ঢাকা, রবিবার   ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পদ্মায় নৌকা ডুবি:

মেয়েকে ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়ে ডুবে যায় আঁখি

রাজশাহী প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১৮:১৫, ৮ মার্চ ২০২০

ভাই সনিয়াকে বাঁচাও। এরপর আঁখি তার চার বছর বয়সের মেয়ে সনিয়াকে বড় ভাই কিরণের হাতে ধরিয়ে দেয়। এরপর পানির নিচে তলিয়ে যায় আঁখি খাতুন (২৫)। রোববার বিকেল ৩টার দিকে চারঘাট উপজেলার টাঙ্গন এলাকায় ভেসে উঠে আঁখি লাশ। 

এর আগে দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থলের অদুরে জেলের জালে আটকা পড়ে নিখোঁজ রুবাইয়া খাতুন স্বর্ণার (১২) লাশ। পরে উদ্ধার কর্মীরা তার লাশ পড়ে নিয়ে আসে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় আট জনে।

উদ্ধার স্বর্ণার বাবার নাম রবিউল ইসলাম রবি। তাদের বাড়ি পবায় উপজেলার আলীগঞ্জ মোল্লাপাড়া। স্বর্ণা কনে সুইটি খাতুন পুর্ণির ফুপাতো বোন। আর করে পুর্ণির খালা আাঁখি খাতুন ডাইঙ্গেরহাট গ্রামের আবু হোসেনের মেয়ে। আাঁখির স্বামীর নাম আসাদুজ্জামান জনি। তার বাড়ি নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার হড়গ্রাম পূর্বপাড়ায়।

আঁখির ভাই কিরণ বলেন, ১০/১২ হাত দূর থেকে তার বোন আঁখি তাকে ডাক দিয়ে বলে ভাই সনিয়াকে বাঁচাও। এরপর আমি তার দিকে এগিয়ে গেলে সনিয়াকে আমার হাতে ধরিয়ে দেয়। আমি সনিয়াকে নিয়ে উদ্ধারকারি বালুবাহী নৌকাতে উঠে যায়। এরপর তাকিয়ে দেখি আঁখি আর নেই। সনিয়াকে নৌকায় রেখে গিয়ে আবার পানিতে নেমে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। কিন্তু পায়নি। মেয়েকে বাঁচিয়ে নিজেই পদ্মায় তলিয়ে গেল আমার বোন। 

দমকল বাহিনীর রাজশাহীর সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুর রউফ বলেন, বৌভাতের অনুষ্ঠানের দুটি নৌকা ডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট জনে। এখনো কনে সুইটি খাতুন পুর্ণি (২০) নিখোঁজ রয়েছেন। তাকে খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। 

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে হাফ কিলো দূরে পদ্মায় মাছ ধরা জেলের জালে স্বর্ণার লাশ আটকা পড়ে। পরে তারা জেলেরা উদ্ধার কর্র্মীদের জানায়। দুপুর ১টার দিকে তারা গিয়ে স্বর্ণার লাশ উদ্ধার করে পদ্মার পাড়ে নিয়ে যায়। আর ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৬/৭ কিলোমিটার দূরে আঁখির লাশ ভেসে উঠে। জেলেরা লাশ ভাসতে দেখে তাদের খবর দেয়। 

আব্দুর রউফ বলেন, সকাল ১০টার দিকে অভিযান শুরু হয়। বেলা ১১টার দিকে তারা দ্বিতীয় নৌকার সন্ধ্যান পায়। সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। অপর নৌকাটি শনিবার বিকেলে উদ্ধার করা হয়েছে। 

নৌ-পুলিশের রাজশাহী থানার ওসি মেহেদী মাসুদ জানান, শনিবার ছয়জনের লাশ পরিবারের কাছে হ্স্তান্তর করা হয়। রাতে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ দাফনের জন্য নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে রাজশাহী শহরের শ্রীরামপুরের বিপরিতে চরখিদিরপুর মধ্যপদ্মায় ৩৬ যাত্রী নিয়ে দুই নৌকা ডুবে যায়। পরে দমকল, বিজিবি, নৌ-পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ’র ডুবুরি দল যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ছয়জনের লাশ উদ্ধার করে।

নিহতরা হলেন, কনের বড় বোন শাহীনুর বেগমের স্বামী রতন আলী (৩০), তাঁদের মেয়ে মরিয়ম খাতুন (৫), চাচা শামীম হোসেন (৩৫), চাচি মিনা খাতুন (৩০), চাচাতো বোন রশ্নি (৭), খালাতো ভাই এখলাস আলী (২২), কনের ফুপাতো বোন রুরাইয়া খাতুন স্বর্ণা (১২) ও খালা আঁখি খাতুন (২৫)।

কেআই/আরকে
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি