ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাব
বলেশ্বরে পানি বৃদ্ধি, লোকালয় প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা
প্রকাশিত : ১৭:০০, ২০ মে ২০২০ | আপডেট: ১৭:১৯, ২০ মে ২০২০
শরণখোলাস্থ বলেশ্বর নদী তীরবর্তী বাঁধের চিত্র।-ছবি সংগৃহীত।
বাগেরহাটের শরণখোলাবাসীর আশঙ্কাই যেন ভয়ঙ্কর বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে আজ বুধবার দুপুর নাগাদ উপজেলার কোলঘেষা বলেশ্বর নদীর পানি ৭ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। সাউথখালী ইউনিয়নের বগী ও গাবতলা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ উপচে যে কোন সময় প্লাবিত হতে পারে লোকালয়।
এদিন বেলা ১১টার দিকে শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজারের পূর্বপাশে বলেশ্বর নদী সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেয়। ভাঙ্গনের স্থান থেকে লোকালয়ে পানি ঢোকার উপক্রম হয়। প্রথমে সেখানে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্কাভেটর দিয়ে ভাঙ্গন কবলিত স্থানে মাটি দেওয়া শুরু করে।
এদিকে মূল বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বলেশ্বর নদী সংলগ্ন খুড়িয়াখালী গ্রামে রিং বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। বুধবার সকাল ১০টার দিকে খুড়িয়াখালী গ্রামের শাহজাহান মোল্লার বাড়ির সামনের রিং বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢোকা শুরু করেছে। খুড়িয়াখালী গ্রামের আরিফুল আল মামুন বলেন, সকালে শাহজাহান মোল্লার বাড়ির পাশ থেকে গ্রামরক্ষার জন্য দেওয়া রিং বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢোকা শুরু করে। পানির গতি অনেক বেশি।
বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে পানি।-ছবি একুশে টিভি।
বগী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নদীর পানির যে অবস্থা বিকেল নাগাদ হয়ত লোকালয়ে পানি ঢুকে যাবে। এই অবস্থা হলে বগী, গাবতলা, চালিতাবুনিয়া ও খুড়িয়াখালী গ্রাম প্লাবিত হয়ে যাবে। আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে হয়তো জীবন বাঁচানো যাবে। কিন্তু গবাদিপশু ও মূল্যবান জিনিসপত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে।
শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বগী ও গাবতলা গ্রাম সংলগ্ন বাঁধের অবস্থা খুব খারাপ। বলেশ্বর নদীর পানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির বেগ বৃদ্ধি পেলে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয় প্লাবিত হয়ে যাবে।
গাবতলা গ্রামের ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ শাহিনুজ্জামান বলেন, সাউথখালী ইউনিয়নের মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকার লোকজন বেশিরভাগই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। বলেশ্বর নদীল পানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে বগী ও গাবতলা এলাকার বেড়িবাঁধটি অধিক ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেই বাঁধ উপচে লোকালয় প্লাবিত হবে। খুড়িয়াখালী গ্রামে যে বাঁধটি ভেঙ্গেছে সেটা সরকারি কোন বাঁধ নয়। এটি মূল বাঁধের বাইরে থাকা কিছু পরিবারের নিজেদের দেওয়া একটি প্রতিরক্ষা বাঁধ। বাঁধটি ভাঙ্গায় কিছু মানুষ সমস্যায় পড়েছে সত্যি। তবে মূল গ্রামে এর তেমন কোন প্রভাব পড়বে না।
তিনি আরও বলেন, দুপুর পর্যন্ত আমরা শরণখোলা উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়েছি। তাদেরকে শুকনো খাবার দাবার দেওয়া হয়েছে। এখনও অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন। রোজাদাররা ইফতার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন। এছাড়া যারা ঝুকিপূর্ণ বাড়িতে রয়েছেন তাদেরকে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাহিদুজ্জামান খান বলেন, শরণখোলা এলাকায় বলেশ্বর নদীর পানি প্রায় সাতফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। রায়েন্দা বাজারের পাশে বাঁধে যে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে আমরা কাজ শুরু করেছি। এছাড়া বগী ও গাবতলা এলাকার বেড়িবাঁধের দিকে আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেলে ওই এলাকায়ও তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরু করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
এনএস/
আরও পড়ুন