ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটি টাকা লিচু বিক্রির আশা
প্রকাশিত : ১৩:৫৫, ৫ জুন ২০২০
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলতি মৌসুমে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। পাটনাই, বোম্বে, চায়না থ্রি এবং দেশিয় জাতের লিচুর আবাদ করা হয়েছে বাগানগুলোতে। প্রতিটি বাগানেই রসালো ও সুমিষ্ট লিচু সবার নজড় কাড়ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবাসহ জেলায় এ বছর ৪৫৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়েছে। ফলন ভাল হওয়ায় চাষিরা লাভবান হবে বলে আশাবাদী। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এখানকার লিচু কিনতে বাগানগুলোতে ভিড় করছেন।
সরেজমিনে বাগানগুলো ঘুরে দেখা যায়, লিচুর ভাড়ে গাছের ঢালগুলো যেন মাটিতে নুইয়ে পড়ছে। প্রতিটি গাছের থুকে থুকে ঝুলে আছে লোভনীয় বিভিন্ন জাতের রসালো লিচু। প্রতিটি থুকেই ১০/ ১২টি করে লিচু এসেছে। এ যেন এক মনোরম দৃশ্য। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি হওয়ায় লিচুগলো রসালো তো বটেই সুমিষ্ট ও মাংসাল হয়েছে। উৎপাদিত লিচু বিক্রী করার আশায় বাগান থেকে লিচু পারতে এখন ব্যস্তসময় পার করছে চাষিরা।
প্রতিদিন সকাল থেকে বাগান সংশ্লিষ্টরা দুই/ তিনজন শ্রমিক দিয়ে প্রতিটি গাছ থেকে লিচু পারছে। অন্যদিকে আরেকদল মাটিতে সারিবদ্ধভাবে বসে লিচু বাছাই করে ১০০টি করে থুক বানাচ্ছে। জাত ভেদে একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। এরই মাঝে রসালো এই ফল কিনতে বাগানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় জমছে।
চলমান করোনা সংকটে ব্যাপক আকারে না হলেও সীমিতভাবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা এই লিচু ক্রয় করতে আসছেন। তারা দরদাম করে প্রয়োজন মত লিচু কিনে, তা বিভিন্ন পরিবহনে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় ২০০১ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ শুরু হলেও প্রতিবছরই বাড়ছে আবাদের পরিমাণ। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এই মওসুমে ৪৫৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। ছোট-বড় মিলিয়ে জেলায় ৪২০টির মত বাগান রয়েছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা হলো ১ হাজার ৩৬৮ মেট্রিক টন।
বাগান মালিক মনোয়ার হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘আমার বাগানে প্রায় ৮০টির উপরে লিচুগাছ রয়েছে। এ বছর লিচু উৎপাদনে আমার এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে চারলাখ টাকার মতো আয় হবে। এতে আমি লাভবান হব বলে আশাবাদী।’
কথা হয় আরেক বাগান মালিক জহির মিয়ার সাথে। তিনি জানান, ‘লিচু বিক্রি মাত্র শুরু হয়েছে। পাইকাররা আগে থেকেই লিচু গাছ থেকে চুক্তি করে কিনে ফেলেছে। ফলন আসার আগে প্রতিটি গাছে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়েছে। ফল ধরার সময় বিভিন্ন পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন ওষুধ গাছে ব্যবহার করি। অন্যান্য জেলা থেকে পাইকাররা তেমন আসছে না। যেহেতু সরকার লকডাউন উঠিয়ে দিয়েছে। সামনে আরো যে কয়টা দিন পাওয়া যাবে, আশাকরি ভাল দামই পাবো।’
ব্যবসায়ী সাইফুল মিয়া বলেন, ‘এ বছর বাগানের মালিক থেকে সাত লাখ টাকার লিচু আগাম কিনেছি। গাছে ফলন আসার সময়ই লিচুর বাগ কিনে ফেলেছি। পরে লোকবল দিয়ে নিয়মিত দেখভাল করে আসছি। করোনার জন্য আমাদের এবার হিমশিম খেতে হচ্ছে। যদি আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই সরকার যাতে আমাদের জন্য ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে এই সে দাবি জানাচ্ছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল হক মজুমদার বলেন, ‘করোনার মধ্যেও নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। ফল ধরার সময় গাছে যাতে পোকামাকড় আক্রমণ না করতে পারে সেজন্য বিভিন্ন সময়ে আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত বাগানগুলো পরিদর্শন করেছে এবং চাষিদের পরামর্শ দিয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভাল হয়েছে। জেলায় এ বছর প্রায় ১৪ কোটির টাকার মতো লিচু বিক্রি হবে।
এতে চাষিরাও ভাল দাম পাবে আশা প্রকাশ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
এআই//
আরও পড়ুন