বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস আজ
বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় বিপন্ন হচ্ছে প্রাণী
প্রকাশিত : ০৮:৫০, ৩ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ০৮:৫৩, ৩ মার্চ ২০১৮
বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস আজ ৩ মার্চ। বন্যপ্রাণীকে তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান নিয়ে মৌলভীবাজারে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। দিবসটিকে সামনে রেখে শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ বণ্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন আজ লাউয়াছড়া বনে অবমুক্ত করবে বেশ কিছু বন্যপ্রাণী। এ ছাড়া আরও কয়েকটি সংগঠনও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে বলে জানা গেছে।
দেশের বন্যপ্রাণী বিচরণকারী এলাকার মধ্যে একটি হচ্ছে মৌলভীবাজার। একসময় মৌলভীবাজার জেলা ছিল ঘন বনাঞ্চলে ভরা। যে কারণে এ জেলায় আবাসস্থল ছিল প্রচুর বন্যপ্রাণীর। কিন্তু সময়ের আবর্তে বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় এবং বনাঞ্চলে আবৃত হাজার হাজার একর সরকারি খাস ভূমি দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ এবং আনারস, লেবু ও পান বাগান করাসহ বিভিন্নভাবে জঙ্গল উজাড় করে প্রকৃতি পরিবর্তন করার ফলে এ জেলার বন্যপ্রাণীরা আজ বিলুপ্তির পথে।
বিলুপ্তির অবশিষ্টাংশ লাউয়াছড়া বন কিছু বন্যপ্রাণীর শেষ আশ্রয়স্থল হলেও লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে যাওয়া রেললাইন, সড়ক, বৈদ্যুতিক লাইন, লেবু বাগান ও বাড়িঘর নির্মাণসহ নানা কারণে এখানেও বন্যপ্রাণীগুলো বসবাস করছে ঝুঁকির মধ্যে। ফলে মারা পড়ছে অসংখ্য বন্যপ্রাণী।
এ ছাড়া এ জেলায় বন্যপ্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত ছিল সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জের পশ্চিম ভানুগাছ বন, আদমপুর বন বিট, কুরমা বন বিট, কালাছড়া বন বিট, কুলাউড়ার মনছড়া বন বিট, বড়লেখার মাধবকুণ্ড পাতারিয়া বনাঞ্চল, মৌলভীবাজার সদরের বর্ষিজোড়া বন, জুড়ির সাগরনাল ও শ্রীমঙ্গল সাতগাঁও বন বিটসহ আরো কয়েকটি বন।
অপরদিকে লাউয়াছড়া বন এটি শত বছরের জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ একটি বন। যার ভেতর দিয়ে গেছে রেললাইন। এ লাইন দিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি ট্রেন অতিক্রম করে। একই সঙ্গে এর ভেতর দিয়ে পাকা সড়কে গাড়ি চাপায় এবং বিদ্যুৎ লাইনে লেগে প্রাণ হারায় বাঘ, হরিণ, সাপ, বানর, উল্লুকসহ বিভিন্ন পশুপাখি। বনের ভেতরে রয়েছে পর্যাপ্ত জলাধারের অভাবও।
অন্যদিকে ঝোপঝাড় কেটে ফেলায় ওই সব এলাকায় বসবাসকারী বন্যপ্রাণী গ্রামের ভেতর এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে গিয়ে মানুষের হাতে কখনো মারা পড়ে, কখনো বন্দি হয়। বিভিন্ন সময় লাউয়াছড়া বনেরও কিছু প্রাণী লোকালয়ে ছুঠে গিয়ে ধরা পড়ে মানুষের হাতে। এই প্রাণীগুলোকে উদ্ধার করে আবার বনে অবমুক্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মিহির কান্তি দে জানান, এই বনের জীববৈচিত্র্য ধরে রাখতে তারা প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তারা লাউয়াছড়ার সীমানা নির্ধারণ করে ফিলার স্থাপন ও বনের ভেতরে স্থাপিত অবৈধ লেবু বাগান উচ্ছেদ করেছেন। বেশ কিছু গাছ চোরকে ধরে মামলাও দিয়েছেন।
সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, লাউয়াছড়ার বন্যপ্রাণী ও পশুপাখির সংখ্যা বেড়েছে। গাছপালা উজাড় কম হচ্ছে বলেই তা সম্ভব হচ্ছে। তবে বনের পরিধি বাড়ানো দরকার। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপে বনের ভেতর বসবাসকারীদের স্থানান্তরিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৮ তম অধিবেশনে থাইল্যান্ড আন্তৰ্জাতিক বিলুপ্তপ্ৰায় বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদের বাণিজ্য সম্মেলনে ৩ মার্চকে, বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানায়। বিশ্বের বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদকূলের প্রতি গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা এই দিবসের মূল লক্ষ্য।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত বিবরণীতে, বন্যপ্ৰাণীদের অপরিহার্য মূল্য এবং বিভিন্ন অবদানের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়; যেমন- পরিবেশগত, জিনতাত্ত্বিক, সামাজিক, অৰ্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষাবিষয়ক, সাংস্কৃতিক, বিনোদনমূলক এবং নান্দনিক বিষয়ের সাথে যুগসই উন্নয়ন এবং মানবকল্যাণের দিকে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
২০১৩ সালের ৩ থেকে ১৪ মার্চে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত আন্তৰ্জাতিক বিলুপ্তপ্ৰায় বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদের বাণিজ্য সম্মেলনের (CITES) ১৬তম সভায়, বিশেষ রেজ্যুলেশন কনফ. ১৬.১-এর মাধ্যমে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মার্চকে, বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস হিসেবে ঘোষণা করার হয়।
এসএ/
আরও পড়ুন