কুপ্রাস্তাবে রাজি না হওয়ায়
গৃহবধূকে নির্যাতনকারী বর্বর সেই স্বামী-শাশুড়ি গ্রেপ্তার
প্রকাশিত : ১৭:১২, ২৯ মে ২০২০ | আপডেট: ১৭:২৫, ২৯ মে ২০২০
অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায় জেসমিন আরা নামে এক গৃহবধূর মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে হাতমুখ বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় অবশেষে অভিযুক্ত পাষণ্ড স্বামী আব্দুর রফিক ও শাশুড়ি রিজিয়া বিবিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার হাঁপানিয়া বেলডাঙ্গা গ্রামের এ ঘটনায় আজ শুক্রবার দুপুরে পাশের পত্নীতলা উপজেলার আলপাকা গ্রামের রফিকের ভগ্নিপতির বাড়ি হতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিকেলেই তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
পুলিশ ও গ্রামবাসী জানায়, গত ২৫ মে ঈদের দিন রাতে অনৈতিক কাজ করে অর্থ উর্পাজনের জন্য গৃহবধূ জেসমিন আরা রাজি না হলে তার মাথার চুল কেটে, হাত-মুখ বেধে অমানুষিক নির্যাতন চালায় রফিক ও তার মা রিজিয়া বিবি। নির্যাতনের একপর্যায় ওই গৃহবধুর শরীরের গোপন ও স্পর্শকাতর অঙ্গে মরিচের গুড়ো দিয়ে দুইদিন ধরে ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে নির্যাতিত গৃহবধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয় থানা পুলিশ। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আব্দুর রফিক ও তার মা-সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় বুধবার বিকেলে ভিকটিমের পিতা ইসলাম হোসেন বাদী হয়ে রফিক ও রফিকের মা রাজিয়া বিবিকে আসামি করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের জাহান আলীর ছেলে আব্দুর রফিক প্রায় দেড় বছর আগে পাশের চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামের ইসলাম হোসেনের মেয়ে জেসমিন আরাকে বিয়ে করে ঘর-সংসার শুরু করে। বিযের পর থেকেই অভাবের সংসারে নানা অজুহাতে তাদের মধ্যে কলহ বিবাদ চলে আসছিল।
চিকিৎসাধীন জেসমিন আরা বলেন, আমার স্বামী বিযের পর থেকে নানাভাবে আমাকে অসামাজিক কাজে নামাতে চাপ দিয়ে আসছিল। আমি বরাবর ওই বিষয়টিকে অসম্মতি দিয়ে আসছিলাম। এর জের ধরে ঈদের দিন সোমবার রাতে আব্দুর রফিক আবারো অসামাজিক কাজ করে অর্থ উপার্জন করার জন্য আমার উপর চাপ প্রয়োগ করে। এতে আমি রাজি না হওয়ায় আমার উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। প্রথমে আমার স্বামী আমার মাথার চুল ধরে মাটিতে ফেলে দেয় এবং কেচি দিয়ে আমার সমস্ত মাথার চুল কেটে ফেলে। এরপর চলে শারীরিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে পাষাণ্ড স্বামী ও শাশুড়ী রাজিয়া বিবি আমার গোপনাঙ্গে মরিচের গুড়ো ঢেলে দেয়। এতে অসহ্য যন্ত্রনায় চিৎকার করতে লাগলে রফিক আমার মুখে কাপড় গুজে দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়। সমস্ত রাত এবং পরের দিন তাকে বাড়ি হতে বের হতে না দিয়ে বাসায় গৃহবন্দি করে রাখে।
গত মঙ্গলবার বিষয়টি গ্রামে জানাজানি হলে এবং গ্রামের লোকজনের মুখে জানতে পেরে ওইদিন দুপুর ২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জেসমিন আরাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দেন।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে সাপাহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাই বলেন, এটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। বিষয়টি জানার পর পুলিশ পাঠিয়ে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে প্রথমে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরে তার অভিভাবকদের খবর দিয়ে থানায় ডেকে মামলা নেয়া হয়েছে। আর আজ আত্মগোপনে থাকা মা ও ছেলেকে গ্রেপ্তার করে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এনএস/
আরও পড়ুন