ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

করোনা ভাইরাস 

যশোর রোডে আটকে রয়েছে সীমান্ত বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ

জামাল হোসেন, বেনাপোল

প্রকাশিত : ২০:১৭, ২৩ মে ২০২০ | আপডেট: ২০:২৯, ২৩ মে ২০২০

ভারত সীমান্তে আটকা পড়ে আছে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল চেকপোস্টের বিপরীতে পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিং ও বনগাঁ পৌরসভার কালিতলা পার্কিং এ। এই দুই পার্কিং এ আটকে থাকা দুই হাজার তিন'শ পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে পারছে না ওপারের স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিরোধের কারণে। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাসের আশঙ্কার কারণে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী পরিবহন এবং চলাচলের ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে দীর্ঘদিন ধরেই। 

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল। ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের বেশিরভাগ অংশ বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সম্পূর্ণ হয়। গত বছর ভারত বাংলাদেশে ২৯.২১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল। আর বাংলাদেশ ভারতে রফতানি করেছিল ১.২২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। প্রায় ৫০০ ট্রাক পণ্য দৈনিক ভিত্তিতে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরে আসা যাওয়া করত। এছাড়া রেল পথে বাণিজ্য চলে দু‘দেশের মধ্যে। স্থলপথে বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও পেট্রাপোল-বেনাপোল রেল পথে বাণিজ্য চলছে। লক ডাউনের মধ্যে কয়েকশ‘ টন ফ্লাই অ্যাশ এসেছে ট্রেনে।

ওপারের সিএন্ডএফ সূত্রে জানা গেছে, সেন্ট্রাল পার্কিং এ ২৩১টি ট্রাক আটকে আছে, বনগাঁ পৌর সংস্থার পরিচালিত কালিতলা পার্কিং এ আরও ৫৭২টি ট্রাক পার্ক করা আছে এবং প্রায় ১৩০০ ট্রাক লোডিং-আনলোড এর কাজের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়াও ভারত সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত বিভিন্ন প্রাইভেট পার্কিংগুলিতে পার্ক করা আছে কিছু ট্রাক।  

ভারতে পশ্চিমবঙ্গে লকডাউন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে ২৩ মার্চ বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি ট্রাক চলাচল প্রথম বন্ধ হয়। এরপরে, কেন্দ্র সরকার একটি লকডাউন ঘোষণা করেছিল যা ২৫ মার্চ থেকে শুরু হয়েছিল। ৩০ এপ্রিল থেকে ২ মে এর মধ্যে ট্রাক চলাচল আবার শুরু  হয়েছিল, যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডের ‘জিরো পয়েন্টে’ 
লোডিং-আনলোডিং এর কাজ চালু হয়। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক সমস্যার পরে ট্রাক চলাচল ফের বন্ধ হয়ে যায়। ৩০ এপ্রিল, ভুট্টা ও পাট বীজ বহনকারী দুটি ট্রাককে ‘জিরো পয়েন্ট’পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া  হয়েছিল। পরের দিন, ১ মে ছুটি ছিল। ২ মে ও প্রায় ১৩ টি ট্রাক থেকে পণ্য জিরো পয়েন্টে আনলোডিং করে দেয় বাংলাদেশের ট্রাকে। এর একদিন পরে, তৃণমূল কংগ্রেস-সমর্থিত ট্রেড ইউনিয়ন যার বেশিরভাগ শ্রমিক এবং ক্লিয়ারিং এজেন্টদের নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের সদস্যদের স্বাস্থ্য উদ্বেগের কারণ জানিয়ে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য নিয়ে আপত্তি তোলায় আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। 

‘এপ্রিলের শেষের দিকে কাজ শুরু হওয়ায় সাথে সাথে সামাজিক দূরত্বের নিয়মাবলী বা পিপিই প্রাপ্যতার মতো বিষয়গুলি উঠে আসে। বেশিরভাগ শ্রমিক এবং ক্লিয়ারিং এজেন্টরা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোন রকম বীমা কভারেজ পান না। স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার উদ্বেগ বাড়ার সাথে সাথে ট্রাক চালকরাও এই অবস্থায় কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তাতেই সম্পূর্ণ ভাবে ব্যাহত হয় আমদানি-রফতানির কাজ।

পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, সীমান্তের স্থানীয় মানুষের দাবিকে উপেক্ষা করে আমরা পণ্য পরিবহন চালু করতে সক্ষম নই, এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের যৌথ সহযোগিতার প্রয়োজন। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন সীমান্ত বাণিজ্য চালু হবে খুব শীঘ্রই, আপাতত রেল পথ খোলা রয়েছে, এখন দেখার সময় সড়ক পথে কবে চালু হয় সীমান্ত বাণিজ্য। 

ভারতের স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে বনগাঁ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং সংলগ্ন বাজার প্রশাসনের পক্ষে ‘কন্টেনমেন্ট জোন’ ঘোষণা করা  হয়েছে। যশোর রোড (বনগাঁ-বেনাপোল), চাকদারোড ও বাগদা রোড কন্টেনমেন্ট জোনের আওতায়। 

সীমান্ত বাণিজ্যের সাথে যুক্ত অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের কথায় বনগাঁ শহরকে কন্টেনমেন্ট জোন হিসাবে ঘোষণা করায় যশোর রোডসহ বাগদা, চাকদা রোড অবরুদ্ধ রয়েছে। ফলে এই পথে কবে শুরু হবে যান চলাচল তা এখন স্থানীয় প্রশাসন ছাড়া কেউ জানেন না। জাতীয় সড়ক যশোর রোডেই আটকে পড়েছে সীমান্ত বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ। কারণ এটাই কলকাতা থেকে পেট্রাপোল ও ঢাকা থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে দু‘দেশের যাতায়াতের প্রধান সড়ক। আর সেটাই সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ বনগাঁ শহরে। 

ওপারের ব্যবসায়ীদের মন্তব্য স্বাস্থ্য সচেতনতা অপরিহার্য তবে যশোর রোড অবরুদ্ধ করে সাময়িক রাজনৈতিক লাভের কারণে দীর্ঘ অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ল সীমান্ত বাণিজ্য সঙ্গে বহু মানুষ হারালো তাঁদের রুজি-রুটি। 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি