ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৫ অক্টোবর ২০২৪

একজন শিক্ষকই চালাচ্ছেন ১৭৪ জন শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়!

সরাইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৪:৫৪, ২৯ অক্টোবর ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে দিয়েই চলছে পাঠদান। একটি ক্লাসে শিক্ষক গেলে অন্য ক্লাসগুলো থাকে ফাঁকা। ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭৪। শিশু থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত সব ক্লাসই সামলাতে হচ্ছে ওই শিক্ষককে। 

যদিও উপজেলা সদরের আশপাশে বিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে ৮ থেকে ৯ জন শিক্ষক। অথচ এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক জয়ন্ত কুমার ধরকে উপজেলা শিক্ষা অফিসে আনা হয়েছে, শিক্ষা অফিসারে সহযোগীতার জন্য। যার কারণে বিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রমে বেঘাত ঘটছে। 

গত সোমবার সকালে ওই স্কুলে সরেজমিনে গেলে এচিত্র দেখা যায়।

সোমবার (২৫ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী টিনা আক্তার ক্লাস নিচ্ছে। শিক্ষক না থাকায় সে মাঝে মধ্যেই ক্লাস নিয়ে থাকে। ২০১৮ সাল থেকে একজন শিক্ষক দিয়েই জোড়াতালির মাধ্যমে চলছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করে চলেছেন সহকারী শিক্ষক শেফালী বেগম।

বিদ্যালয়ে ৯টি পদ থাকা সত্ত্বেও রয়েছেন মাত্র ৪ জন শিক্ষক। এদের মধ্যে সহকারী শিক্ষক মনি দাস গত আগস্ট মাস থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় সহকারি শিক্ষক নার্গিস আক্তার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনিও মাঝে মধ্যে বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান। 

বিদ্যালয়ে উপস্থিত না পেয়ে তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অফিসের কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিসে রয়েছেন।

সহকারী শিক্ষক জয়ন্ত কুমার ধর ২০১৭ সালে ২৭ মার্চ অত্র বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে তিনি আর আসেন না। হাজিরা খাতায় তার নাম লেখা থাকলেও করোনাকালীন সময়ের পর বিদ্যালয় খোলা হলে হাজিরা খাতায় তার উপস্থিতি নেই। 

জানা গেছে, তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসের বড় কর্তার খেদমতে ব্যস্ত সময় কাটান। সদর উপজেলায় বাড়ি হওয়ায় তার রয়েছে অনেক দাপট। এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, তার পিতা ছিলেন একজন ভালোমানের শিক্ষক। 

এ বিষয়ে সহকারি শিক্ষক জয়ন্ত ধর বলেন, আমাকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার অফিসের কম্পিউটার অপারেটরের কাজ করাচ্ছেন। ঊর্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে যে নির্দেশ দেন, তা আমাকে পালন করতে হয়। 

অভিভাবকদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকট থাকলেও শিক্ষা অফিসার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এ কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের কিন্ডার গার্টেনে নিয়ে পড়ালেখা করাচ্ছেন।

বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খাদেম বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট ও শিক্ষকদের অনুপস্থিতি বহুদিন যাবৎ ধরে এ সমস্যা চলছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের সাথে বহুবার আলোচনা করেছি, তবুও তাহারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। এতে এলাকার ছাত্রছাত্রীরা সুশিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।   

সরাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল আজিজ বলেন, একজন শিক্ষক দ্বারা বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে এ বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। জনবল কম থাকায় মৌখিক নির্দেশে এই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জয়ন্ত কুমার ধরকে শিক্ষা অফিসের কাজ করতে হচ্ছে। 

নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ হলে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান তিনি।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি