ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

করোনায় নষ্ট লাখ টাকার তরমুজ 

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১৩:১০, ৩ জুন ২০২০

Ekushey Television Ltd.

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে হলুদ তরমুজ। যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাধু ও মিষ্টি। রং ও স্বাদের জন্য চাহিদা বেশি থাকায় এটি চাষাবাদে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ারও একটি মাধ্যম বলে জানায় কৃষি বিভাগ। 

শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো এটি নিয়ে আসেন আলাউদ্দিন মোহাম্মদ তৌফিক নামে এক কৃষক। সরকারি চাকরির পেছনে না ছুঠে চট্টগ্রাম বিভাগের ফটিকছড়িতে কয়েক বছর আগে শুরু করেন এশিয়া প্লান্টার্স এন্ড নার্সারি কার্যক্রম। 

২০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ফলজ নার্সারীর পাশাপাশি নিজেই চাষ করেন মাল্টা, পেপে, ক্যাপসিকাম, স্কোয়াস ও লেটুস পাতাসহ বিভিন্ন ফসল। 

তবে তিনি বেশ কিছু বিদেশি ফল ও সবজির দিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন। ফটিক ছড়িতে তার এই সফলতা তার মনকে কৃষির প্রতি আবেগ অনেকগুণে বাড়িয়ে দেয়। সারাদেশে এর চাষ ছড়িয়ে দিতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ইউছুপপুরে ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন থাইল্যান্ডের হলুদ তরমুজ কর্নিয়ার চাষ। 

এছাড়া আছে সাম্মামসহ আরো কয়েক জাতের তরমুজ। শ্রীমঙ্গলের মাটিতে হলুদ তরমুজ কেমন হয় মূলত এটা ছিল তার গবেষণা বা দেখার বিষয়। 

তিনি জানান, ‘শ্রীমঙ্গলে হবে কিনা একটা  দুশ্চিন্তা নিয়ে প্রায় ৮/১০ লক্ষ টাকা খরচ করে চাষ করি। শ্রীমঙ্গলের মাটিতে ভালো উৎপাদন মনে দুশ্চিন্তা কাটিয়ে আনন্দ ও স্বস্তি এনে দিয়েছে। এক একটি তরমুজ ৫ থেকে ৬ কেজি করে ওজন হয়েছে। তবে করোনার কারণে ঢাকাতে চাহিদা কম থাকায় প্রায় লাখ টাকার তরমুজ  ক্ষেতেই পঁচে গেছে।’ 

অন্যদিকে আম্পানের সময় ও আম্পান পরবর্তী বৃষ্টিপাতে জমিতে পানি লেগে বেশ ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, ‘শ্রীমঙ্গলে নতুন। এখানকার আবহাওয়া এবং বর্ষায় পানির স্তর কোন কিছুই জানা ছিল না। তবে এবারের ক্ষতির অভিজ্ঞতা আগামীতে  কাজে লাগবে। এখানকার মাটি হলুদ তরমুজের জন্য উপযোগী। এখন এটি অন্যান্য চাষীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মুনালিসা সুইটি জানান, ‘হলুদ তরমুজ শ্রীমঙ্গলের জন্য সম্পূর্ণ নতুন। তৌফিক শ্রীমঙ্গলে এটি চাষের আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন।’

তিনি জানান, ‘গত বছর এই তরমুজটি বাংলাদেশে আসে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এর পরীক্ষামূলক চাষ হয়েছে তবে শ্রীমঙ্গলে চাষে এর পরিপূর্ণতা মিলেছে। তৌফিকের উৎপাদন ভালো হলেও করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারণে তার কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।’

তৌফিক জানান, ‘বৃষ্টি ও পোকায় অনেকটা ক্ষতি হয়েছে। এ বছর লক্ষমাত্রা ছিল ৪৫ টন, তবে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা কমে হয়েছে ৩০ টনে।’

তরমুজের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলে শুরু করেছেন ফিসারী ও হাঁসের চাষ। নতুন করে তিনি শ্রীমঙ্গলে বর্ষাকালীন টমেটো ও ক্যাপসিকাম চাষ করবেন বলে জানান। 

এ ব্যাপারে লালতীর সিডের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক তাপস চক্রবর্তী জানান, ‘লালতীর সিডের উন্নত উচ্চ ফলনশীল বীজ দেশে গতবছর থেকে সরবরাহ করছে। যা হাইব্রীড লেনফ্রাই নামে পরিচিত। এটি মাচায় সারাবছর করা যায়। তবে তরমুজের মৌসুমে এটি মাটিতে করা যায়। বছরের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের দিকে চাষ করতে হয়,যা ফল দিবে জুলাই পর্যন্ত। ফলের কালার সবুজ সাদা দাগ, ভিতরে টক টকে হলুদ, প্রতিটির ওজন ৫ থেকে ৬ কেজি। পরিপক্ক হয় ৬৫ থেকে ৭০ দিনে। সঠিক পরিচর্যা ও উত্তম ব্যবস্থাপনায় প্রতি একরে ৩০ থেকে ৩৫ টন পর্যন্ত উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে।’
 
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, ‘এটি মৌলভীাবজার জেলার মাটির জন্য উপযোগী। এর উৎপাদন আমাদের দেশি তরমুজের মতোই। তবে এটি রসালো বেশি, এর সুন্দর একটি ফ্লেভারও রয়েছে।’

আগামীতে মৌলভীবাজারে অন্য যারা দেশিয় জাতের তরমুজ চাষ করেন তাদেরকে এটি চাষের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে বীজ ও উৎসাহ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। 

এআই//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি