করোনা থেকে বাঁচতে কিডনি রোগীদের করণীয়
প্রকাশিত : ১১:৩৬, ১৯ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৩:৪০, ২১ জুন ২০২০
যারা কিডনির অসুখে ভুগছেন, করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে তাদের বিশেষভাবে সাবধান হওয়া উচিত। কেননা কিডনির কাজ কমে গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। তাই করোনার বিরুদ্ধে যথযথ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
কিডনি আমাদের শরীরের রক্ত নানা দূষিত পদার্থ রক্ত থেকে ছেঁকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। রক্ত পরিশোধন করার পাশাপাশি শরীরের পিএইচ ও পানির ভারসাম্য রক্ষা করা কিডনির অন্যতম কাজ। তাই কোনভাবে কিডনির কাজ ব্যাহত হলে শরীরে নানা বিষাক্ত পদার্থ জমে অসুস্থতা বাড়তে থাকে। তাই কিডনির ক্রনিক অসুখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে ওষুধ ও সঠিক ডায়েট মেনে চলার পাশাপাশি হ্যান্ড হাইজিন ও মাস্ক ব্যবহার করা একান্ত আবশ্যক।
কিডনি রোগের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ আর ডায়াবেটিস। তাই যাদের এসব সমস্যা আছে, তাদের নিয়ম করে কিডনি চেকআপ করা উচিত। যেহেতু কিডনির অসুখের প্রাথমিক অবস্থায় সে রকম কোন উল্লেখযোগ্য উপসর্গ থাকে না, তাই রোগ ধরা পড়তে দেরি হয়। বছরে একবার হলেও ইউরিন টেস্ট, ইউরিয়া ক্রিয়েটিনিন ও অ্যালবুমিন পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত। করোনার সময়ে রক্ত পরীক্ষা বা অন্যান্য চিকিৎসার জন্য ক্লিনিকে যেতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং বাড়ি ফেরার পর পোশাক বদলে সব কিছু স্যানিটাইজ করতে হবে।
কিডনির অসুখ আছে কি না তা বোঝা বেশ মুশকিল। এই সমস্যার সে রকম কোন উপসর্গ থাকে না। বার বার প্রস্রাবের সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অবশ্যই ইউরিন পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। এ ছাড়া আর যেসব উপসর্গ দেখা দিলে সাবধান হবেন, তা জেন নিন....
কোন কোন উপসর্গে সাবধান হবেন
• খিদে কমে গেলে। বমি বমি ভাব থাকলে। কখনও কখনও বমি হতে থাকলে
• অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, হাঁপিয়ে ওঠা, নিঃশ্বাসে কষ্ট হওয়া।
• ব্লাড প্রেশার ওঠানামা করতে থাকা।
• একাধিকবার প্রস্রাবের বেগ। এছাড়া প্রস্রাবে জ্বালা ও ব্যথাও হতে পারে।
• সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চোখ, মুখ ও পা ফোলা ভাবা থাকা।
এই ধরনের সমস্যা হলে ইউরিন টেস্টসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা শুরু করা দরকার। কিডনির অসুখের পাঁচটি স্টেজ আছে। প্রথম চারটি স্টেজে ওষুধ ও লাইফস্টাইল মডিফিকেশন করেই ভাল থাকা যায়। কিন্তু স্টেজ ৫-এ ডায়ালিসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপন করা ছাড়া উপায় থাকে না।
কী করবেন, কী করবেন না
কিডনির অসুখে নির্দিষ্ট সময় অন্তর খাবার খেতে হবে। বেশি লবণ বা জলীয় খাবার খেলেও কিডনির ধকল বাড়ে। পা ও মুখে পানি জমে ফুলে যায়। তাই কম লবণ দিয়ে রান্না করা খাবার খেতে হবে। চানাচুর, চিপস, আচার ইত্যাদিতে প্রচুর লবণ থাকে, এগুলো বাদ দেবেন। এ ছাড়া প্রানীজ প্রোটিন দুর্বল কিডনির উপর বাড়তি চাপ ফেলে। তাই মাছ, ডিম, মাংস খেতে হবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে নির্দিষ্ট পরিমাপে।
করোনা আক্রান্তে কিডনি খারাপ হওয়ার শঙ্কা বেশি
করোনাভাইরাসের চরিত্র সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই আমাদের অজানা। তবে দেখা গেছে যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ ফুসফুসকে আক্রমণ করে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে করোনা কিডনির কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কিডনির রক্তবাহী ধমনীতে রক্তের ডেলা আটকে যাওয়ায় শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ খুব কমে যায়। ফলে কিডনির কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চীন, নিউইয়র্ক, ইতালি ও ফ্রান্সে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের ৩০ শতাংশেরই কিডনি খারাপ হয়েছে। তাই কোভিড আক্রান্তদের বেলায় অসুখ সারার পর কিডনি বিশেষজ্ঞের পরমার্শ মেনে চলা উচিত।
এএইচ/এমবি