতেও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও ইউরোপের বিপর্যস্ত দুই দেশ ইতালি ও স্পেনে করোনার তেজ কিছুটা কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রেও মৃত্যু কমে এসেছে।
খবর বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
জার্মানিতে খুলেছে কিছু দোকানপাট
ধীরে ধীরে লকডাউন প্রত্যাহারের পথে হাঁটছে জার্মানি। সোমবার থেকে দেশটি লকডাউনের কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। ফলে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান পুনরায় চালু হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে জার্মানির স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
জার্মান সরকার সর্বোচ্চ ৮০০ মিটার আয়তনের দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে। তবে দোকান খোলার অনুমতি দেয়া হলেও করোনা প্রতিরোধে হাত ধোয়া ছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কড়া নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তবে যত আয়তনেরই হোক না কেন, বইয়ের দোকান, গাড়ি ও মোটরসাইকেল মেরামতের সব দোকান খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এছাড়া জার্মানির বেশকিছু অঞ্চলে চিড়িয়াখানাও পুনরায় খুলে দেয়া হয়েছে। এর আগে শুক্রবার জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেন্স স্প্যান বলেন, তার দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
জার্মানিতে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৯৮ জন, মারা গেছেন চার হাজার ৭০৬ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৯১ হাজার ৫০০ জন। এ হিসাবে দেশটির ৬০ শতাংশের বেশি রোগী এখন সুস্থ। আর কোনো দেশে এত রোগী এখনও সুস্থ হয়নি।
ডেনমার্কে খুলল সেলুনসহ ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
ডেনমার্কে সোমবার থেকে সেলুনসহ ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও খুলে দেয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে প্রাইমারি স্কুল ও নার্সারিগুলোও। যুক্তরাজ্যের ড্যানিশ অ্যাম্বাসেডর লার্স থুয়েসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা যদি হাসপাতালে, আইসিইউতে এবং ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে থাকা রোগীর সংখ্যা পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখা যায়, গত দুই সপ্তাহ ধরে সব সংখ্যাই হয় স্থিতিশীল আছে অথবা ধীরে ধীরে কমছে।
তিনি বলেন, আমরা এখনই পুরোপুরি বিপদমুক্ত না হলেও সঠিক পথেই আছি। সারা জীবন তো আমরা লকডাউনে থাকতে পারি না। তবে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গেলে আবারও সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হবে। ডেনমার্কে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ৫১৫ জন, মারা গেছেন ৩৬৪ জন।
ভারতে লকডাউন শিথিল
ভারতে করোনা মোকাবেলায় দ্বিতীয় দফায় ১৯ দিনের লকডাউন শুরু হলেও আজ (মঙ্গলবার) থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিল হচ্ছে বিধিনিষেধ। সোমবার মধ্যরাত থেকেই কৃষি, জরুরি উৎপাদন, পরিবহনসহ ২১টি ক্ষেত্রে বিধিনিষেধে কিছুটা নমনীয় হচ্ছে সরকার।
একই সঙ্গে, বেশ কিছু সরকারি দফতরও সচল করা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৬৫৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ৫৫৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৮৫৪ জন।
নরওয়ে ও পোল্যান্ডে খুলছে স্কুল
ফ্রান্স, ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে করোনাভাইরাস তাণ্ডব চালালেও অনেকটাই ভিন্ন চিত্র নরওয়ের। লকডাউনের পাশাপাশি প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে এখন পর্যন্ত তুলনামূলক নিয়ন্ত্রণে দেশটি। রোববার থেকে দেশটির কিছু নার্সারি স্কুল খুলে দেয়া হয়েছে। কয়েকটি পার্ক খুলে দিয়েছে পোল্যান্ড।
দ. কোরিয়ার পার্ক ও শপিংমলে ভিড়
দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকায় জনগণকে কাজে ফেরার অনুমোদন দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। খুলে দেয়া হয়েছে শপিংমল, পার্ক, গল্ফ কোর্স ও কিছু রেস্তোরাঁ। এতে এসব জায়গায় দেখা গেছে মানুষের ভিড়।
এর আগে রোববার দেশটিতে জারি থাকা সামাজিক দূরত্ববিষয়ক বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও ১৬ দিন বাড়ানোর ঘোষণা দেন কর্মকর্তারা। তবে ধর্মীয় ও ক্রীড়াবিষয়ক কর্মকাণ্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়।
চীনের বাইরে বড় ধরনের করোনা সংক্রমণের শিকার হওয়া প্রথম দিককার দেশগুলোর একটি দক্ষিণ কোরিয়া। তবে দেশটিতে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৬৭৪ জন। মারা গেছেন ২৩৬ জন।
যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু কিছুটা কমেছে
যুক্তরাষ্ট্রে এক দিনে মৃত্যুহার কিছুটা কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৫৬১ জন। এরই মধ্যে মোট মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৪১ হাজার। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায়ও শীর্ষে দেশটি। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৭১ হাজার ২১৬ জন।
যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা হচ্ছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য। এই রাজ্যটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৪৭ হাজার ২১৫ জন।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এখনই লকডাউন প্রত্যাহার কিংবা শিথিল করা হলে করোনাভাইরাস আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। অন্য দিকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, অর্থনীতির চাকা এভাবে ঘুরতে থাকলে বিশ্বের অন্তত তিন কোটি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের দেয়া তথ্য মতে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সারাবিশ্বে ২৪ লাখ ৮১ হাজার ২৮৭ জন কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে। আর এ মহামারীতে মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ৪৩৬ জনের। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫৪ জন।
এছাড়া বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে দুই হাজার ৯৪৮ জন।
এমবি//