প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ ও কবরস্থান-মসজিদ রক্ষা করে মহাসড়ক প্রশস্তকরণের দাবি
প্রকাশিত : ১৪:২২, ১২ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৪:৩২, ১২ জুন ২০২০
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বাড়িউড়া এলাকায় ১৬শ শতাব্দীতে নির্মিত বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্ততরের অধীনে সংরক্ষিত নিদর্শন ‘হাতিরপুল’ ও প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা দুটি কবরস্থান ও একটি মসজিদ রক্ষা করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রশস্তকরণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এই দাবিতে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। এলাকাবাসীর পক্ষে বাড়িউড়া গ্রামের বাসিন্দা জসীম উদ্দিন লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন, বাড়িউড়া বাজারের পূর্ব প্রান্তে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষা উত্তর পাশে ঐতিহাসিক হাতিরপুলটির অবস্থান।
১৬৫০ সালে মুঘল আমলে সরাইলের দেওয়ান শাহবাজ আলী সরাইল থেকে শাহবাজপুর হয়ে হরষপুরে যাতায়তে হাতির বিশ্রামের জন্য একটি ছাউনি নির্মাণ করেন, যা পরে ‘হাতিরপুল’ নামে পরিচিত হয়ে উঠে। ইট ও চুন-সুর্কি ব্যবহার করে তৈরি করা এই সেতুটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে সরাইলের ঐতিহ্য, যা এখন প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ।
অপরদিকে সরাইল উপজেলার ইসলামাবাদ থেকে বারিউড়া হয়ে শাহবাজপুর গ্রাম পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উত্তর পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে তিনশো বছরের পুরনো দুটি কবরস্থান। সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বাড়িউড়া, ইসলামাবাদ ও বছিউড়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের মৈন্দ গ্রামের বাসিন্দারা সেখানে মরদেহ সমাহিত করেন। এই দুটি কবরস্থান ছাড়া সাধারণ মানুষের বিকল্প আর কোন বড় কবরস্থান নেই। এছাড়া প্রায় চল্লিশ বছর আগে নির্মিত বারিউড়া বাজার জামে মসজিদটিও মহাসড়কের উত্তর পাশে অবস্থিত। এই মসজিদে বাজারের ক্রেতা, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ নামাজ আদায় করেন।
আবেদনে উল্লেখ করা তথ্য ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি বর্তমানে দুই লেনের। এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে এটিকে দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চলতি বছরেই এর কাজ শুরু হবার কথা রয়েছে। এজন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের লোকজন সম্প্রতি সড়কের উত্তর পাশের জায়গা অধিগ্রহণ করতে মাপজোক করে। এরপরই টনক নড়ে আশপাশের গ্রামের মানুষের। মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজে গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থাপনা ও কবরস্থানের জায়গা চলে যাওয়ার খবরে তারা এখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
বাড়িউড়া বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সর্দার হাবিব রহমান বলেন, কবরস্থান, মসজিদ এবং এতিহ্যবাহী হাতিরপুল এলাকার মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ‘হাতিরপুল’ এই এলাকার ঐতিহ্যের ধারক। এটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার কথা মানুষ কল্পনাও করতে পারে না।
অপরদিকে এত বড় কবরস্থানও আশাপাশের কয়েক গ্রামের আর কোথাও নেই। ফলে এলাকার মানুষ চায় মহাসড়কটি দক্ষিণ দিকে প্রশস্ত করা হোক। কেননা, সরাইলের কুট্টাপড়া মোড় থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিজস্ব পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। তারা কেবল ইচ্ছে করলেই ঐতিহ্যবাহী হাতিরপুল নিশ্চিহ্ন হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
বাড়িউড়া গ্রামের বকুল মিয়া বলেন, হাতিরপুল স্থাপত্য নিদর্শন হওয়ায় এটি দেখতে দুরদুরান্ত থেকে লোকজন আসেন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে সংস্কার ও সংরক্ষণ করেছে। সেজন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগেরও উচিত ছিলো এটিকে রক্ষা করন মহাসড়ক প্রশস্তকরণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া।
অথচ তারা তা না করে দক্ষিণ দিকে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা থাকা সত্ত্বেও উত্তর পাশে সার্ভে করেন এবং ছয় লেন সড়কের নকশা আঁকার প্রস্ততি নেন। খুব শিগগিরিই এর দরপত্রও আহ্বান করা হবে। ফলে উল্লিখিত স্থাপনা-সম্পদ রক্ষায় কর্তৃপক্ষের অরিচরেই দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামীম আল মামুন বলেন, ‘সার্ভে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নয়, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে এটি করা হয়। এলাকাবাসীর দাবির বিষয়টি সম্পর্কে ইতোমধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ওয়াকিবহাল। এসব বিবেচনা করেই মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজের প্রকল্প চূড়ান্ত হবে।’
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, ‘মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এখনই চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবুও এলাকাবাসীর আবেদনের কপি ইতোমধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
যে কোন ঐতিহাসিক স্থাপনা বাদ দিয়ে অধিগ্রহণ করার বিষয়টি আইনেই বলা আছে। ফলে হাতিরপুলকে বাদ দিয়ে জায়গা অধিগ্রহণের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
এআই//
আরও পড়ুন