কাপড়ের মাস্ক অনেক বেশি কার্যকর
প্রকাশিত : ১৩:০১, ২ মে ২০২০
(ছবি- একুশে টেলিভিশন)
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বজুড়ে মাস্ক নিয়ে এক ধরণে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছেন, অমুক মাস্ক বেশি কার্যকর আবার কেউ বলছেন তমুক বেশি কার্যকর। ঠিক সেই মুর্হূতে যুক্তরাষ্ট্রে এক বাংলাদেশি গবেষণালব্ধ ফলাফলে জানালেন, কাপড়ের মাস্ক অন্যান্য মাস্কের তুলনা কোন অংশেই কম কর্যকর নয়। মাস্ক তৈরির জন্য সিল্ক, সুতি, পলিয়েস্টার, কৃত্রিম তন্তুসহ ১০ রকমের কাপড় নেওয়া হয়। গবেষণায় গেঞ্জি বা টি-শার্ট তৈরিতে ব্যবহৃত কাপড়ে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। গবেষকদের সামনে মান হিসেবে ছিল সার্জিক্যাল মাস্ক।
বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আরবানা-শ্যাম্পেইনের মেকানিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক তাহের সাইফ নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা যায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গেঞ্জির কাপড়ে তৈরি মাস্ক প্রচলিত মেডিকেল বা সার্জিক্যাল মাস্কের সমতুল্য বা এর চেয়েও বেশি কার্যকর। এই মাস্ক ঘরেই বানানো যাবে এবং বারবার ধুয়ে ব্যবহার করা সম্ভব। সাইফ তার দুই পিএইচডি শিক্ষার্থীকে নিয়ে এ গবেষণা করেন। তাঁরা হলেন বাংলাদেশের বাশার ইমন ও তুরস্কের আনুর আইদিন।
শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে নির্গত জলকনার (ড্রপলেটস) মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে হাতে বানানো মাস্কের কাপড়ের কার্যকারিতা সমীক্ষা (পারফরমেন্স অব ফেব্রিকস ফর হোম-মেইড মাস্কস অ্যাগেইনস্ট স্প্রেড অব রেসপিরেটরি ইনফেকশন থ্রু ড্রপলেটস: আ কোয়ান্টিটিভ মেকানিস্টিক স্টাডি) শিরোনামের এই গবেষণাপত্র গত ২৪ এপ্রিল ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান সার্ভারের ওয়েবসাইটে (www.medrxiv.org) প্রকাশিত হয়। বর্তমানে কোভিড-১৯ সংক্রমণ–সংশ্লিষ্ট গবেষণাগুলো সরাসরি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকে ইয়েল ইউনিভার্সিটি। পরে রিভিউ হয়ে এটি জার্নালে প্রকাশিত হবে। যদিও ইউরোপ আমেরিকায় প্রথমে বলা হয়েছিল মুখোশ বা মাস্ক পরার দরকার নেই, কিন্তু পরে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়।
ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আরবানা-শ্যাম্পেইনের গবেষণাগারে সহযোগী দুই গবেষকের সঙ্গে তাহের সাইফ (ডানে)- সংগৃহীত
গবেষণা ৪০ শতাংশ সুতি এবং ৬০ শতাংশ পলিয়েস্টার কাপড় নেওয়া হয়। পুরো সুতি কাপড় দিয়েও এটা করা যাবে, তবে খরচ বাড়বে। সিল্কের এক পরত কাপড় ৬০ শতাংশ ড্রপলেটস আটকাতে পারে, কিন্তু দুই পরত দিলে শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে যাবে, বাতাস দুপাশ দিয়ে বের হয়ে যাবে। হাঁচি-কাশির সঙ্গে বের হওয়া ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জলকণাগুলোর তীব্র গতি থাকে। ফলে এক পরতের কাপড় এগুলো আটকাতে পারে না। দ্বিতীয় স্তরে গিয়ে সেগুলো আটকে যায়।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিককে তাহের সাইফ বলেন, ‘আমরা দেখছি যে মাস্ক ব্যবহার ছাড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব নয়। আর এত মাস্কের উৎপাদনও সম্ভব নয়। মাস্কের মূল কাজটা হলো হাঁচি-কাশির মাধ্যমে থুতু বা শরীর থেকে যে ড্রপলেটস বের হয়ে আসে, তা ঠেকানো এবং একই সঙ্গে শ্বাসপ্রশ্বাস যাতে নেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা রাখা। খুব সাধারণ বিজ্ঞানের প্রয়োগ করে এই গবেষণা চালানো হয়েছে। বিশেষ অনুমতি নিয়ে গত মার্চ মাসের শেষ দিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব খুলে এই গবেষণা শুরু করি।’ গবেষণায় গেঞ্জি বা টি-শার্ট তৈরিতে ব্যবহৃত কাপড়ে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া গেল।
তাহের সাইফ জানান, গেঞ্জির কাপড় এক পরত বা স্তর (লেয়ার) ব্যবহার করে দেখলাম, এটি ৪০ শতাংশ ড্রপলেটস আটকাতে পারে। কিন্তু দুই স্তর কাপড় দিলে এটি ৯৮ শতাংশ ড্রপলেটস আটকাতে পারে। সহজে শ্বাসও নেওয়া যায়। সার্জিক্যাল মাস্ক ড্রপলেটস আটকাতে পারে ৯৬ শতাংশ। এটি শুধু একবারই ব্যবহার করা যায়। তিন পরতে গেঞ্জির কাপড় দিলে হাঁচি-কাশির উপাদান আরও বেশি আটকানো যাবে, তবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
এমএস/