ঢাকা, বুধবার   ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নীরবে কাঁদছে পানিবন্দী ডিএনডিবাসী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩৮, ১৯ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৭:৪২, ১৯ জুন ২০২০

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে ডিএনডিবাসী। নীরবে কাঁদছে এ অঞ্চলের মানুষ। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি, ঘরে পানি। পানিতে ডুবে গেছে দোকানপাট, গ্যারেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিল-কারখানা, সবজি ক্ষেত ও নার্সারীসহ নানা স্থাপনা। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের দিনযাপন। 

এপ্রিল মাস থেকে ভোগান্তি শুরু। গত কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিতে এর মাত্রা আরও বেড়েছে। তবে তারা কাউকে কিছু বলতে পারছে না।

ডিএনডিবাসীর অভিযোগ, তাদের দেখার কেউ নেই, অনুযোগ শোনারও কেউ নেই। তারা শুধু ফেসবুকে তাদের দুর্ভোগের বর্ণনা ও ছবিগুলো শেয়ার করছেন। তারা পরিত্রাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন। কিন্তু তাদের দুর্ভোগ লাঘবের কোন লক্ষণ তারা দেখতে পাচ্ছেন না। বরং দিন দিন ডিএনডির পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

১৯৬২-৬৮ সালে ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি করা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধ। যার মধ্যে নারায়গঞ্জ-৪, ঢাকা-৪ ও ঢাকা-৫ আসনের ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লঅ থানা এলাকা রয়েছে। 

১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যায়ও ডিএনডিতে পানি প্রবেশ না করায় মানুষ ডিএনডিতে বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে থাকেন। এতে অল্প বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে থাকে ডিএনডিতে। ইতিপূর্বেও একাধিকবার ডিএনডিতে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়েছিলো। চলতি সালের এপ্রিল মাস থেকে ফের ডিএনডিতে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। দিন দিন বাড়ছে পানি। সেই সাথে মানুষের কষ্টও বাড়ছে। 

সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজিজ এলাকার বাসিন্দা জুবায়ের হোসেন জানান, ‘গত কয়েক দিন আমাদের ঘরে পানি উঠেছে। ঘর থেকে বের হতে পারছিনা। কারণ, রাস্তায়ও পানি।’

ভূইঘর এলাকার নাসির হোসেন জানান, ‘জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া এ এলাকার পুকুরগুলোতে ডিএনিড খালের ডায়িং মিশ্রিত পানি প্রবেশ করে মাছগুলো মরে গেছে।’ এলাকার অনেকেই জলাবদ্ধতার জন্য এরকম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলস্থ পাম্প হাউজের এসডি রাম প্রাসাদ বাছার জানান, ‘ডিএনডিতে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে হলে ৩ হাজার ২০০ কিউসেক পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা সম্পন্ন পানির পাম্প বসাতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা ইতিপূর্বে পরামর্শ দিয়েছিলো। সেই মোতাবেক সেনাবাহিনী কাজও করছে। পাম্পগুলো বসানো হলে ডিএনডিতে আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ছোট দুটি ও বড় ৩টি পাম্প দ্বারা সর্বমোট ৪৬৪ কিউসেক পানি নিষ্কাশন করতে পারছি। ১২৮ কিউসেক পানি নিষ্কাশন করার ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পাম্প নষ্ট রয়েছে। আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে ঐ পাম্প সচল করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’
 
উল্লেখ্য, ২০ লাখের অধিক বসতিপূর্ণ ডিএনডির জলাবদ্ধতার লাঘব করার জন্য নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের প্রচেষ্টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। চলতি বছরের গত ৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকায় নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের পাম্প স্থাপনের উদ্বোধন করতে আসেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

সে সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আশা করা যাচ্ছে ২০২২ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ডিএনডি’র অভ্যন্তরের ২০ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতায় ভুগছিলেন। তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্প ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর শুরু করা হয়। এ প্রকল্পটি ৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথমে ছিল। তখন তড়িঘড়ি করে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে এ ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।’ 

জাহিদ ফারুক বলেন, ‘এ প্রকল্পের ভেতরে অবৈধ স্থাপনা, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন রয়েছে। এগুলো দূর করতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে। এখন আমরা মনেকরি, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ১৩শ কোটি লাগবে।’

এআই/এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি