দুঃসময়ে একজন মানবিক পুলিশ অফিসার
প্রকাশিত : ১৩:৩৯, ২৩ জুন ২০২০
করোনা কিংবা কোভিড-১৯ নামে এক ঘাতকের আঘাতে পৃথিবী এখন অচেনা। পূর্ব থেকে পশ্চিম কিংবা উত্তর থেকে দক্ষিণ, পুরো গ্রহটাই যেন লন্ডভন্ড। ছোঁয়াচে এক অদৃশ্য জীবাণুর কারণে সবাই ভয়ে তটস্থ। আপন মানুষগুলোও যেন পর হয়ে গেছে। প্রিয়জনও দূরে সরে গেছে। এর মধ্যে ব্যতিক্রমও রয়েছে। মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে অনেকে অন্যের সাহায্যে ছুটে যাচ্ছেন। বাংলাদেশেও অনেকে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
এমনই একজন কামরুল ফারুক। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে সম্মুখে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন এ পুলিশ অফিসার।
করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই মানুষের জন্য কাজ করছেন তিনি। গত তিন মাসে পরিবারের সদস্যদের সাথে একটি বারের জন্যও দেখা করতে যাননি। এমনকি ঈদের দিনও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতেও যেতে পারেননি এ পুলিশ অফিসার। ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে রাইয়ান ফারুক লামীমের আবদার ছিলো একবারের জন্য হলেও বাবার সাথে সাক্ষাতের। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে সন্তানের সেই আবদার রক্ষার্থে বাসায় যেতে পারেননি।
পুলিশ যাতে স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারে এজন্য সকল সদস্যদের মাঝে একধিকবার সুরক্ষাসামগ্রী মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, গ্লাভস ও পিপিই বিতরণ করেছেন। করোনা বিস্তার রোধে কাজ করতে যেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১৬ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারা সুস্থ হওয়ার পর আবারও নব উদ্যমে কাজের উৎসাহ যোগাতে তাদেরকে ২৩ মে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
ওসি কামরুল শুধুমাত্র থানার পুলিশদের জন্য কাজ করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি এখনও সিদ্ধিরগঞ্জের অসহায় মানুষদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারের তরফ থেকে যেসব খাদ্যসামগ্রী এসেছে তার সঠিক বন্টনের ব্যাপারে তিনি সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন।
তার নির্দেশে প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের খাবার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মাঝে খাবার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবন্ধী, পরিবহন শ্রমিক, স্কুল শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জেমরা পেয়েছেন ওসি কামরুলের খাদ্য সহযোগিতা।
যারা চক্ষুলজ্জার ভয়ে সংশ্লিষ্ট স্থানে ত্রাণ নিতে আসতে পারেন না, তাদেরকে গোপনে বাসায় ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। কামরুলের নির্দেশে সত্যিকারের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের খাবার সামগ্রী দেয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করে রাতের আঁধারেও এলাকা চষে বেড়িয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। একই সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিয়মমাফিক কার্যক্রমও চালিয়েছিলেন। পাশপাশি সরকার লকডাউন ঘোষণা করার পর সিদ্ধিরগঞ্জবাসীকে ঘরে থাকতে সম্ভব্য বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন। এসব কারণে এ পুলিশ অফিসার স্থানীয়দের কাছে ব্যাপক প্রশংসাও কুঁড়িয়েছেন।
মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ ও ফোন পেয়ে প্রায় শতাধিক অসহায় ব্যক্তির কাছেও ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ অফিসারের এ সন্তান। খাদ্যসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি মানুষকে সুরক্ষাসামগ্রীও বিতরণ করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে সাধারণ মানুষের নিকট সচেতনতার বার্তা দিয়ে মাঠে থেকেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক বলেন, ‘পুরো বিশ্বে করোনা একটি মহামারি অসুখ। ছোঁয়াচে এ রোগে আমাদের দেশের জনগণও আক্রান্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে। সেই মহামারি থেকে সিদ্ধিরগঞ্জবাসীকে দূরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী, আইজিপি ও ডিআইজি মহোদয়ের নির্দেশক্রমে এবং বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সাধ্যানুযায়ী সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর জন্য কাজ করে যাচ্ছি, করে যাবো।’
কামরুল ফারুক এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের মানবিক কর্মকাণ্ডে স্বাভাবিকভাবেই এলাকায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, ভবিষ্যতেও পুলিশ এমন মানবিক আচরণ করবে মানুষের সাথে।
এআই//
আরও পড়ুন