আশা জাগাচ্ছে বাগেরহাটের সরকারি মৎস্য খামার
প্রকাশিত : ২০:৩৭, ৯ জুন ২০২০ | আপডেট: ২০:৪১, ৯ জুন ২০২০
দেশের অন্যতম হিমায়িত রপ্তানি পণ্য গলদা চিংড়ি। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে যার গুরুত্ব অপরিসীম। সারাদেশে মোট উৎপাদিত গলদার এক তৃতীয়াংশ উৎপাদন হয় বাগেরহাট জেলায়। কিন্তু নানা অজুহাতে এ জেলার গলদা চিংড়ির রেনু উৎপাদনকারী সকল বাণিজ্যিক হ্যাচারী বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়েও লোকসান গুণেছেন তারা।
এমনকি খোদ বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রও যেখানে রেনু উৎপাদনে ব্যর্থ। সেখানে সীমিত জনবল ও সামান্য বিনিয়োগে গলদা রেনু উৎপাদনে সফলতা পেয়েছে বাগেরহাট সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার। প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছর পর প্রথম সরকারি এই খামারে গলদা রেনু উৎপাদনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে সংশ্লিষ্টরা।
১৯৬৪ সালে তৎকালীন সরকার বাগেরহাট শহরতলীর গোবরদিয়া নামক স্থানে ৮ দশমিক ৪ একর জমির ওপর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিষ্ঠার পর ৫৪ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র সাদা মাছের রেনু ও চারা পোনা উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ ছিল প্রতিষ্ঠানটি। এরপরই একজন করে টেকনিশিয়ান, হ্যাচারী এ্যাটেন্ডেন্ট, ক্ষেত্র সহকারী, অফিস সহকারী ও দুইজন নাইট গার্ড নিয়েই গলদা রেনু উৎপাদনের প্রস্তুতি নেন খামার ব্যবস্থাপক নির্মল কুমার কুন্ডু। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো এক লাখ গলদা রেনু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শরু করে তারা। প্রথম বছরই লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ পোনা উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরে ২ লক্ষ ৫০ হাজার চিংড়ি রেনু উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে নির্মল কুমার কুন্ডু বলেন, সরকারি হ্যাচারিতে যেভাবে গলদা রেনু উৎপাদিত হয়, উৎপাদন প্রক্রিয়ার শুরুতে সাতক্ষীরা থেকে ১০০ পিপিটি গুণ সম্পন্ন এক টন ব্রাইন (সমুদ্র বা নদীর চরে লবনের জন্য করা গর্ত থেকে লবন সংগ্রহের পরে ওই গর্তে জমে থাকা এক ধরণের পানি) সংগ্রহ করি। পরে ব্রাইনকে জীবানুমুক্ত করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ১২ পিপিটিতে আনা হয়। এরপরে প্রাকৃতিক উৎস থেকে ডিমওয়ালা মা গলদা সংগ্রহ করা হয়। ফরমালিন দিয়ে মা মাছকে জীবানুমুক্ত করে মাদার ট্যাংকিতে রাখা হয়। সেখানে ডিমওয়ালা গলদাকে উন্নত মানের চিকন আতপ চাল খাওয়ানো হয়। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই মা মাছগুলো মাদার ট্যাংকিতে লার্ভা (ডিম) ছেড়ে দেয়। মাদার ট্যাংকি থেকে লার্ভা সংগ্রহ করে লার্ভা ট্যাংকিতে রাখা হয়। সেখানে লার্ভাগুলোকে আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত আর্টিমিয়া (সমুদ্রের জীবন্ত প্রাণি) নামের একটি খাবার খাওয়ানো হয়। যার প্রতি কেজি খাবারের মূল্য ৫ হাজার টাকা। প্রতি তিনদিন পরপর লার্ভা থাকা ট্যাংকি ও ট্যাংকির পানি পরিবর্তন করা হয়। ১০ দিন পরে আর্টিমিয়ার সাথে নিজস্ব তৈরি কাস্টার্ড (চিংড়ি মাছ, গুড়োদুধ, কর্ণ ফ্লাওয়ার ও বিভিন্ন ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার) খাওয়ানো হয়। ২৮ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে এই লার্ভাগুলো চিংড়ির পিএল-এ (রেনু) রুপান্তরিত হয়। মাদার ট্যাংকিতে মা মাছ রাখার পর থেকে পিএল হওয়া এবং চাষীদের সরবরাহ করা পর্যন্ত সার্বক্ষণিক নিরবিচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়। প্রতিবছর মাত্র ৮০ হাজার টাকার সরকারি বাজেট নিয়ে এই রেনু উৎপাদন করে সরকারি খামার কর্তৃপক্ষ।
বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকরতা ড. এএফ এম শফিকুজ্জোহা বলেন, আমরা গেল বছর গলদা রেনু উৎপাদনের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। অল্পদিনের মধ্যে আমরা গলদা রেনু উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করব। খামারে যে উৎপাদন হয়েছে, এটাকে আমরা সাদুবাদ জানাই।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, আমরা মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারে পরপর দুই বছর গলদা রেনু উৎপাদনে সফল হয়েছি। করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিতেও এ বছর আমাদের উৎপাদন থেমে নেই। বেসরকারি বাণিজ্যিক হ্যাচারিগুলো যদি আমাদের এই প্রযুক্তি নিতে চায়, আমরা তাদেরকে দিব।
এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে বাণিজ্যিক হ্যাচারিগুলোকে সার্বিক সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।
এনএস/
আরও পড়ুন