ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ড্রেজার ডুবে নিখোঁজ ৮ শ্রমিকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:৫৬, ২৬ অক্টোবর ২০২২

চট্রগ্রামের মিরসরাইয়ে ড্রেজার ডুবে নিখোঁজ ৮ শ্রমিকের বাড়ি পটুয়াখালীর জৈনকাঠী এলাকায় চলছে শোকের মাতম। চার ভাইসহ একই গ্রামের ৮ জনের নিখোঁজের হওয়ায় পুরো গ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। 

আত্মীয়-স্বজন হারানোর কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে গেছে এলাকার বাতাস । চারদিকে শুধু শোকর্ত মানুষের ভীড়। 

তারা আটজনই  সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন সৈকত-২’র শ্রমিক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। 

নিখোঁজ শ্রমিকরা হলেন শাহিন মোল্লা (৩৮), তার ছোট ভাই  ইমাম মোল্লা (৩২), তাদের চাচাতো ভাই মাহমুদ মোল্লা (৩২) ও তারেক মোল্লা (২২) এবং প্রতিবেশী  আল-আমিন (২৫), বাসার হাওলাদার (৩৫), জাহিদ ফকির (২৮) ও আলম সরদার (৩২)। তাদের সবার বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠী ইউনিয়নের চর জৈনকাঠী গ্রামে। 

এদের মধ্যে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে আল-আমিনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। আল-আমিন চর জৈনকাঠী গ্রামের রহমান ফকিরের ছেলে।

শাহিনের ছোট্ট তিন সন্তান ও তার গর্ভবতী স্ত্রী খাদিজা বেগমের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে আকাশ ও বাতাস।

শাহিন মোল্লা ও ইমাম মোল্লার মা হাসিনা বেগম জানান, “আমার ছেলেরা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ওই ট্রেজারে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতো। কোরবানীর আগে বাড়িতে এসেছিল তারা।  দুইদিন বাড়ি থেকে বড় ছেলে শাহিন কাজের উদ্দেশ্যে মীরসরাইয়ে চলে যায়। একমাস পরে ছোট ছেলে ইমাম ওই ড্রেজারে কাজে যায়। আর এখন দুই ছেলের নিখোঁজের খবর পেলাম।”

তিনি আরও বলেন, ছোট ছেলে বিবাহ করেছে কোরবানি পরে। তবে তার বউ বাবার বাড়ি থাকে,  তুলে আনা হয়নি। 

একই বাড়ির মাহমুদের মা মনোয়ারা বেগম ও তারেকের মা সাহিদা বেগমও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মনোয়ারা বেগম জানান, তার পাঁচসন্তানের মধ্যে মাহমুদ অবিবাহিত এবং ওই ড্রেজারে কাজ করতো। আর মাহমুদ ও তারেক চাচাতো ভাই।সন্তানদের মরদেহ বাড়িতে এনে দাফনে সরকারের দাবি জানান তারা।

পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারেক মোল্লার বাবা আব্দুর রহমান। 

অপরদিকে, আল-আমিন হাওলাদার, বাসার হাওলাদার, জাহিদ ফকির ও আলম সরদারদের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। 

শাহিন মোল্লা ও ইমাম মোল্লার মেঝ ভাই মোঃ এনায়েত মোল্লা মঙ্গলবার রাতে মোবাইলে জানান, সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে শাহিন ও ইমামের সাথে সর্বশেষ কথা হয়। ঝড়ের মধ্যে তারা তখন ভালোই ছিল। ওদের বন্ধু পার্শ্ববর্তী ড্রেজারের শ্রমিক জহিরুল ইসলাম, সে রাত ৯টার দিকে ওদের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানায়। 

পরে মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। রাত ৯টার দিকে আল-আমিনে লাশ উদ্ধার করলেও অন্যরা নিখোঁজ রয়েছেন।  

মীরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ কবির হোসেন জানান, একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে । অন্য নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। 

জৈনকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মাদ সৈয়দ মহসিন জানান, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। তাদের মরদেহগুলো উদ্ধার করে বাড়িতে আনার জন্য উদ্যোগ নেয়া উচিত। 

চট্টগ্রামের মীরসরাইর বেড়িবাঁধ থেকে ৫০০ ফুট দূরত্বে সাগরের মাঝে রাখা ছিল সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন সৈকত-২। ওই ড্রেজারে শ্রমিক হিসাবে কর্মরত ছিলেন তারা সবাই।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে সাগরে থাকা ড্রেজারটি ডুবে নিখোঁজ হয় তারা সবাই। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে আল-আমিন  নামের এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। অন্য ৭ জন এখনও  নিখোঁজ রয়েছেন। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি