যেভাবে করোনামুক্ত হলেন এই অভিজ্ঞ চিকিৎসক
প্রকাশিত : ১৩:৩৮, ২৩ এপ্রিল ২০২০
অধ্যাপক শহীদুল্লাহ সিকদার
বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টি করা করোনা ভাইরাসের কবলে পড়েও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শহীদুল্লাহ সিকদার।
করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন তিনি। তবে, ওই রোগী উপসর্গের কথা গোপন রেখেছিলেন। গত ৯ এপ্রিল চর্মরোগ বিভাগের প্রধান এ অধ্যাপকের করোনা শনাক্ত হয়। পরে পরীক্ষায় তার মেয়ের রিপোর্টও পজেটিভ আসে।
সুস্থ হয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমের কাছে অভিজ্ঞতার কথা জানান এ চিকিৎসক। তিনি জানান, করোনায় আক্রান্ত হলে করণীয় কি, যে পদক্ষেপগুলো নিলে করোনাক্রান্ত ব্যক্তি সহজেই সুস্থতা লাভ করতে পারেন। পাশাপাশি ভাইরাসটি কতটা বিপদজনক ও তার প্রতিকারের উপায়।
অধ্যাপক শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘আমি বেশকিছু রোগী দেখছিলাম। একজন রোগীকে দেখে জ্বর… টক্সিস, টক্সিস মনে হচ্ছিল। আমি বললাম, আপনার কি করোনা ভাইরাস আছে নাকি? উনি বললেন ‘না, আমার নেই।’ এই বলে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেলেন। তারপর নিজে থেকে উনি পরীক্ষা করালেন। পরদিন সম্ভবত পরীক্ষা করেছেন। তার পরের দিন আইইডিসিআর থেকে আমাকে জানানো হল- ‘স্যার আপনার রোগীর করোনা ভাইরাস পজিটিভ। আপনি একটু সাবধানে চলেন।’
তিনি বলেন, ‘আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমারও কিন্তু কোনো উপসর্গ ছিল না। তারপরও আমি পরীক্ষা করালাম এবং বিকেলে জানালো হল- আমারও করোনা পজিটিভ। তখন আমি নিজের বাসায় একেবারে কন্টাক্টলেস হয়ে গেলাম। কয়েকদিন পর সামান্য কাশি, সর্দি ও মাথাব্যথা শুরু হয়। তবে তাপমাত্রা তত বেশি ছিল না। সামান্য শরীর ব্যথা হয়েছিল। সেটা খুবই কম। আমার মেয়ের একটু জ্বর হয়েছিল, পাতলা পায়খানা হয়েছিল।’
বিএসএমএমইউর এই অধ্যাপক বলেন, ‘কিভাবে থাকবো, কোথায় চিকিৎসা নিব সে বিষয়ে প্রথমে নিজেও দ্বিধায় ছিলাম। আসলে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক তো সারা দুনিয়ায় আছে। আমি যখন আক্রান্ত হলাম, টেস্ট করে যখন আমি নিজেই পজিটিভ দেখলাম, তখন আমি আসলেই একটু চিন্তিত হয়ে গেলাম যে আমি হাসপাতালে যাব না বাসায় থাকব।’
‘পরে ভেবে মনে হল বড় কোনো শারীরিক সমস্যা নেই, নিজের সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারলে হয়ত বাসায় থেকেও হাসপাতালের চেয়ে কম সেবা হবে না। সেই ভাবনা থেকেই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম এবং মেয়ের জন্যও একই ব্যবস্থা করি।’
তিনি বলেন, ‘করোনাক্রান্ত অবস্থায় আমার স্ত্রী ও মেয়ে আলাদা আলাদা ঘরে থেকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার, বিশেষ করে স্যুপ, জুস আর গরম পানি পান করেছি সবসময়; আদা চা খেয়িছি। সবসময় চেষ্টা করেছি ভিটামিন সি ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খেতে। পেয়ারা, কমলা, লেবু, মাল্টা- এগুলো খেয়েছি প্রচুর পরিমাণে। তার সাথে কালোজিরা এবং মধু সকাল বিকাল খেয়েছি। প্রয়োজনে কিছু ওষুধও সেবন করেছি।’
‘অসুস্থতার দিনগুলোতে অন্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ পানি পান করেছেন জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘সব সময় গরম পানি পান করছি। আর সেটা পরিবারের সবাই।… বেশি বেশি পানি পান জরুরি, কারণ ভাইরাসের টক্সিস পানির সাথে বা প্রসাবের সাথে বেরিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি শরীর যাতে সচল থাকে সেজন্য হালকা ব্যায়াম করা হতো।’
এ সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবারে জোর দিতে হবে জানিয়ে শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘সাধারণভাবে আমি সপ্তাহে একটা করে ডিম খেতাম। কিন্তু কোভিড-১৯ পজিটিভ আসার পর সপ্তাহে চারটা করে ডিম খেয়েছি। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই জরুরি, কারণ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারলে মানুষের সংক্রমণের শারীরিক ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়। তাতে দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।’
আন্তর্জাতিকভাবে বলা হচ্ছে, কোভিড-১৯ হলে সুস্থ হতে দুই থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। শহীদুল্লাহ জানান, ‘তার ও তার মেয়ের নমুনা পরীক্ষায় দুই সপ্তাহের মধ্যেই করোনা ভাইরাস নেগেটিভ এসেছে। তার ক্ষেত্রে যেহেতু শারীরিক জটিলতা ছিল না, বাসায় থেকে পুষ্টিকর খাবার পাওয়া, নিজের মত করে পরিচ্ছন্ন থাকা এবং পরিচর্যার বিষয়টি সহজ ছিল, সেজন্য তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ‘
হাসপাতালে গেলে কিছু পরিবেশগত রোগও অনেক সময় চলে আসে জানিয়ে এ অধ্যাপক বলেন, ‘অযথা হাসপাতালে গিয়ে বেশি ঝামেলা করাও বোধহয় ঠিক নয়। কারণ যার হাসাপাতালের সেবা প্রয়োজন, জরুরি, তিনিই হাসপাতালে যাবেন। যদি কারো আগে থেকেই ফুসফুস, হৃদযন্ত্র বা কিডনিতে জটিলতা থাকে অথবা চিকিৎসার কোনো পর্যায়ে অন্য কোনো অসুস্থতা দেখা দেয়, তাহলে তাকে হাসপাতালে নেয়া জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, যদি নিয়মিত খাবার, স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং অন্যান্য বিষয়ে লক্ষ্য রাখা যায় তাহলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। গরম পানির ভাপ নেওয়ার (স্টিম ইনহেলেশন) একটা বিষয় আছে। সেটাও আমরা করেছি।’
তবে বাসায় থাকলে প্রত্যেকের আলাদা আলাদা কক্ষে থাকার ওপর জোর দিতে হবে। এক ঘর থেকে রোগী যদি আরেক ঘরে না যায় তাহলে ভাইরাস ছড়ানোর সুযোগ কমে যায়। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কন্টাক্টেই ভাইরাসটি ছড়ায় বলেও জানান এ চিকিৎসক।
এআই/