করোনায় মৃত সেই বাংলাদেশি মার্কিন পুলিশ কর্মকর্তাকে বিরল সম্মাননা
প্রকাশিত : ১৬:৪৪, ২৫ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১৬:৫৫, ২৫ এপ্রিল ২০২০
মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বাংলাদেশি মার্কিন পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ চৌধুরীকে বিরল সম্মাননা দিয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশ।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর তার লাশ দাফন করা হয়। তার আগে তাকে গার্ড অব অনার দেয় নিউইয়র্ক পুলিশ।
সম্প্রতি মোহাম্মদ চৌধুরীকে দেয়া বিরল সম্মাননার একটি ভিডিও আপলোড করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এপি।
ভিডিওতে দেখা যায়, তার লাশের কফিন নিয়ে নিউইয়র্ক পুলিশের কয়েকজন পুলিশ সম্মান প্রদর্শন করেন। এরপর তার লাশে কফিন নিয়ে যাওয়া হয় দাফনের জন্য। এ সময় নিউইয়র্ক পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শীর্ষ কর্মকর্তারা মোহাম্মদ চৌধুরীর পরিবারকেও সম্মান প্রদর্শন করেন।
এ বিষয়ে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস যখন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল তখন তার উচিত ছিল বাসায় নিরাপদে অবস্থান করা। কিন্তু সে নিজেকে নিয়ে মোটেও চিন্তা করেনি। তিনি অন্যদের নিয়ে চিন্তা করেছেন। তার সহকর্মীদের নিয়ে চিন্তা করেছেন। তিনি কাজ ফেলে কোথাও যাননি।
শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, আমি মনে করি এই মৃত্যু সাহসের মৃত্যু। তার মৃত্যু ডেথ ইন লাইন (যে মৃত্যু নিজের দায়িত্ব পালনকালে হয়)। তিনি অনেক যত্নশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন। তিনি বিভাগের প্রধান হয়েও কখনও কর্তৃত্ব করতেন না। সবার প্রতি তিনি সদয় আচরণ করতেন। তিনি কখনই অধিনস্তদের অধিনস্ত ভাবতেন না। তিনি সকলকে সহকর্মী ভাবতেন। নিজের সমমর্যাদার হোক বা অন্য কেউ সকলের জন্য তিনি সমান ছিলেন।
মোহাম্মদ চৌধুরীকে সম্মননা দিচ্ছে নিউইয়র্ক পুলিশ
গত ১৯ এপ্রিল বিকালে নিউইয়র্ক শহরের কুইন্স জেনারেল হাসপাতালে নিউইয়র্ক পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সেকশন কমান্ডার মোহাম্মদ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে আমেরিকান-বাংলাদেশি হিসেবে মোহাম্মদ চৌধুরী ছিলেন এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পদাধিকারী কর্মকর্তা।
তিন সপ্তাহ ধরে মোহাম্মদ চৌধুরী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।
তার পারিবারিক বাড়ি কুমিল্লায় হলেও জন্ম মোহাম্মদ চৌধুরীর জন্ম ঢাকায়। লেখাপড়া করেছেন মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মোহাম্মদ চৌধুরী নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগের প্রথম দিকের বাংলাদেশি, যিনি দীর্ঘ ৩০ বছর সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছিলেন। নিউইয়র্ক নগরীর ট্রাফিক বিভাগের বরো সেকশন কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
১৯৯০ সালের ৩০ এপ্রিল তিনি নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে ট্রাফিক সুপারভাইজার হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০০৯ সালে ট্রাফিক ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে নিজের দক্ষতায় এগিয়ে যান তিনি। ২০১৬ সালে দীর্ঘ ২০ বছর সঠিক উপস্থিতির জন্য পদক পান এ বাংলাদেশি। ২০১৮ সালে তিনি সেকশন কমান্ডার হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। নিউইয়র্ক পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশিদের কাছে তিনি একজন আইকন ছিলেন।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে মোহাম্মদ চৌধুরীর নাম সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হয়ে আসছে। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ-আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)।
মোহাম্মদ চৌধুরী
প্রসঙ্গত, বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে প্রায় ৮ লাখ ৭০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া মারা গেছেন ৫০ হাজারের মতো মানুষ।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটির অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। এরই মধ্যে এই অঙ্গরাজ্যটিতে মৃতের সংখ্যা ১৮ হাজার পেরিয়ে গেছে। দেশটির পাঁচটি রাজ্যে মোট ১৭৫ জন বাংলাদেশি মারা গেছে বলে জানা গেছে। তারমধ্যে শুধু নিউইয়র্কেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৫৫ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন।
দেখুন সম্মাননা দেওয়া সেই ভিডিও-
এমবি//