ঢাকা, সোমবার   ০৭ অক্টোবর ২০২৪

আলফ্রেড সরেন হত্যা: বিচারের অপেক্ষায় ২০ বছর 

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:১৪, ১৮ আগস্ট ২০২০

আদিবসী নেতা আলফ্রেড সরেন হত্যার বিচারের অপেক্ষায় কেটে গেল ২০ বছর। আজ ১৮ আগস্ট বহুল আলোচিত নওগাঁর আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন এর ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০ বছর আগে সরেন ভূমি দস্যুদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হলেও এখন ওই মামলার কোন সুরাহা হয়নি। 

মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে আদিবাসীদের রয়েছে সংশয়। তাদের অভিযোগ জামিনে থাকা আসামিরা তাদের অব্যাহতভাবে হুমকি-ধমকি দেয়ায় ইতোমধ্যে অনেক আদিবাসী পরিবার নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর আদিবাসী পল্লী ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। 

অভিযোগ আছে,  বর্তমানে যে কয়টি পরিবার এখনও বসবাস করছে তারা ভূমি দস্যুদের ভয়ে জমিতে চাষাবাদ করতেও পারছে না। ফলে পরিবারগুলো চরম অভাব অনটন ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যদিয়ে দিন অতিবাহিত করছে। পল্লীর ছেড়ে মামলার সাক্ষীরা চলে যওয়ায় মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলার বাদী আলফ্রেডের ছোট বোন রেবেকা সরেন।

সরজমিনে মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর আদিবাসী পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, আলফ্রেড হত্যা মামলার জামিনে থাকা আসামিদের অব্যাহত হুমকি-ধমকিতে ২৪টি পরিবারের মধ্যে বর্তমানে ৯টি পরিবার সেখানে বসবাস করছে। বাকিরা প্রাণ বাঁচাতে অন্যত্র চলে গেছে। তবে অন্য স্থান থেকে এখানে এসে নতুন ৯টি পরিবার বসবাস শুরু করেছে। 

নিহত আলফ্রেড সরেনের বৃদ্ধ বাবা গায়না সরেনও মারা গেছেন। আলফ্রেড সরেনের স্ত্রী জোছনা সরেন এই পল্লীতে থাকেন না। আলফ্রেডের রেখে যাওয়া ৪ বছরে মেয়ে ঝর্ণা সরেন বড় হয়েছে। বিয়ে করে থাকছে ঢাকায়। চাকরি করছে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। আলফ্রেড সরেন হত্যাকাণ্ডের এক বছরের মাথায় তার মা ঠাকুরানী সরেন মৃত্যু মারা যান। 

উল্লেখ্য গত ২০০০ সালের ১৮ আগষ্ট নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর আদিবাসী পল্লীতে হাতেম-গদাই গংদের সন্ত্রাসীদের হামলায় আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন নৃসংশভাবে খুন হন। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসীরা ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে আদিবাসী পল্লীর ১১টি পরিবারের বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে। ওই সময় তাদের হামলায় আদিবাসী মহিলা-শিশুসহ প্রায় ৩০ জন মারাত্মক আহত হয়। ওই সন্ত্রাসী ঘটনার পর নিরাপত্তার জন্য সেখানে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয় । পরে তা গুটিয়ে নেয়া হয়।

এ মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহসীন রেজা জানান, ‘আলফ্রেড সরেন হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই কমল সরেন ও ছোট বোন রেবেকা সরেন বাদী হয়ে হত্যা ও জননিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় পুলিশ ৯১ জন আসামির নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এর মধ্যে পুলিশ কয়েক জন আসামিকে গ্রেফতার করে। ওই সময় নওগাঁ দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষী গ্রহণ শুরু হয় এবং ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে সেই সময় ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছিল।

তিনি জানান, ‘চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জননিরাপত্তা আইন বাতিল করে। ওই সময় পলাতক সীতেষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ওরফে গদাই (প্রয়াত) ও হাতেম আলীসহ ৬০ জনের অধিক আসামি জননিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করলে, সকল রিট হাইকোর্ট খারিজ করে দেয়। এর ফলে আসামিরা জামিনে বেড়িয়ে আসে। এরপর বাদিগন অ্যাপিলেড ডিভিশনে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলাটি অ্যাপিলেড ডিভিশন শুনানি অন্তে পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য হাইকোর্ট ডিভিশনে প্রেরণ করেছে। রিটগুলো দ্রুত শুনানি করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।’

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন, ‘আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেনকে হত্যার পর অগ্নিসংযোগ করে, নারী ও শিশুদের উপর নির্যাতন করে। হত্যার পর জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নেতৃত্বে জাতীয় নেতৃবৃন্দ নিয়ে ১৮/২০ হাজার লোকের সমন্বয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে পরবর্তীতে সফল লড়াই করেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘সারা দেশে আদিবাসীদের উপর নির্যাতন হচ্ছে। সরকারের নিকট অবিলম্বে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করন ও পৃথক স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠনসহ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

নিহত আলফ্রেড সরেনের ছোট ভাই মহেশ্বর সরেন বলেন , ‘আসামিরা এখনও আমাকে হত্যার হুমাক দিচ্ছে। ৬৩ বিঘা জমির মধ্যে ৩৩ বিঘা জমি তারা নিয়ে নিয়েছে। বাকি ৩০ বিঘা জমিরও ভূমি অফিসের যোগ সাজসে চেক কেটে নিয়েছে। আমার ভাই হত্যার পর আদিবাসীরা অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছে বিচারের দাবিতে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।’

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সবিন মুন্ডা জানান, ‘এতোসব আশঙ্কার মধ্যেও ১৮ আগস্ট পালিত হবে নিহত আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেনের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে আজ বেলা ১১টায় ভীমপুরে আলফ্রেড সরেনের সমাধীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো, ১ মিনিট নিরবতা, সমাধি প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা ও স্থানীয় কদমতলীর মোড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে।’

এছাড়া, জেলা বাসদের উদ্যোগে কদমতলীর মোড় থেকে আলফ্রেড সরেনের সমাধি পর্যন্ত পদযাত্রার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

এআই// 


 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি