ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৮ অক্টোবর ২০২৪

বাগেরহাটে জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ 

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৬:৫৫, ২৩ আগস্ট ২০২০

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের চেয়ে জোয়ারের পানিতে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাগেরহাটের চিংড়ি চাষীদের। গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে জেলার ৫ হাজার চিংড়ি ঘের। এর ফলে শত কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেক চাষী। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমান এখনও জানাতে না পারলেও চাষীদের ক্ষতি পোষাতে সরকারি বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন মনে করছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, অতিবৃষ্টি ও ভরা মৌসুমে জোয়ারের পানি কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এর ফলে জেলার বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল, মোংলা, চিতলমারী এই ৬ উপজেলার প্রায় ৫ হাজার মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। এতে চাষীদের বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তবে এর মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে মোংলা ও মোরেলগঞ্জের চাষীদের। মোংলায়  এক হাজার ৭৬৫ এবং মোরেলগঞ্জে ২ হাজার ২৬৫ ঘের ডুবেছে জোয়ারের পানিতে।সরকারি হিসেবে আম্পানের আঘাতে বাগেরহাট জেলায় চার হাজার ৬৩৫টি মৎস্য ঘের তলিয়ে চাষীদের দুই কোটি ৯০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছিল। এসময়ও চাষীরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরও বেশি দাবি করেছিলেন। জোয়ারের পানিতে এত বেশি ক্ষতি হবে এটা কখনও চিন্তাও করতে পারেননি চিংড়ি চাষীরা।

রামপাল উপজেলার কাজী কামরুল ইসলাম বলেণ, ঘূর্ণিঝড় আম্পান  আমাদের চার ভাইয়ের প্রায় ৫‘শ বিভাগ ঘেরে ২ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়। পরে ধার দেনা করে আবারও চাষ শুরু করি। গত ১৫ দিন ধরে মাছ বিক্রি শুরু করেছি। এর মধ্যেই জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে ঘেরের কয়েক কোটি টাকার মাছ। এই পানি কমার পরে আসলে কি পরিমান মাছ ঘেরে থাকবে আল্লাহ ভাল জানেন। এবার যদি ভাল দামে অনেক মাছ বিক্রি করতে পারতাম তাহলে আম্পানের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব ছিল। সব শেষ হয়ে গেল।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঘষিয়াখালী এলাকার ঘের ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, জোয়ারের পানিতে আমাদের মাঠের ঘেরগুলো সব তলিয়ে গেছে। একাকার হয়ে গেছে সব ঘের। সবাই এখন ঘেরের মাছ রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টায় ব্যস্ত। আজকে থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমার পরে চাষীরা বুঝতে পারবে কি হারিয়েছি। অনেককেই পুঁজি হারিয়ে চিংড়ি চাষ বন্ধ করে দিতে হবে।

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আম্পানের পরে আমরা ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। যখনই চাষীরা মাছ বিক্রি শুরু করল তখন জোয়ারের পানিতে ঘের গুলো তলিয়ে মাছ গুলো ভেসে গেল। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে আমাদের চাষীদের শত কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক বলেন, জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের ৬টি উপজেলার প্রায় ৫ হাজার মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। টাকার অংকে চাষীদের কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়টি নিরুপন করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছি আমরা। কাজ শেষে আমরা জানাতে পারব আসলে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে।তবে চাষীদের ক্ষতি পোষাতে সরকারি বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহনের দাবি জানান মৎস কর্মকর্তা।

বাগেরহাট জেলায় প্রায় ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে ৭৮ হাজার বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘেরে চিংড়ি চাষ হয়েছে। গত অর্থ বছরে সাড়ে ১৬ হাজার মেট্রিক টন বাগদা ও সাড়ে ১৫ হাজার মেট্রিক টন গলদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল বাগেরহাট জেলায়।
কেআই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি