ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

সুনামগঞ্জে হাওর সম্মেলন-২০১৮

হাওরবাসীর উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন চাই 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৩০, ১৮ মার্চ ২০১৮

বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবস্থিত হাওর অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। হাওর অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত করার কর্মকৌশল প্রণয়নের লক্ষ্যে পিকেএসএফ আয়োজন করে দিনব্যাপী “হাওর সম্মেলন- ২০১৮”। সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিন সুনামগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

পিকেএসএফ-এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবেউপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী এম. . মান্নান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট শামছুন নাহার বেগম, সুনামগঞ্জ-১ এর সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক।

এছাড়াও পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম।  

সম্মেলনে বক্তারা হাওর অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা, জনগোষ্ঠীর প্রকৃতি, চ্যালেঞ্জসমূহ এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডের ক্ষেত্রসমূহ (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, অবকাঠামো, ইত্যাদি) বিবেচনা করে সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মতামত প্রদান করেন।

পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তবে বৈষম্য বাড়ছে। বৈষম্য না কমিয়ে কখনই টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব হবে না। উন্নয়ন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন জনবান্ধব নীতি উন্নয়নের জন্য আবশ্যক।

তিনি বলেন, বাস্তব অভিজ্ঞতা, মানুষের চাহিদা, রূপকল্প ২০২১, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, সরকারি নীতিমালা সকল কিছু নিয়ে পিকেএসএফ তার কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে এবং মানুষকে কেন্দ্র করে সমন্বিত ভাবে তা বাস্তবায়ন করে। পিকেএসএফ হাওর এলাকায় তার কাজের পরিধি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেছে এবং মানব কেন্দ্রিক কাজ নিয়ে পিকেএসএফ হাওরবাসীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।  মানুষ এগিয়ে যাবে, দেশ এগিয়ে যাবে তবে কাউকে বাদ দিয়ে নয়। টেকসই উন্নয়ন কেবল তখনই অর্জিত হবে যখন সকল মানুষ উন্নয়নের বলয়ের মধ্যে আসবে।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রতিমন্ত্রী এম.এ. মান্নান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থ আছে তবে অভাব আছে শুধু যথাযথ ব্যবস্থাপনা, সমন্বয় এবং সময় অনুযায়ী পদক্ষেপ। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু অপচয় হয় উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন  তা সত্ত্বেও সরকারি উদ্যোগের সুফল জনগণ পাচ্ছে এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তা আরও বেগবান করা সম্ভব বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের নানা উদ্যোগ বেশ প্রশংসনীয় তবে তাদের সমস্যা হচ্ছে দাতা সংস্থার অর্থায়নে গৃহীত এ সকল প্রকল্প মাঝ পথে থমকে যায়, দীর্ঘমেয়াদী হয়না যা টেকসই উন্নয়ন অর্জনে বড় বাধা এবং এই বাধা দূর করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান এম. এ. মান্নান। হাওর অঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছার কথা তিনি ব্যক্ত করেন এবং সরকারি বেসরকারি সকল উদ্যোগ সমন্বিতভাবে সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরও বলেন হাওর মাছ চাষের জায়গা নয়, মাছের জায়গা। তাই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি ।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল করিম বলেন দেশের মোট জনসংখ্যার এক বৃহৎ অংশ হাওর এলাকায় বসবাসরত যার অধিকাংশই হাওরবাসী এখনও দারিদ্র্য পীড়িত। বাংলাদেশ যে গতিতে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করছে, সেই তুলনায় হাওর এলাকাগুলো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। হাওর অঞ্চল বছরের ৬-৭ মাস পানিতে প্লাবিত থাকে। এসময় সীমিত পরিসরে মাছ ধরা ছাড়া দরিদ্র হাওরবাসীর তেমন কোন কাজ থাকে না। অপরদিকে, হাওরে শুষ্ক মৌসুমে এক ফসলী জমিতে শুধুমাত্র বোরো ধান চাষ হয়। অর্থাৎ, কর্মসংস্থানের বৈচিত্র্য এবং বছরব্যাপী নিয়মিত আয়ের সুযোগ এখানে সীমিত, যার ফলে হাওরবাসী দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। হাওর অঞ্চলের বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ কি তা নিয়ে আলোচনা করেন এবং প্রাথমিকভাবে করণীয় বিষয়সমূহ তুলে ধরেন। 

সংসদ সদস্য এডভোকেট শামসুন নাহার বেগম বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাওর অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন। সেইদিক থেকে বিচার করে উন্নয়নকে টেকসই করার জন্য হাওরবাসীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রতি তিনি জোর দেন।

মুহিবুর রহমান মানিক তার বক্তব্যে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে যথাযথ পরিকল্পনা নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। হাওর অঞ্চলে গৃহীত নানা প্রকল্প যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে গৃহীত না হওয়ার ফলে অর্থ অপচয় হচ্ছে বলে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। হাওর অঞ্চলে উন্নয়ন টেকসই করতে হলে জনগণের সম্পৃক্ততা আরও বৃদ্ধি করার বিষয়ে তিনিও জোর দেন।

ড. জয়া সেনগুপ্তা তার বক্তব্যে হাওর অঞ্চলে দূর্যোগ সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি সার্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। হাওরে বন্যার সময় গৃহীত সরকারি নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি এবং আশা প্রকাশ করেন হাওর অঞ্চলে সরকারি বেসরকারি উন্নয়ন উদ্যোগসমূহ সমন্বিতভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং সার্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। 

জনাব মোয়াজ্জেম হোসেন রতন তার বক্তব্যে বলেন, জনপ্রশাসনে জনবলের সংকট হাওর অঞ্চলে উন্নয়নের ধারাকে তরান্বিত করার পথে একটি বড় বাধা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষকের সংকট এবং হাসপাতালে ডাক্তারের সংকট দ্রুত দূর করার জন্য উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে জোর দেন তিনি। এর পাশাপাশি হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন করতে হবে তবে তা যেন প্রকৃতি বান্ধব হয় সেই বিষয়টির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে বলে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

সম্মেলনের প্রথম সেশনে হাওরে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগসমূহের ওপর ২টি উপস্থাপনা প্রদান করা হয়। ‘হাওরে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়নঃ বেসরকারি উদ্যোগ’ বিষয়ে উপস্থাপনা প্রদান করেন পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন), ড. মো. জসীম উদ্দিন এবং ‘হাওরের টেকসই উন্নয়নঃ সরকারি উদ্যোগ’ শীর্ষক  উপস্থাপনা প্রদান করেন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর-এর পরিচালক (জলাভূমি) ড. মো. রুহুল আমিন।

দিনের ২য় ভাগে "সরকারি ও বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে হাওরে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর টেকসই  উন্নয়নঃ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা" শীর্ষক কারিগরি সেশন অনুষ্ঠিত  হয়।

কারিগরি সেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। হাওর ও হাওরবাসীর টেকসই উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ ও করণীয় এবং হাওর ও হাওরবাসীর টেকসই উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বিত উদ্যোগের রূপরেখা সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য দিক নির্দেশনা পাওয়ার উদ্দেশ্যে এই সম্মেলন আয়োজন করে পিকেএসএফ। (বিজ্ঞপ্তি)

 এমএইচ/এসি       

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি