রমজানের শিক্ষা করোনায় অসহায়দের পাশে দাঁড়ান
প্রকাশিত : ১৪:৩৮, ১৬ এপ্রিল ২০২১ | আপডেট: ১৫:১১, ১৬ এপ্রিল ২০২১
করোনা আতঙ্ক নিয়ে চলছে মাহে রমজান। গতবারের মত এবারও রমজান গোটা বিশ্বের কাছে বিশেষ ও ব্যতিক্রম। দৈনন্দিন খাওয়া দাওয়া, চাল চলনে বিশেষ সতর্কতায় থাকতে হচ্ছে সবাইকে। আবার এই মহামারী থেকে মুক্তি পেতে ঘরে থেকে স্রষ্টার কাছে বিশেষ প্রার্থনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। একদিকে অবসরে থাকার কারণে মানুষ ঘরে বসে পরিবারের সবাইকে নিয়ে রমজানের সবগুলো দায়িত্ব পালন করতে পারছে, অন্যদিকে এবারের রমজান এসেছে স্রষ্টার বিশেষ সন্তুষ্টি লাভের বিশেষ সময় নিয়ে। সেই সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বড় সুযোগ এই রমজান। তাই এ কথা বলাই যায়- রমজান এসেছে সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে।
করোনার এই সময়ে অসহায়, নিম্ন আয়ের মানুষ ঘরে বসে কষ্টের জীবন অতিবাহিত করছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর এখনই সময়। হৃদয় খুলে আমরা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সঠিক নিয়তে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি তবে সেই পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতেই দিবেন।
দানের কথা প্রচার না করে যারা আল্লাহর পথে ধনসম্পত্তি ব্যয় করে এবং গ্রহীতাকে কোনো কষ্ট দেয় না, তাদের পুরস্কার প্রতিপালকের কাছে জমা থাকবে। তাদের কোনো ভয় থাকবে না। তারা দুঃখিতও হবে না। তাই আজই নিয়ত করুন মানুষের পশে দাঁড়ানোর।
নিয়ত সকল কর্মের অঙ্কুর। প্রত্যেকের কর্মের মূল্যায়ন করা হবে তার নিয়ত বা অভিপ্রায় অনুসারে। কেউ যদি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সন্তুষ্টির জন্যে হিজরত করে, তবে সে সেভাবেই মূল্যায়িত হবে। আর যদি কেউ পার্থিব ধনসম্পত্তি বা কোনো নারীকে পাওয়ার জন্যে হিজরত করে, তবে তার মূল্যায়নও সেভাবেই হবে।
হিজরত অর্থ দেশত্যাগ। দেশত্যাগী বা শরণার্থীর জীবনে কষ্ট অনেক। অর্থাৎ দুনিয়া হোক বা আখেরাত, একজন মানুষ যে উদ্দেশ্যে কষ্টস্বীকার করছে, মূল্যায়নটা হবে সেভাবেই। কষ্ট করার উদ্দেশ্যটাই গুরুত্বপূর্ণ। উম্মে কায়েস নামে এক কুমারীকে বিয়ে করার জন্যে মক্কা থেকে এক যুবক মদিনায় এলে নবীজী (স.) একথা বলেন।
—ওমর ইবনে খাত্তাব (রা); বোখারী, মুসলিম
প্রতিটি সকালই মানুষের সামনে একটি ক্রান্তিকাল। দুটি পথ তার সামনে থাকে। (যখন সে মহাবিচার দিবসের চিন্তায় তার কর্মকে সমর্পিত করে, তখন) সে পরিত্রাণের পথে এগিয়ে যায় অথবা (যখন প্রবৃত্তির দাসত্ব করতে যায়, তখন সে নিজের সর্বনাশ ঘটায়।
—আবু মালেক আশয়ারী (রা); মুসলিম, নববী
আল্লাহ তোমার চেহারা বা ধনসম্পত্তির দিকে তাকাবেন না, তিনি দেখবেন তোমার অন্তর, আর হিসাব নেবেন তোমার কর্মের।
—আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম, ইবনে মাজাহ
আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্য ছাড়া যা-ই করো না কেন, তা পরিণামে ব্যর্থ হবে। তাই ‘বীর’ উপাধি পাওয়ার জন্যে যুদ্ধ কোরো না। ‘জ্ঞানী’ বলে স্বীকৃতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান বিতরণ কোরো না। ‘দাতা’ বলে পরিচিত হওয়ার জন্যে দান কোরো না। করলে মহাবিচার দিবসে তোমাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (তোমার বাহ্যিক কর্মকাণ্ড নয়, আল্লাহ দেখবেন তোমার অন্তর। কর্মফল পাবে নিয়ত বা অন্তর্গত অভিপ্রায় অনুসারেই।)
—আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম
আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার জন্যে, পরিবারের ভরণপোষণের জন্যে, প্রতিবেশীদের সাহায্য করার জন্যে বৈধ পন্থায় সম্পদ অর্জনের আন্তরিক চেষ্টা করো। মহাবিচার দিবসে তোমার চেহারা পূর্ণিমার মতো দীপ্যমান হবে। কিন্তু যদি তোমার অর্থ উপার্জনের লক্ষ্য হয় পার্থিব ভোগবিলাস, শানশওকত প্রদর্শনী এবং মানুষের বাহবা পাওয়া—তবে মহাবিচার দিবসে তুমি প্রভুর রোষানলে ভস্মীভূত হবে।
—আবু হুরায়রা (রা); মেশকাত, বায়হাকি
মানুষকে দেখানোর জন্যে বা মানুষের বাহবা পাওয়ার জন্যে যে ভালো কাজ করবে, তার কোনো পুরস্কার মহাবিচার দিবসে আল্লাহ দেবেন না।
—উবাই ইবনে কাব (রা); আহমদ
আল্লাহ-সচেতনরা গায়েবে (মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞানে বোধগম্য না হওয়া সত্ত্বেও অদৃশ্য বাস্তবতায়) বিশ্বাস করে, নামাজ কায়েম করে, প্রাপ্ত রিজিক থেকে অন্যের জন্যে ব্যয় করে (অর্থাৎ নিয়মিত দান করে)। ২ : ৩
যে নিজের দম্ভ প্রকাশ করার জন্যে কোনো সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাকে মহাবিচার দিবসে সবার সামনে লাঞ্ছিত করবেন। আর যে লোক-দেখানোর জন্যে কোনো ভালো কাজ করবে, আল্লাহ তাকে মুনাফেকের কাতারভুক্ত করবেন।
—জুন্দুব ইবনে আবদুল্লাহ (রা); বোখারী, মুসলিম
সৎ কাজের নিয়ত করে কেউ তা করতে না পারলেও আল্লাহ তাকে একটি নেকি দেন। আর নিয়ত করার পর কাজটি সম্পন্ন করলে আল্লাহ তাকে ১০ থেকে ৭০০, এমনকি তার চেয়েও বেশি নেকি দেন। কিন্তু কেউ যদি খারাপ কিছু করার চিন্তা করে তা করা থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে একটি নেকি দেন। আর যদি সে সেই খারাপ কাজটি করে ফেলে, তবে তার নামে একটি গুনাহ লিপিবদ্ধ করেন।
—আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); বোখারী, মুসলিম
গুণাবলিকে বিকশিত করে যে মহৎ হতে চায়, আল্লাহ তাকে মহৎ করেন। আর যে ভোগ্যপণ্য ও ধনসম্পদ চায়, আল্লাহ তাকে তা-ই দেন।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী
মানুষের উত্থান হবে তাদের নিয়ত অনুসারে।
—আবু হুরায়রা (রা), জাবির (রা); ইবনে মাজাহ